কয়েক মাসের ব্যবধানে দুই চিকিৎসককে দু’-দু’বার বদলির নির্দেশ দেওয়ার পরেও তাঁরা সরে যাননি। এ দিকে পরিবর্ত চিকিৎসকও হাসপাতালে এসে গিয়েছেন। অভিযোগ, ওই দুই চিকিৎসক শাসক দলের দুই জেলা শীর্ষ নেতার ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদেই তাঁদের সরানো যাচ্ছে না। এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
অভিযোগের সত্যতা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন হাসপাতাল সুপার শোভন দে। তিনি বলেন, “আমি উভয় সঙ্কটে পড়েছি। এক পক্ষ চাইছেন ওই চিকিৎসকদের রিলিজ দেওয়া হোক। আবার অন্য পক্ষ চাইছেন তাঁরা থেকে যান। কিন্তু সরকরি নির্দেশিকা হওয়ায় তা কার্যকর করতেই হবে।” তবে দুই পক্ষ বলতে তিনি কাদের বোঝাতে চাইছেন সুপার তা ভাঙেননি।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গত বছর ২৬ ফেব্রুয়ারি সিউড়ি হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ প্রভাতকুমার সিমলান্দিকে ঝাড়গ্রামে বদলির নির্দেশ দেয় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। একই ভাবে গত বছর ২৫ নভেম্বর সিউড়ি হাসপাতালের অস্থিশল্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক স্বপনকুমার দত্তকে উত্তর ২৪ পরগনার এম আর বাঙুরে বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়। অভিযোগ, কিন্তু তখন ওই দুই চিকিৎসককে সিউড়ি হাসপাতাল ছাড়তে হয়নি শাসক দলের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে। চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি ফের ওই দুই চিকিৎসককে ডিমড রিলিজ অর্ডার দেয় স্বাস্থ্য দফতর। অর্থাৎ ওই নির্দেশের অর্থ বদলি হওয়া বাধ্যতামূলক। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কার্তিক মণ্ডলের কাছে চিকিৎসক সংগঠনের তরফে অভিযোগ করা হয়, এরপরেও ওই নির্দেশ কার্যকর করা হয় নি। তাতে অন্য বার্তা পৌঁছবে। ফোন বন্ধ থাকায় সিএমওএইচের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে জানা গিয়েছে তিনি নির্দেশ কার্যকর করার জন্য সুপারকে বলেছেন।
কী বলছেন চিকিৎসকেরা? স্বপনকুমার দত্তের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে প্রভাতকুমার সিমলান্দি বলছেন, “আমার পারিবারিক কারণে বদলি নেওয়া সম্ভব নয়। তা জানিয়ে ইতিমধ্যেই আবেদন জানিয়েছি।” তাঁদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী। তিনি বলেন, “ওঁদের জায়গায় বিকল্প চিকিৎসক আসেননি। তাই ওঁদের ছেড়ে দিয়ে জায়গা ফাঁকা রাখা সম্ভব নয়। এতে চিকিৎসা পরিষেবা বিপর্যস্ত হতে পারে। সেই আশঙ্কা সত্যি। তবে এর সঙ্গে তৃণমূলের সুপারিশের অভিযোগ সত্য নয়।”
যদিও তৃণমূল প্রভাবিত চিকিৎসক সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক সাক্ষীগোপাল সাহার অভিযোগ, “রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিভাগেও কোনও চিকৎসক নেই, আবার কোথাও একই বিভাগে একাধিক চিকিৎসক রয়েছেন। যাতে হাসপাতালগুলিকে ঠিক ভাবে চালানো যায় সেই উদ্দেশই ওই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। যেটুকু জানি সিউড়ি হাসপাতালে চক্ষু বিভাগে চিকিৎসকের ঘাটতি নেই। তবে অস্থি বিভাগে চিকিৎসকের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু ডিমড রিলিজ বলা থাকলে একমাত্র কোর্টের নির্দেশে বদলি আটকে যেতে পারে। তাই সরকারি নির্দেশিকা পালন করা চিকিৎসকদের কর্তব্য।”
তবে হাসপাতালের কর্মীদের একাংশ জানাচ্ছেন, বর্তমানে এই জেলা জুড়ে চিকিৎসক সঙ্কট চলছে। বীরভূম জেলা হাসপাতালের ছবিটাও প্রায় একই। এখানে ৫৪০ শয্যার জেলা হাসপাতালে এমনিতেই চিকিৎসকের ঘাটতি রয়েছে। নতুন চিকিৎসকেদের মধ্যে সিউড়ি হাসপাতালে যোগ দিয়েছেন মাত্র চার জন। পাশাপাশি ওই দু’জন-সহ ছয় চিকিৎসকের বদলির নির্দেশও এসেছে। তাই চিকিৎসক ছাড়ার বিষয়ে ধীরে চল নীতি নিচ্ছে হাসপাতাল। সঙ্গে ওই দু’জনকে ধরে রাখার জন্য শাসকদলের জেলা শীর্ষ নেতাদের সুপারিশও রয়েছে।
শেষ পর্যন্ত কী হয়, অপেক্ষায় সিউড়িবাসী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy