কোচবিহার হাসপাতালে কেন্দ্রীয় দল। —নিজস্ব চিত্র।
জাপানি এনসেফ্যালাইটিস এবং অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিনড্রমে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা বাড়ছে উত্তরবঙ্গ জুড়েই। তার মধ্যে জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ারে এ বছর এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মারা গিয়েছে জেই এবং এইএসে আক্রান্ত হয়ে। কোচবিহারে এবং দার্জিলিং জেলাতেও আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রতিনিধিরা কোচবিহার জেলা হাসপাতালে যান। জেলায় কেন এ বছর বয়স্কদের জাপানি এনসেফেল্যাইটিসের টিকাকরণ করা হয়নি, সে ব্যাপারে তাঁরা জানতে চান।
সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিনড্রমে আক্রান্ত হয়ে আরও ২ জনের মৃত্যু হল। জেলা স্বাস্থ্য দফতর এবং হাসপাতাল সূত্রেই জানা গিয়েছে, মৃতদের মধ্যে রয়েছে শিলিগুড়ির অম্বিকানগরের বাসিন্দা ভুবনেশ্বরী বর্মন (৯০) এবং শালুগাড়া এলাকার খোলাচাঁদ ফাঁপরির দুর্গানগর কলোনির বাসিন্দা সুখেন্দ্র রায় (৫৫)। দু’জনকেই রবিবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়েছিল। সোমবার রাতে মারা যান ভুবনেশ্বরীদেবী। সুখেন্দ্রবাবু এ দিন সকালে মারা গিয়েছেন।
এই নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এ বছর এখনও পর্যন্ত ৪৮ জনের মৃত্যু হল। তার একটা বড় অংশ আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়ির বাসিন্দা। চিকিৎসকদের একাংশ জানান, এখন পর্যন্ত যত রক্তের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে তাতে উত্তর দিনাজপুর জেলাতেও এইএস সংক্রমণের বিষয়টি নিয়ে চিন্তার কারণ রয়েছে। গত কয়েক বছরের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে কোচবিহারে জেই টিকাকরণ জরুরি ছিল। কিন্তু পর্যাপ্ত টিকা সরবরাহ না মেলায়, তা করা যায়নি। বস্তুত উত্তরবঙ্গ জুড়েই যে জেই টিকাকরণের আর্জি উঠেছে চিকিৎসকদের তরফেই। তবে শুধু জেই নয়। দুশ্চিন্তার বড় কারণ এইএস-এর সংক্রমণও। কেন না জেই ভাইরাস একাংশের ক্ষেত্রে চিহ্নিত করা গেলেও বাকিরা কোন জীবাণুর সংক্রমণে আক্রান্ত, তা নিয়ে তাঁরা অন্ধকারে রয়েছেন।
কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল এবং রাজ্যের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি দল এ মুহূর্তে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার জেলা হাসপাতালগুলি পরিদর্শন করে বিস্তারিত খতিয়ে দেখছেন। এ দিন কোচবিহারের এমজেএন হাসপাতাল ঘুরে দেখেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রতিনিধিরা। বিকেলে জি কে পান্ডের নেতৃত্বে চার সদস্যের ওই প্রতিনিধি দল কোচবিহার জেলা হাসপাতালে যান। হাসপাতালের সুপারের সঙ্গে বৈঠক করেন। বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্র ও ফিভার ইউনিট ঘুরে দেখেন। তার আগে কোচবিহারের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতরে যান। বৈঠক করেন। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় কেন এ বছর বয়স্কদের জাপানি এনসেফেল্যাইটিসের টিকাকরণ করা হয়নি, সে ব্যাপারে তাঁরা জানতে চান। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানান, ছোটদের টিকাকরণও আগে করা হয়নি। এ বছর তা করা হয়েছে। বয়স্কদের টিকাকরণের জন্য চেষ্টা চলছে। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকা জি কে পান্ডে বলেন,“সমস্ত রিপোর্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।” প্রসঙ্গত, গত এক মাসে কোচবিহার জেলা হাসপাতালে খিঁচুনি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলা হাসপাতালে প্রতিদিনই জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের ভিড়ও হচ্ছে। কোচবিহার থেকে আজ, বুধবার প্রতিনিধি দলটি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসে বিস্তারিত তথ্য পরিসংখ্যান নেবেন।
শিলিগুড়ি শহর এবং লাগোয়া এলাকাতেও এ বার জেই এবং এইএসের সংক্রমণ বাড়ছে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় যথেচ্ছ শুয়োর ঘুরে বেড়াচ্ছে, মশা মারতে যথাযথ ব্যবস্থা নেই বলে অভিযোগ। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত যে দু’জন মারা গিয়েছেন, তাঁরা শিলিগুড়ি শহর লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা। এর আগেও শালুগাড়া এলাকায় এক জনের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার মারা গিয়েছেন শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের শিলিগুড়ির কিশোরী পিঙ্কি মল্লিক। এ দিন ওই কিশোরী বাড়িতে যান মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। শহরে শুয়োর ঘোরার বিষয়টি তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন। পরিস্থিতি সামলাতে প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরকে নিয়ে আজ, বুধবার বৈঠক ডেকেছেন মেয়র। বর্তমানে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জেই এবং এইএস নিয়ে ১৮ জন ভর্তি রয়েছেন। সিসিইইতে রয়েছেন ৩ জন। এইএস বিশেষ ওয়ার্ডে ৯ জন। মেডিসিন বিভাগে ৩ জন। খিঁচুনি জ্বর নিয়ে অন্তত ৫ জন রোগী এ দিন হাসপাতালে ভর্তি হন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy