Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

পরিকাঠামো ছাড়াই সিসিইউ চালুতে সমস্যা

পরিকাঠামো তৈরি না করেই শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে সরকারি উদ্যোগে কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ)-এর পরিষেবা চালু হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন রোগী এবং তাঁর পরিবারের লোকেরা। কলকাতার রবীন্দ্রনাথ টেেগার ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ কার্ডিয়াক সায়েন্স হাসপাতালের সঙ্গে যৌথ ভাবে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে গত ১৫ বছর ধরে কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিট চলত।

সৌমিত্র কুণ্ডু
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৫ ০১:২৭
Share: Save:

পরিকাঠামো তৈরি না করেই শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে সরকারি উদ্যোগে কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ)-এর পরিষেবা চালু হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন রোগী এবং তাঁর পরিবারের লোকেরা। কলকাতার রবীন্দ্রনাথ টেেগার ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ কার্ডিয়াক সায়েন্স হাসপাতালের সঙ্গে যৌথ ভাবে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে গত ১৫ বছর ধরে কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিট চলত। চুক্তির মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় এবং সরকারি উদ্যোগে হাসপাতালে ওই ইউনিট দেখভাল শুরু হওয়ায় মঙ্গলবার থেকে রবীন্দ্রনাথ টেগর হাসপাতালের ৪ জন চিকিৎসক এবং ৪ জন টেকনিশিয়ান সেখানে চলে গিয়েছেন। তাদের তরফে ইসিজি-সহ যে সমস্ত যন্ত্রাংশ সরবরাহ করা হয়েছিল সে সমস্তও তাঁরা নিয়ে গিয়েছেন। তাতে রোগীদের চিকিৎসায় সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। যথাযথ ভাবে চিকিৎসা না হওয়ায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগও উঠেছে।

রোগীর পরিবারের অনেকে পরিস্থিতি দেখে বুধবার রাতে হাসপাতাল সুপার অমিতাভ মণ্ডলকে ফোনও করেন। কিন্তু সুপার ফোন তোলেননি বলে অভিযোগ। বস্তুত, সুপারের মোবাইল ফোনে বারবার ফোন করা হলে তা বেজে গিয়েছে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত বিশ্বাস বলেন, ‘‘ইসিজি যন্ত্র নেই এমন মনে হয় না। খোঁজ নিচ্ছি। তবে রবীন্দ্রনাথ টেেগার হাসপাতালের সঙ্গে যৌথ ভাবে ওই ইউনিটটি চললেও এখন পুরোটাই সরকারি ভাবে হাসপাতালের তরফেই দেখভাল করা হবে বলে ঠিক হয়েছে। চিকিৎসক এবং নার্সদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। যন্ত্রাংশর কিছু সমস্যা থাকলে তা অবশ্যই দেখা হবে।’’ রবীন্দ্রনাথ টেগর ইন্টারন্যাশনাল ইন্সস্টিটিউট অব কার্ডিয়াক সায়েন্সের তরফে শিলিগুড়ি হাসপাতালে সিসিইউ দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন সুবর্ণ পাল। তিনি বলেন, ‘‘মঙ্গলবার থেকে আমরা আর ওই হাসপাতালে পরিষেবা দিচ্ছি না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং রবীন্দ্রনাথ টেেগার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা জানিয়ে দেওয়ায় আমরা দায়িত্ব বুঝিয়ে চলে এসেছি।’’

মঙ্গলবার রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত কাকা মানিককুমার দত্তকে হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যান শিলিগুড়ির প্রাক্তন মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত। অথচ ওই ইউনিটের পরিকাঠামো এবং পরিষেবা ঠিক না থাকায় তিনি ক্ষুব্ধ। গঙ্গোত্রীদেবী বলেন, ‘‘কাকাকে ভর্তি করানো হলে পরিচিত চিকিৎসকদের একাংশ জানান, হাসপাতালে এই ইউনিটে ইসিজি-সহ কয়েকটি পরীক্ষার যন্ত্র, ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা টেকনিশিয়ান নেই। তাতে সমস্যা হচ্ছে। তাঁরা নিরুপায়। রোগীকেও ওই পরিস্থিতিতে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। ওঁকে ভেন্টিলেশনে দেওয়ার দরকার ছিল বলে চিকিৎসকরা জানান। কিন্তু সেই ব্যবস্থা নেই।’’ কয়েক ঘণ্টা পরেই মানিকবাবুর মৃত্যু হয়। গঙ্গোত্রীদেবীর অভিযোগ, হাসপাতালে সিসিইউ-তে চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থাই নেই। ভেন্টিলেটর নেই। যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে চোখের সামনে কাকাকে হারাতে হল।’’ বুধবার রাতে রঞ্জু মাহাতো নামে এক হৃদরোগীকে গুরুতর অবস্থায় ভর্তি করানোর পরেই চিকিৎসক বাইরে থেকে ইসিজি করানোর কথা জানিয়ে দেন। তা নিয়ে ক্ষুব্ধ রোগীর পরিবারের লোকেরাও। চিকিৎসকদের একাংশ নিরুপায় বলে জানিয়েছেন। এ দিন সিসিইউ-র ৬টি শয্যাতেই রোগী ছিলেন। তার মধ্যে কয়েক জনের পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক ছিল। পরিকাঠামো নেই দেখে তারাও উদ্বেগে পড়েন।

সিসিইউ-র মতো ইউনিটে ইসিজি মেশিন বা ওই কাজের জন্য দক্ষ টেকনিশিয়ান, ভেন্টিলেটর ব্যবস্থা নেই কেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জেলা হাসপাতালে ভর্তি এ ধরনের রোগীকে বাইরে থেকে ইসিজি করিয়ে আনতে বলতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। মুমূর্ষু রোগীকে এ ভাবে বাইরে ইসিজি করতে বলা যে অনুচিত, তা জানেন চিকিৎসকরেরাও। কিন্তু তাঁদেরও কিছু করার নেই, এমনকী ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন থাকলেও রোগীকে তাঁরা সেই পরিষেবা দিতে পারছেন না বলে জানান।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE