Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ছানি অস্ত্রোপচারে অন্ধত্ব, চিকিত্‌সককে জরিমানা

ছানি অস্ত্রোপচার করাতে গিয়ে রোগী দৃষ্টি হারানোয় চিকিত্‌সককে মোটা টাকার জরিমানা করল ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। শুক্রবার এই রায় দেন বাঁকুড়া ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের তিন বিচারকের বেঞ্চ। বিচারকরা হলেন কনজিউমার ফোরামের সভাপতি যুধিষ্ঠির হালদার এবং দুই সদস্য অগ্নিদীপা অগ্নিহোত্রী ও লোকনাথ চট্টোপাধ্যায়।

শুক্রবার রায় শোনার পরে বাঁকুড়া ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে দৃষ্টিহীন পঙ্কজ সাহা। —নিজস্ব চিত্র

শুক্রবার রায় শোনার পরে বাঁকুড়া ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে দৃষ্টিহীন পঙ্কজ সাহা। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৩৭
Share: Save:

ছানি অস্ত্রোপচার করাতে গিয়ে রোগী দৃষ্টি হারানোয় চিকিত্‌সককে মোটা টাকার জরিমানা করল ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। শুক্রবার এই রায় দেন বাঁকুড়া ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের তিন বিচারকের বেঞ্চ। বিচারকরা হলেন কনজিউমার ফোরামের সভাপতি যুধিষ্ঠির হালদার এবং দুই সদস্য অগ্নিদীপা অগ্নিহোত্রী ও লোকনাথ চট্টোপাধ্যায়।

বিচারকরা বিষ্ণুপুর হাসপাতালের চক্ষু চিকিত্‌সক বিভাস সাহাকে চার লক্ষ টাকা জরিমানা করেন। যদিও এ দিন ওই চিকিত্‌সকের প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলে তিনি বলেন, “কী রায় হয়েছে তা আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।” তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা চিকিত্‌সায় গাফিলতির অভিযোগের প্রেক্ষিতেও তিনি কিছু বলতে চাননি।

২০১১ সালের ১ অক্টোবরের ঘটনা। পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনি থানার জামবেদিয়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী পঙ্কজ সাহা ওই চিকিত্‌সকের কাছে বিষ্ণুপুরের একটি নার্সিংহোমে বাঁ চোখের ছানি অস্ত্রোপচার করান। পরে তিনি ওই চোখের দৃষ্টিশক্তি হারান। পঙ্কজবাবুর পক্ষের আইনজীবী জয়ন্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, “চিকিত্‌সায় গাফিলতির কারণে রোগী দৃষ্টি শক্তি হারিয়েছেন। তাই ওই চিকিত্‌সককে চার লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।” তিনি জানান, ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করা হয়েছিল। বিচারকরা দু’মাসের মধ্যে ওই চিকিত্‌সককে চার লক্ষ টাকা জরিমানা হিসেবে জমা করতে বলেছেন।

জয়ন্তবাবু জানান, ২০১১ সালের ১ অক্টোবর পঙ্কজবাবু বিষ্ণুপুর হাসপাতালের চক্ষু চিকিত্‌সক বিভাস সাহার কাছে বাঁ চোখের ছানি অস্ত্রোপচার করান। অস্ত্রোপচারের পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু বাড়িতে ফিরেই তাঁর চোখে অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়। ফোনে ঘটনার কথা চিকিত্‌সককে জানানো হলে তিনি পঙ্কজবাবুকে ব্যথা কমানোর ওষুধ খেতে বলেন। কিন্তু তাতেও যন্ত্রণা না কমায় মাঝরাতে পঙ্কজবাবুকে বিষ্ণুপুর হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। সেই সময় বিভাসবাবু হাসপাতালে কর্তব্যরত ছিলেন। তিনি পঙ্কজবাবুকে ভর্তি করে নেন। অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গিয়ে চোখের ব্যান্ডেজ খুলে চিকিত্‌সাও করেন। একদিন হাসপাতালে ভর্তি রাখার পরে ৩ অক্টোবর পঙ্কজবাবুকে ছুটি দেওয়া হয়। এরপর বাড়িতে গিয়ে চোখ খোলার পর থেকেই তিনি আর কিছু দেখতে পাননি। তিনি পুরোপুরি দৃষ্টি শক্তি হারিয়েছেন।

এরপর দৃষ্টি শক্তি ফেরাতে দেশের নানা বড়বড় চক্ষু চিকিত্‌সা কেন্দ্রে ছুটে যান পঙ্কজবাবু। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। অবশেষে এই ঘটনার বিচার চেয়ে চিকিত্‌সকের বিরুদ্ধে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে ২০১৩ সালের ৮ নভেম্বর বাঁকুড়া ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হন পঙ্কজবাবু। তারপর থেকেই বিচার চলছিল। এ দিন ওই চিকিত্‌সক বা তাঁর আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। চিকিত্‌সকের আইনজীবী বনমালী চৌধুরীর বক্তব্য, “দৃষ্টি শক্তি হারানোর পরে রোগী নানা জায়গায় চিকিত্‌সা করাতে গিয়েছেন। কিন্তু কোথাও তো ছানি অস্ত্রোপচারে ত্রুটির কথা বলা হয়নি। তারপরেও রায় চিকিত্‌সকের বিপক্ষে গিয়েছে। আমরা উচ্চ আদালতে যাব।”

এ দিন আদালতে পরিবার নিয়ে এসেছিলেন পঙ্কজবাবু। তিনি বলেন, “ছানি অপারেশনে যে অন্ধ হয়ে যাব, ভাবিনি। চিকিত্‌সকের গাফিলতিতেই আমার এই ক্ষতি হল। ক্ষতিপূরণের অর্থের পরিমাণ যাই হোক, চিকিত্‌সক যে ভুল চিকিত্‌সা করেছেন তা প্রমাণ হওয়াতেই আমি খুশি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bankura cataract operation blindness
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE