Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

অনুমোদন নিয়ে অনিশ্চয়তা মেডিক্যালে

পর্যাপ্ত শিক্ষক-অধ্যাপক এবং পরিকাঠামোর অভাবের জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৫০ আসনে ভর্তির অনুমোদন এখনও অনিশ্চিত হয়ে রয়েছে। কিছু দিনের মধ্যেই নতুন শিক্ষাবর্ষে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হবে। কিন্তু এখনও এই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মেডিক্যাল কাউন্সিলর অব ইন্ডিয়া (এমসিআই)-এর তরফে ১৫০ আসনের অনুমোদন অনুমোদন না মেলায় উদ্বিগ্ন কলেজ কতৃর্পক্ষ থেকে ছাত্রছাত্রীদের একাংশ।

সৌমিত্র কুণ্ডু
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৫ ০২:২৪
Share: Save:

পর্যাপ্ত শিক্ষক-অধ্যাপক এবং পরিকাঠামোর অভাবের জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৫০ আসনে ভর্তির অনুমোদন এখনও অনিশ্চিত হয়ে রয়েছে। কিছু দিনের মধ্যেই নতুন শিক্ষাবর্ষে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হবে। কিন্তু এখনও এই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মেডিক্যাল কাউন্সিলর অব ইন্ডিয়া (এমসিআই)-এর তরফে ১৫০ আসনের অনুমোদন অনুমোদন না মেলায় উদ্বিগ্ন কলেজ কতৃর্পক্ষ থেকে ছাত্রছাত্রীদের একাংশ। এই পরিস্থিতিতেই শারীরিক অসুস্থতার জেরে হাসপাতাল সুপার তথা সহ-অধ্যক্ষের পদ থেকে সব্যসাচী দাস সরতে চেয়েছেন। শ্বাসকষ্ট এবং উচ্চ রক্তচাপের কারণে অসুস্থ হয়ে বর্তমানে তিনি কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে গত কয়েকদিন ধরেই ভর্তি রয়েছেন।

দেড়শো আসনের অনুমোদন না মিললে আগের যে দুটি শিক্ষাবর্ষে ১৫০ আসনে ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি হয়েছেন কলেজ থেকে ডাক্তারি পাশ করার পরেও তাঁরা যথাযথ শংসাপত্র পাবেন না। রাজ্যের বাইরে অন্যত্র চিকিৎসক হিসাবে কাজ করতে পারবেন না। পরে এমসিআই ১৫০ আসনের অনুমোদন দিলে তখন তাঁরা শংসাপত্র (রেট্রস্পেক্টিভ রেকগনেশন) পাবেন। সেই অপেক্ষায় থাকতে হবে। ছাত্রছাত্রীদের একাংশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ তা নিয়েই।

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ সমীর ঘোষ রায় বলেন, ‘‘নতুন শিক্ষাবর্ষ থেকে ১৫০ আসনে ছাত্রছাত্রী ভর্তি নেওয়ার অনুমোদন মিলবে কি না এমসিআই এখনও তা আমাদের জানায়নি। মনে হচ্ছে এমসিআই-এর নির্দেশ মতো ‘হেল্থ ইউনিভার্সিটি’ এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা দফতর থেকে কলেজগুলিতে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি যখন দেওয়া হবে তখনই বিষয়টি পরিষ্কার হবে। দেখা যাক কী হয়। এমসিআই পরিষ্কার করে কিছি না জানানো পর্যন্ত আশঙ্কা তো একটা রয়েইছে।’’ অভিজ্ঞতা থেকেই সমীরবাবু জানান, তাঁরা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রথমবর্ষের ছাত্র ছিলেন। শুরুতে সে সময় এমসিআই অনুমোদন পেতে দেরি হয়েছিল। সে কারণে ৩ বছর বাদে তারা শংসাপত্র পেয়েছিলেন।

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রেই জানা গিয়েছে, এর আগেই এমসিআই পরিদর্শনে এসে ১৫০ আসনের অনুপাতে শিক্ষক-অধাপক না থাকা, উপযুক্ত লেকচার থিটেয়ার, ল্যাবরেটরি, হস্টেল না থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। দেখা যায় অ্যাসিস্টান্ট এবং অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর রয়েছে ১৬২ জন। সিনিয়র রেসিডেন্ট বা পোস্ট গ্র্যাজুয়েট বা একই বিষয়ে পাঁচ বছরের বেশি গবেষণা করছেন এবং জুনিয়র চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ১০১ জন। প্রফেসর রয়েছেন ২৭ জনের মতো। যা ১৫০ আসনের অনুমোদনের ক্ষেত্রে অনেকটাই কম।

কলেজ কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন, পরিকাঠামোর যে সব ঘাটতির কথা মেডিক্যাল কাউন্সিলর অব ইন্ডিয়ার প্রতিনিধিরা জানিয়েছিলেন সেগুলি গড়ে তোলার কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। পুরনো লেকচার থিয়েটারগুলিতে বাতানুকূল ব্যবস্থা করা হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের জন্য নতুন হস্টেল তৈরির কাজও অনেক এগিয়ে গিয়েছে। তবে মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় সিনিয়র রেসিডেন্ট চিকিৎসক অন্তত ২৫ শতাংশ কম থাকার বিষয়টি। তাতে নিয়েই আপত্তি তোলে এমসিআই। মাসখানেক আগে কলেজ কতর্পক্ষকে দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়ে সে কথা জানিয়েছেন তারা। এর পরেই রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে তড়িঘড়ি ৩৩ জন সিনিয়র রেসিডেন্টকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বদলি করা হয়। তাদের মধ্যে ৪/৫ জন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে এসে যোগ দিলেও বাকিরা এখনও আসেননি। নতুন লেকচার থিয়েটার তৈরির কাজ শুরু করা নিয়েও সমস্যা রয়েছে। বারবার টেন্ডার ডাকা হলেও তাতে কেউ সাড়া না দেওয়ায় সেই কাজ বিলম্বিত হয়ে পড়েছে।

কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, সিনিয়র রেসিডেন্টের যে ঘাটতির কথা এমসিআই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন তা মেটাতে রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা দফতর দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছে। পরিকাঠামোর ঘটতি মেটাতেও কাজ চলছে। এমসিআই-এর কাছে সম্প্রতি তা বিস্তারিত জানানো হয়েছে। ৩৩ জন সিনিয়র রেসিডেন্ট এবং কিছু শিক্ষক-অধ্যাপককে সম্প্রতি এই মেডিক্যাল কলেজে আনতে বদলির নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। তাঁরা সকলে না এলেও এসে যাবেন। বেসরকারি কলেজগুলির একাংশ অনেক সময় ঘাটতি মেটানোর কথা বলতে নানা রকমের মিথ্যের আশ্রয় নেয়। বাস্তবে তারা অনেক সময় তা করেন না।

কিন্তু সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হওয়ায় যে সব কথা এমসিআইকে জানানো হয়েছে তার বিশ্বাস যোগ্যতা রয়েছে। এমসিআই কর্তৃপক্ষ তা বিবেচনায় রাখবেন বলেই কর্তৃপক্ষ আশাবাদী। সব কিছু ঠিক ঠাকলে নতুন শিক্ষাবর্ষে ভর্তির প্রক্রিয়া শেষ করে ১ অগস্ট থেকে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা। এখন কী হয় সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE