উচ্চ রক্তচাপ ও বমির উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের এক কর্মী। কিন্তু হাসপাতালে চড়কতলা এলাকার বাসিন্দা সাতান্ন বছরের ওই প্রৌঢ়ের যা অভিজ্ঞতা হয়েছে, তাতে তিনি বেজায় ক্ষিপ্ত। তাঁর দাবি, গ্যাস-বমির সাধারণ ইঞ্জেকশন, মাথা ঘোরার ট্যাবলেটও হাসপাতালে পাননি। ডাক্তার যে সংস্থার ওষুধ লিখেছিলেন, তা হাসপাতালের ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানেও পাওয়া যায়নি।
শুধু ওই প্রৌঢ়ই নন। বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা রোগী ও তাঁদের আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বেশির ভাগকেই হাসপাতালের বাইরে থেকে কিছু না কিছু কিনতে হচ্ছে। বাগদার বাসিন্দা রাজু ঘোষের তিন মাসের বাচ্চার শ্বাসকষ্ট হওয়ায় ওই হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলেন। তাঁর দাবি, তাঁকে বাইরে থেকে প্রায় শ’পাঁচেক টাকার ওযুধ কিনতে হয়েছে। বাগদারই বাসিন্দা খেতমজুর বিমল মণ্ডল নিজেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন জ্বর ও বমির উপসর্গ নিয়ে। একই অভিজ্ঞতা তাঁরও। রাজুবাবু, বিমলবাবুদের ক্ষোভ, ‘‘বাগদা থেকে বনগাঁ হাসপাতালে আসতে যাতায়াতেই অনেক খরচ পড়ে। তার পরে যদি বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হয়, তা হলে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানোর সুবিধা কোথায়? অথচ, ঘটা করে সরকারি হাসপাতালে বিনা পয়সায় চিকিৎসার সুযোগ পাওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল!’’
স্থানীয় সূত্রের খবর, তিন মাস আগে এক রাতে এমনও হয়েছে মাথায় চোট পাওয়া রোগীকে সেলাই করার সুতোও মেলেনি হাসপাতালে। পুলিশ বাইরে থেকে একটি দোকান খুলিয়ে সুতোর ব্যবস্থা করে দিয়েছিল।
বনগাঁ হাসপাতালের উপরে মহকুমার প্রায় এগারো লক্ষ মানুষ নির্ভরশীল। ব্লক হাসপাতাল বা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে চিকিৎসা পরিষেবা বেহাল বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা বড় অংশের। ফলে, চাপ পড়ে মহকুমা হাসপাতালের উপরেই। হাসপাতাল সূত্রের খবর, প্রায় এক বছর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হলে রোগীকে বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হবে না বা চিকিৎসার জন্য টাকা খরচ করতে হবে না। কিন্তু রোগীর আত্মীয়দের একাংশ জানাচ্ছেন, হাসপাতালের আশপাশের ওষুধের দোকানগুলি রমরমিয়ে চলছে। হাসপাতাল লাগোয়া চায়ের দোকানে ইনজেকশনের সিরিঞ্জ বিক্রি হচ্ছে। হাসপাতালের নিজস্ব ভাঁড়ার বা ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে প্রয়োজনীয় সব জিনিস মিললে, এই সব দোকানের রমরমা থাকত কি না, সে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্রে জানাচ্ছে, স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা চিকিৎসকদের বারংবার ‘জেনেরিক’ ওষুধ লিখতে বলছেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রেই তা করা হচ্ছে না। নজরদারির অভাবেই এমন ঘটছে বলে ধারণা, স্বাস্থ্য দফতরের ওই সূত্রটির। যদিও উত্তর ২৪ পরগনার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয়কুমার আচার্য দাবি করেছেন, ‘‘বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে রোগী ভর্তি হলে তাঁকে চিকিৎসার জন্য নিজের পকেট থেকে কোনও অর্থ ব্যয় করতে হবে না। যদি কেউ তা পেয়ে না থাকেন, খোঁজ নিচ্ছি। তেমন হলে, পদক্ষেপ করা হবে।’’ ওই স্বাস্থ্য-কর্তার আশ্বাস, ‘‘হাসপাতালে ওষুধের স্টক না থাকলে বলা হয়েছে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ কিনে রোগীদের দিতে হবে।’’ তবে কিছু কিছু ডাক্তার যে প্রেসক্রিপশনে ওষুধের ‘জেনেরিক’ নামের বদলে নির্দিষ্ট ‘ব্র্যান্ডনেম’ লিখছেন, তা মেনেছেন প্রলয়বাবু। তিনি বলেন, ‘‘এটা করা যাবে না। কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ হাসপাতালের সুপার শঙ্করপ্রসাদ মাহাতো বলেছেন, ‘‘রোগীদের বাইরে থেকে ওষুধ কেনার কথা নয়। ওষুধ ফুরিয়ে যাওয়ার মাস দেড়েক আগে অর্ডার দেওয়া হয়।’’ তাঁর বক্তব্য, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কোনও রোগীকে যদি বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হয়, সেই রোগী বা তাঁর আত্মীয়েরা যেন সরাসরি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘দিন কয়েক আগে রোগীকল্যাণ সমিতির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সেখানে ঠিক হয়েছে, এক মাসের মধ্যে যাবতীয় সমস্যা মেটাতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy