Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
বার্তা স্বাস্থ্য দিবসে

রান্না-খাওয়ার সময়ও জরুরি সতর্কতা

রোজকার অতি পরিচিত খাবারই সচেতনতার অভাবে হয়ে উঠতে পারে বিষ। কারণ, এই সব খাবারের একাংশের মধ্যে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক, পরজীবী বা রাসায়নিক পদার্থ থাকে। তার সংক্রমণে নানা রোগ এমনকী মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। আজ, মঙ্গলবার ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস’ উপলক্ষে এই বিষয়েই মানুষকে সচেতন করতে উদ্যোগী হল স্বাস্থ্য দফতর। এ বারের স্লোগান— ‘খাদ্য নিরাপত্তার উন্নয়ন, খাদ্যোত্‌পাদন থেকে খাদ্যগ্রহণ’।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১১
Share: Save:

রোজকার অতি পরিচিত খাবারই সচেতনতার অভাবে হয়ে উঠতে পারে বিষ। কারণ, এই সব খাবারের একাংশের মধ্যে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক, পরজীবী বা রাসায়নিক পদার্থ থাকে। তার সংক্রমণে নানা রোগ এমনকী মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। আজ, মঙ্গলবার ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস’ উপলক্ষে এই বিষয়েই মানুষকে সচেতন করতে উদ্যোগী হল স্বাস্থ্য দফতর। এ বারের স্লোগান— ‘খাদ্য নিরাপত্তার উন্নয়ন, খাদ্যোত্‌পাদন থেকে খাদ্যগ্রহণ’।

দিনটি পশ্চিম মেদিনীপুরেও পালিত হবে। খাদ্যের নিরাপত্তা নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে এ দিন থেকে শুরু হবে প্রচারপত্র বিলি। পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, ‘‘দৈনন্দিন খাবার কতখানি স্বাস্থ্যকর, তা অনেকেরই অজানা। রোজ এমন কিছু খাবার খাওয়া হয়, যেখানে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক প্রভৃতি থাকে। এ নিয়ে মানুষকে আরও বেশি সচেতন করা প্রয়োজন। মানুষ যত বেশি সচেতন হবেন, তত রোগ কমবে।’’

চিকিত্‌সকেরা জানাচ্ছেন, ৯০ শতাংশ খাদ্যবাহিত রোগের জীবাণু হল ব্যাকটেরিয়া। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জীবাণু পেটের রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। চিকিৎসকেরা জানান, অস্বাস্থ্যকর খাবার ও জল পৃথিবীতে প্রতি বছর কুড়ি লক্ষ মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ ক্ষেত্রে ডায়েরিয়া থেকে ক্যানসার, সবই হতে পারে। জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধানের কথায়, ‘‘আজকের দিনে খাদ্যের নিরাপত্তায় গুরুত্ব দিতেই হবে। কৃষি খামার থেকে খাবার টেবিল পর্যন্ত যাতে স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে খাবার এসে পৌঁছয় সে দিকে নজর রাখতে হবে। কারণ, অস্বাস্থ্যকর খাবার এবং জল দু’শোরও বেশি রোগ সৃষ্টি করতে পারে।”

ছোঁয়াচে নয়, এমন অসুখে মৃত্যুর সংখ্যা এখন বাড়ছে। এই রাজ্যও তার ব্যতিক্রম নয়। বহু মানুষের সুগার, প্রেশার হচ্ছে। হৃদ্‌রোগের প্রকোপও বাড়ছে। শুধু বয়স্কদের মধ্যে নয়, বেশি ক্যালোরিযুক্ত খাবার, ভাজাভুজি খাওয়ার জেরে কিশোর-যুবরাও নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এডস্, যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া মিলিয়ে যত মানুষ মারা যান, এখন স্ট্রোকে মৃত্যুর সংখ্যা তার থেকেও বেশি। চিকিত্‌সকেরা জানাচ্ছেন, জীবাণুরা যেমন যেমন একজন রোগাক্রান্ত মানুষ বা প্রাণী থেকে অন্য মানুষের বা প্রাণীর মধ্যে সংক্রমিত হয়, তেমনই খাবার, জল, বাতাস বা মাটি দ্বারাও মানুষ বা প্রাণীর মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। অন্য দিকে, ব্যাকটেরিয়া খাবারের মধ্যে ঢুকে টক্সিন বা বিষ উত্‌পন্ন করে। শুকনো খাবারের থেকে জলীয় খাবারই ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধির সহায়ক। মানুষের দ্বারা কখনওই খালি চোখে খাবারে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। কারণ, ব্যাকটেরিয়া হল অতি ক্ষুদ্র, বর্ণহীন, গন্ধহীন ও স্বাদহীন জীবাণু।

সচেতনতার অভাবেই অনেক সময় সমস্যার সূত্রপাত হয়। পুষ্টিবিদ্যার শিক্ষিকা রোশনী চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘প্যাকেটজাত খাবার কেনার সময় প্যাকেটের উপর মেয়াদ উত্তীর্ণের দিন দেখা নেওয়া দরকার। পাশাপাশি, এখন খাদ্যদ্রব্যে এমন কিছু মেশানো হয়, যা তার উপযোগিতাই কমিয়ে দেয়।’’ রোশনীদেবীর পরামর্শ, ‘‘শাক-সব্জি বাজার থেকে কিনে আনার পর তা ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে। এটুকু যদি না- করি তাহলে আমরা নিজেরাই নিজেদের সমস্যা ডেকে আনব।’’

চিকিত্‌সকেরা জানাচ্ছেন, অনেক সময়ই বেঠিক তাপমাত্রায় খাবার রাখা হয়। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সঠিক পদ্ধতি না মেনে খাবার তৈরি করা হলে রোগের সম্ভাবনা থাকে। খাদ্য সংরক্ষণেও বিশেষ যত্নবান হতে হবে। ফ্রিজের মধ্যে কাঁচা মাংস পাঁচ দিনের বেশি এবং মাছ-ডিম দু’দিনের বেশি রাখা ঠিক নয়। ফ্রিজের মধ্যে রান্না করা মাছ, মাংস, ডিম সব সময় শাক-সব্জির তাকের নীচের তাকে রাখা উচিত। প্যাকেটজাত খাবার কেনার সময় প্যাকেটের উপর মেয়াদ উত্তীর্ণের দিন দেখে নেওয়া হলে বিপদের সম্ভাবনা কম থাকে। তৈরি করা খাবার সব সময় ঢাকা পাত্রে এবং মোড়ক সমেত ফ্রিজে রাখাই ভাল। তৈরি করা খাবার দীর্ঘদিন ফ্রিজে রেখে খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করাই শ্রেয়। পাশাপাশি পরিষ্কার পাত্রে গরম অবস্থায় খাবার পরিবেশন করতে হবে।

জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “নিজের অজান্তেই অনেক সময় সমস্যা তৈরি হয়ে যায়। সচেতনতাই পারে এই সব ব্যাধিগুলো দূর করতে। খাদ্যের নিরাপত্তা নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে তাই প্রচারপত্র বিলি করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE