Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ডাক্তার নিয়োগ নীতি নিয়ে প্রশ্নের মুখে স্বাস্থ্য দফতর

একটাই সিটি স্ক্যান মেশিন। সেটাও মাসের পর মাস খারাপ। তাই রিপোর্ট তৈরির প্রশ্নই নেই। সবেধন নীলমণি একটা এক্স-রে মেশিন আর একটা আল্ট্রাসোনোগ্রাফি মেশিন। সেখানেও কাজের চাপ উল্লেখ্য নয়। এই যেখানে বিভাগের হাল, সেখানে নিযুক্ত পাঁচ জন রেডিওলজিস্ট। কাজের বিপুল চাপের কারণ দেখিয়ে এক জনকে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডেপুটেশনে নিয়ে আসাও হয়েছে।

সোমা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৫ ০২:৪৯
Share: Save:

একটাই সিটি স্ক্যান মেশিন। সেটাও মাসের পর মাস খারাপ। তাই রিপোর্ট তৈরির প্রশ্নই নেই। সবেধন নীলমণি একটা এক্স-রে মেশিন আর একটা আল্ট্রাসোনোগ্রাফি মেশিন। সেখানেও কাজের চাপ উল্লেখ্য নয়। এই যেখানে বিভাগের হাল, সেখানে নিযুক্ত পাঁচ জন রেডিওলজিস্ট। কাজের বিপুল চাপের কারণ দেখিয়ে এক জনকে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডেপুটেশনে নিয়ে আসাও হয়েছে। রেডিওলজিস্টের অভাবে রাজ্যের বেশ ক’টি মেডিক্যাল কলেজে যখন নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড়, তখন বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস (বিআইএন)-এ উল্টো ছবি। কাজের চেয়ে ডাক্তার বেশি।

এ নিয়ে ইতিমধ্যে অন্য হাসপাতালে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার দফতরে এ নিয়ে লিখিত অভিযোগও জানিয়েছেন তাঁরা। কেন অন্যত্র ডাক্তারের অভাবে দেরিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে, স্তূপীকৃত রিপোর্ট পরীক্ষা না হয়ে পড়ে থাকবে, তুলেছেন সেই প্রশ্নও। তবে তাতে পরিস্থিতির বিশেষ পরিবর্তন হয়নি।

শুধু অন্য হাসপাতালের ডাক্তাররা নন, স্বাস্থ্য দফতরের ‘ভুল নিয়োগ-নীতি’ কী ভাবে ম্যান পাওয়ার-এর অপচয় ঘটাতে পারে, বিআইএন তারই প্রমাণ বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশও। এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “নিয়োগ নীতি কতটা ভুল কয়েকটা উদাহরণেই তার প্রমাণ মিলবে। ১০০ আসনের মেডিক্যাল কলেজে যে কোনও বিভাগে ন্যূনতম আট জন শিক্ষক-চিকিৎসকের থাকার কথা। কিন্তু অধিকাংশ জায়গায় তা নেই। যেমন, ন্যাশনাল মেডিক্যালে রেডিওলজি বিভাগে যত চিকিৎসক থাকার কথা, আছেন তার অর্ধেকেরও কম। বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজে আছেন সাকুল্যে এক জন রেডিওলজিস্ট। সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে রেডিওলজিস্টের চারটি পদ খালি। ফলে সর্বত্রই পরিষেবা মুখ থুবড়ে পড়েছে।”

কেন রেডিওলজিস্টের সংখ্যা বিআইএন-এ কমিয়ে অন্যত্র পাঠানো হচ্ছে না? স্বাস্থ্য-শিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, “অন্যত্র পাঠাবো বললেই তো আর পাঠানো যায় না। নানা সমস্যা থাকে। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়েও অনেকে থেকে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে।”

১২৮ শয্যার বিআইএন-এ এমআরআই যন্ত্র রয়েছে ঠিকই। কিন্তু তা চলে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি মডেল)। সেখানে আলাদা চিকিৎসক রয়েছেন। তাই বিআইএন-এ রেডিওলজিস্টদের কাজের পরিধি বলতে একটা এক্সরে ও একটা ইউএসজি যন্ত্র। একটা ডিজিটাল সাবট্র্যাকশন অ্যাঞ্জিওগ্রাফি যন্ত্র থাকলেও সেখানে রেডিওলজিস্টের পাশাপাশি নিউরো মেডিসিন ও নিউরো সার্জারির ডাক্তারদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

তবে পাঁচ জন ডাক্তার কেন? কেন অন্য মেডিক্যাল কলেজে থেকে এখানে কাজের চাপের অজুহাত দেখিয়ে ডাক্তার আনা হল? বিআইএন-এর অধিকর্তা অসিত সেনাপতি বলেন, “এখন না হয় যন্ত্র খারাপ। পরে তো যন্ত্র কেনা হবে। তখন ডাক্তার দরকার হবে। তাই অন্য জায়গা থেকে ডাক্তার এনে রেখেছি।”

কবে কেনা হবে যন্ত্র? কোনও নির্দিষ্ট উত্তর পাওয়া যায়নি। বিআইএন সূত্রে খবর, খারাপ যন্ত্রটি সারানো এবং নতুন যন্ত্র কেনার জন্য দু’টি ফাইল স্বাস্থ্য ভবনে পাঠানো হয়েছে। কোনটি যে অনুমোদন পাবে এবং কবে যে অচলাবস্থা কাটবে তা এখনও অনিশ্চিত।

বিআইএন-এর নিউরো মেডিসিন, নিউরো সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকেরা জানান, এক সময়ে এই হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগে কাজের খুবই চাপ থাকত। কারণ তখন এমআরআই যন্ত্র সরকারি স্তরে আর কোথাও ছিল না। এখন পিপিপি মডেলে এমআরআই যন্ত্র অনেক হাসপাতালই চালু হয়েছে। তাই বিআইএন-এ চাপ কমেছে। তা ছাড়া বিআইএন-এ এমআরআই যন্ত্র পিপিপি মডেলে চলে। আলাদা চিকিৎসকও আছেন। ফলে এখানে রেডিওলজিস্টদের দরকার হয় না। দিনে আট-দশটা এক্সরে আর ইউএসজি ছাড়া কাজের কাজ বেশি হয় না। সিটি স্ক্যান চালু থাকলে তবু কিছু কাজ থাকত। কিন্তু সেই যন্ত্র দীর্ঘ দিন বিকল। ফলে রেডিওলজির ডাক্তারদের অধিকাংশেরই কিছু করার নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE