Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভবন পড়ে, ব্লাডব্যাঙ্ক তবু হাসপাতালেই

জায়গার সঙ্কটে ভুগছে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের ব্লাডব্যঙ্ক। অথচ দীর্ঘ দিন ধরে পড়ে রয়েছে গোটা একটা বাড়ি। ব্লাডব্যাঙ্কের কর্মীরা তাঁদের সমস্যার কথা বহুবার জানালেও পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি। ফলে নানা সমস্যা সত্ত্বেও হাসপাতালের ভিতরে মাত্র দু’টো ঘর নিয়ে চলছে নদিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্লাডব্যাঙ্কটি।

তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে ব্লাডব্যাঙ্ক ভবন।— নিজস্ব চিত্র।

তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে ব্লাডব্যাঙ্ক ভবন।— নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৫ ০০:২৫
Share: Save:

জায়গার সঙ্কটে ভুগছে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের ব্লাডব্যঙ্ক। অথচ দীর্ঘ দিন ধরে পড়ে রয়েছে গোটা একটা বাড়ি। ব্লাডব্যাঙ্কের কর্মীরা তাঁদের সমস্যার কথা বহুবার জানালেও পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি। ফলে নানা সমস্যা সত্ত্বেও হাসপাতালের ভিতরে মাত্র দু’টো ঘর নিয়ে চলছে নদিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্লাডব্যাঙ্কটি।

বছর কয়েক আগে ওই বাড়িতে ব্লাডব্যাঙ্ক সরিয়ে নিয়ে যেতে উদ্যোগী হন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু হাসপাতালের মূল ভবনের বাইরে ওই বাড়িতে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কর্মীরা। ফলে সে বারের মতো উদ্যোগ ভেস্তে যায়। তারপর থেকে ওই ভাবে পড়ে রয়েছে কয়েক লক্ষ টাকা ব্যয়ে তৈরি হওয়া গোটা বাড়ি। বর্তমানে ওই বাড়িতে থাকছেন হাসপাতালে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা। সে জন্যেই ব্লাডব্যাঙ্ক স্থানান্তরিত করা হচ্ছে না বলে হাসপাতালেরই একটি সূত্রে খবর।

শক্তিনগরের ওই ব্লাডব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে এই ব্লাডব্যাঙ্কে দৈনিক প্রায় ছ’শো প্যাকেট রক্ত সংরক্ষণের ক্ষমতা রয়েছে। দৈনিক চাহিদা গড়ে ৭০ থেকে ৭৫ বোতল। কিন্তু বর্তমানে চাহিদার মাত্র ৭৫ শতাংশ জরুরি ভিত্তিতে সরবরাহ করতে সক্ষম হয় ব্লাডব্যাঙ্ক। সুদূর করিমপুর থেকে শুরু করে কালীগঞ্জ, নাকাশিপাড়া, চাপড়া, হাঁসখালি-সহ জেলার এক বিরাট এলাকার হাসপাতাল ও নার্সিংহোমের পাশাপাশি কৃষ্ণনগর জেলা হাসপাতালের দৈনন্দিন রক্তের চাহিদা মেটায় এই ব্লাডব্যাঙ্ক। যে ব্লাডব্যাঙ্কের উপরে জেলার এত মানুষ নির্ভরশীল সেই ব্লাডব্যাঙ্ক সম্পর্কে জেলার স্বাস্থ্যকর্তাদের এই উদাসীনতায় ক্ষোভ বাড়ছে কর্মীদের। কারণ শেষ পর্যন্ত তাঁদেরকেই মানুষের হাতে পরীক্ষা করা রক্ত পৌঁছে দিতে হয়।

এই সব সমস্যা খতিয়ে দেখে পরিকাঠামো তৈরি করে ব্লাডব্যাঙ্ক স্থানান্তরিত করার জন্য জেলার ড্রাগ কন্ট্রোল থেকে চাপ তৈরি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা হাসপাতালের কর্তারাই। তারপরেও কেন ব্লাডব্যাঙ্ক স্থানান্তরিত করা হচ্ছে না? হাসপাতাল সুপার হিমাদ্রী হালদার বলেন, ‘‘দীর্ঘ দিন ব্যবহার না করার ফলে এসি মেশিনগুলি খারাপ হয়ে গিয়েছে। পূর্ত দফতরকে দ্রুত সেগুলি ঠিক করতে বলেছি। এ ছাড়াও সামান্য কিছু পরিকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে।’’ তবে তাঁর আশা দ্রুত ব্লাডব্যাঙ্ক স্থানান্তরিত করা যাবে।

সুপার এসি মেশিনের দোহাই দিলেও হাসপাতালেরই এক কর্মী শোনালেন অন্য কথা। তাঁর কথায়, এখন যা কর্মী সংখ্যা তাতে দু’টো ঘরে সব কাজ করতে হচ্ছে বলে বোঝা যাচ্ছে না। আমরা কোনও মতে সামলে নিচ্ছি। নতুন বাড়িতে চলে গেলে আর সেটা সম্ভব হবে না। তখন কর্মী সংখ্যা বাড়াতেই হবে। চার দিক দেখে তিনি বলেন, ‘‘সেটা ভাল ভাবেই জানেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাই কেউই তেমন গা করছেন না।’’

ব্লাডব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন চার জন টেকনিক্যাল স্টাফ রয়েছেন। তখন অন্তত ৮ জন প্রয়োজন হবে। এখন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী আছেন তিন জন। তখন আরও ৩ জন প্রয়োজন হবে। মোডিক্যাল অফিসার আছেন তিন জন। তখন দরকার হবে আরও দু’জন। সেই সঙ্গে হাসপাতালের মূল বাড়ির বাইরে হওয়ার কারণে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে রক্ত নিতে আসা রোগীর পরিবারের লোকদের সামাল দেওয়া যাবে না। এ প্রসঙ্গে হিমাদ্রীবাবুর দাবি এই কর্মী দিয়েই সব সামাল দেওয়া যাবে। শুধু ব্লাডব্যাঙ্কের জন্যে আলাদা নিরাপত্তারক্ষীর ব্যবস্থা করা হবে।

তবে এ সব কথা শুনতে চান না রোগীর পরিজনেরা। তাঁদের দাবি, দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হোক। ১৪ বছর ধরে বছরে ২০ থেকে ২৫টা ক্যাম্প করে আসছে কৃষ্ণনগরের নর্মান বেথুন ব্লাড ডোনার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের সম্পাদক অমিয় বিশ্বাসের মত, ব্ল্যাডব্যাঙ্ক নতুন ভবন এলে দুর্নীতি অনেকটা কমবে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায় অবশ্য বলেন, ‘‘আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত ব্লাডব্যাঙ্কটিকে নিজস্ব ভবনে স্থানান্তরিত করতে। সেই মতো উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে।’’ হাসপাতালের সুপারের মতো তিনিও দ্রুত ব্লাড ব্যাঙ্ক স্থানান্তরনের ব্যাপারে আশাবাদী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

blood bank hospital krishnanagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE