Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
তামাক বিতর্ক

ফের বেফাঁস মন্তব্য এক সাংসদের

ধূমপানের সঙ্গে ক্যানসারের যোগকে নস্যাৎ করতে বিজেপি সাংসদ দিলীপকুমার গাঁধীর মন্তব্যে নতুন মাত্রা যোগ করলেন আর এক সাংসদ। ধূমপানের অভ্যাস ঠেকাতে গঠিত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান দিলীপবাবু সম্প্রতি প্রশ্ন তোলেন, ‘শুধু তামাক থেকেই কি ক্যানসার হয়?’

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০৪
Share: Save:

ধূমপানের সঙ্গে ক্যানসারের যোগকে নস্যাৎ করতে বিজেপি সাংসদ দিলীপকুমার গাঁধীর মন্তব্যে নতুন মাত্রা যোগ করলেন আর এক সাংসদ।

ধূমপানের অভ্যাস ঠেকাতে গঠিত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান দিলীপবাবু সম্প্রতি প্রশ্ন তোলেন, ‘শুধু তামাক থেকেই কি ক্যানসার হয়?’ যা নিয়ে চিকিৎসকমহলে তীব্র সমালোচনা হয়। বৃহস্পতিবার কার্যত তাঁর পথ অনুসরণ করে তাঁর দলেরই আর এক সাংসদ, তথা ওই সংসদীয় কমিটির অন্যতম সদস্য শ্যামচরণ গুপ্ত বলেছেন, ‘‘চিনিও ক্ষতিকর। খেলে ডায়াবিটিস হয়। তাই বলে কি চিনি খাওয়া নিষিদ্ধ হচ্ছে? সব চেন স্মোকারের কেন ক্যানসার হয় না, ডাক্তাররা বলতে পারবেন?’’ উল্লেখ্য, শ্যামচরণ কয়েকশো কোটির বিড়ি তৈরির ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। স্বার্থে ঘা লাগছে বলেই কি সাংসদের এমন প্রতিক্রিয়া? শ্যামচরণ মানতে চাননি।

কিন্তু দায়িত্বপূর্ণ পদে থাকা সাংসদেরা এ ভাবে ‘আলটপকা’ মন্তব্য করায় দেশে ধূমপানবিরোধী আন্দোলন বড়় ধাক্কা খাবে বলে আশঙ্কা চিকিৎসকদের। তাঁদের বক্তব্য, ধূমপান যে ক্যানসারের অন্যতম কারণ সে নিয়ে সন্দেহ নেই। সিগারেট সংস্থাগুলির চাপের কাছে নতিস্বীকার করে এ নিয়ে সংশয় তৈরি করার চেষ্টা না করাই ভাল।

এন্ডোক্রিনোলজিস্ট সুজয় ঘোষ বলেছেন, গোটা বিষয়টি হাস্যকর এবং দুর্ভাগ্যজনক। তিনি বলেন, ‘‘ডায়াবিটিস নানা কারণে হয়। জিনগত কারণের পাশাপাশি পরিশ্রম কম করা এবং অধিক ক্যালোরিযুক্ত খাবারও এর কারণ। কিন্তু শুধু চিনিতেই ক্যালরি থাকে এমন তো নয়। কেউ চিনি খাওয়া বন্ধ করলেন, কিন্তু প্রচুর ভাত এবং অন্য খাবার খেতে শুরু করলেন, তা হলে তাঁর কি কোনও ঝুঁকি থাকবে না? উল্টোপাল্টা কথা বলে মানুষের মন অন্যদিকে ঘোরানো হচ্ছে।’’

শ্যামচরণ নিজে একটি বিড়ি সংস্থার মালিক। আজ তিনি বলেন, ‘‘সিগারেট প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলিকে অযথা নিশানা বানানো হচ্ছে। সিগারেট খেলেই যদি ক্যানসার হয়, তা হলে যাঁরা সারাদিন পর পর সিগারেট খেয়ে যান, তাঁদের সকলের কেন ক্যানসার হয় না?’’ বিড়ি এবং হাতে বানানো সিগারেটকে অনেক কম ক্ষতিকর বলেও দাবি করেছেন শ্যামচরণ। প্রশ্ন তুলেছেন, নিজেদের দেশে কোনও সমীক্ষা না হওয়া সত্ত্বেও কেন কোনও সরকার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র চাপের কাছে নতিস্বীকার করবে? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘দেশ বানাও’ স্লোগানের সঙ্গে এই নীতি খাপ খায় না বলেও তাঁর দাবি।

কেন খাপ খায় না? শ্যামচরণের যুক্তি, ‘‘বিড়ি শিল্পের সঙ্গে এক কোটিরও বেশি মানুষের রুটি-রুজি যুক্ত। ধূমপান ঠেকাতে গিয়ে আমরা তাঁদের বিপন্ন করতে পারি না।’’

এপ্রিল মাস থেকেই সমস্ত সিগারেট প্যাকেটের ৮৫ শতাংশ জুড়ে যাতে সতর্কীকরণের লেখা এবং ছবি থাকে, সে ব্যাপারে গত বছর ডিসেম্বরে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নাড্ডা। এ ব্যাপারে সংসদীয় কমিটিও তৈরি হয়েছিল। নাড্ডা জানিয়েছিলেন, ১ এপ্রিল থেকেই এই নিয়ম চালু করতে আগ্রহী তাঁরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা তো হয়ইনি, উপরন্তু সেই উদ্যোগ নিয়ে পর পর প্রশ্ন তুলে বিষয়টিকে আরও পিছিয়ে দিয়েছেন ওই কমিটির সদস্য-সাংসদরাই।

কেন দলের শীর্ষনেতারা এ ব্যাপারে উদ্যোগী হচ্ছেন না, এ বার তার জবাব চাইছেন বিরোধীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE