জন্মের পর মাত্র ৭৪ মিনিট বেঁচেছিল সে। কিন্তু তার মধ্যেই জীবন দিয়ে গেল অন্য এক মৃতপ্রায় মানুষকে।
তার নাম হোপ লি। বৃটেনের বাসিন্দা। জন্মের ৭৪ মিনিটের মাথায় মৃত্যুর পর ছোট্ট হোপের কিডনি প্রতিস্থাপিত হল এক পূর্ণবয়স্কের দেহে। এই মুহূর্তে হোপই ব্রিটেনের কনিষ্ঠতম অঙ্গদাত্রী।
গর্ভাবস্থার ১৩তম সপ্তাহতেই হোপের মা-বাবা এমা এবং অ্যান্ড্রু জানতে পেরেছিলেন, তাঁদের কন্যা এক জটিল অসুখে ভুগছে। যার ফলে ব্যাহত হচ্ছে তার খুলি এবং মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বৃদ্ধি। চিকিৎসকেরা জানিয়েও দিয়েছিলেন জন্মের পর হোপ বেশিক্ষণ বাঁচবে না। তখনই এমা এবং অ্যান্ড্রু সন্তানের অঙ্গদান করার সিদ্ধান্ত নেন।
মৃত্যুর কিছু ক্ষণের মধ্যেই হোপের শরীরে অস্ত্রোপচার করে দান করার জন্য তার কিডনি বের করে নেওয়া হয়। এ ছাড়াও তার যকৃৎ থেকে কোষ নিয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে। পরবর্তী কোনও সময়ে অন্য কারও যকৃৎ প্রতিস্থাপনের সময় সেগুলি কাজে লাগবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
যদিও চিকিৎসকেরা হোপের মাকে গর্ভপাত করানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন তবু রাজি হননি তিনি। রাজি হননি হোপের বাবাও। কারণ তাঁরা দু’জনেই টেডি হাউলস্টনের গল্প শুনেছিলেন। যে জন্মের ১০০ মিনিটের মাথায় মারা যায়। কিন্তু তার শরীর থেকে কিডনি এবং হৃৎপিন্ডের ভালভ নিয়ে অন্যের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। এই গল্প শুনেই উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন এমা এবং অ্যান্ড্রু।
তাঁরা দু’জনেই জানান, হোপের অঙ্গ দান করার সিদ্ধান্ত খুবই কঠিন ছিল। তাঁরা বলেন, ‘‘অন্য কারও শরীরে তো আমাদের হোপ বেঁচে রইল। এটা কিছুটা হলেও আমাদের কষ্ট লাঘব করবে।’’ তাঁরা আরও বলেন, ‘‘অনেকে দীর্ঘ দিন বেঁচে থেকেও যা করতে পারে না হোপ এই সামান্য সময় বেঁচে তার থেকে অনেক বেশি কিছু করে গেল।’’
সারা পৃথিবী জুড়েই অঙ্গদান একটি মহৎ কাজ হিসেবে চিহ্ণিত হয়েছে। ইউরোপ ও আমেরিকায় দীর্ঘ দিন ধরেই অঙ্গদান শুরু হলেও ভারতে এখনও ততটা সচেতনতা গড়ে ওঠেনি বলেই মনে করছেন চিকিৎসকেরা। সে জন্যই আজও আমাদের দেশে অঙ্গ প্রতিস্থাপন করতে হলে মৃতদেহের থেকে অঙ্গ নিতে হয়। দাতা পাওয়াও অধিকাংশ ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এই সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় একটাই। মানুষকে অঙ্গদানে সচেতন হতে হবে। এমনটাই মনে করছেন চিকিৎসকেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy