Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বাস্তুমতে বিভিন্ন দিকের নৈসর্গিক ও ঐশ্বরিক গুরুত্ব

বাস্তু মানেই সূর্য কিরণ, আলো ও হাওয়া, তেমনই মহাজাগতিক তেজ, রশ্মি ও কম্পন। তাই বাড়ি তৈরিতে বাস্তু শাস্ত্রের নিয়ম মেনে তৈরি হলে, আপনার বাড়িতে সর্বদা হাসিখুসি, সুখ সমৃদ্ধি থাকবে।

অসীম  সরকার
শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৮ ০৭:৪৯
Share: Save:

আমাদের প্রাচীন মুনিঋষিরা তাদের অতীন্দ্রীয় শক্তির মাধ্যমে বাস্তু সম্বন্ধে যে জ্ঞান লাভ করেছিলেন, তার মূল্য নিরুপণ করা কঠিন। সৌর শক্তি ছাড়া বাস্তু শাস্ত্র অনুযায়ী গৃহ নির্মাণে বিভিন্ন দিক থেকে যে মহাজাগতিক রশ্মি ও কম্পন প্রতি মুহূর্তে আমদের উপর এসে পড়ছে, তা আমরা তাঁদের দেওয়া জ্ঞান থেকেই জানতে পেরেছি।

তাই বাস্তু মানেই সূর্য কিরণ, আলো ও হাওয়া, তেমনই মহাজাগতিক তেজ, রশ্মি ও কম্পন। তাই বাড়ি তৈরিতে বাস্তু শাস্ত্রের নিয়ম মেনে তৈরি হলে, আপনার বাড়িতে সর্বদা হাসিখুসি, সুখ সমৃদ্ধি থাকবে।

বাস্তু শাস্ত্র অনুযায়ী বাড়ির চারটি দিক এবং চারটি কোণ থেকে যে ঈশ্বরিক বা “সাইকিক ফরস” প্রতি মুহূর্ত কী ভাবে বাড়ির উপর বিচ্ছুরিত হচ্ছে, তা আমরা আলোচনা করব।

পূর্ব দিক: এই দিকের অধিদেবতা ইন্দ্র। বাড়ির পূর্ব দিক সব সময় খোলামেলা থাকা উচিত। এই দিকে জানালার পরিবর্তে আবদ্ধ দেওয়াল থাকলে, বাড়ির অগ্রগতি বাধাপ্রাপ্ত হবে। আপনি যদি গৃহস্বামী হন, তা হলে আপনার অগ্রগতি চরম ভাবে ব্যাহত হবে। শাস্ত্রমতে এই স্থান পৈতৃক স্থান। তাই বাড়ি তৈরির সময় দেখতে হবে পূর্ব দিক যেন কোনও ভাবেই আবদ্ধ না হয়।

দক্ষিণ দিক: এই দিকের অধিদেবতা যম। যম আবার মৃত্যুরও অধিপতি। বাস্তু মতে, দক্ষিণ দিক সব সময় খারাপ হিসেবে বিবেচিত। তাই বাড়ির দক্ষিণ খুব একটা খোলা রাখা ভাল না। বাড়ির দক্ষিণ দিক বদ্ধ থাকলে গৃহস্বামীর অর্থ ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায়।

উত্তর দিক: এই দিকের অধিদেবতা কুবের। তাই উত্তর দিক গৃহস্বামীর মিত্র দিক। সেই কারণে উত্তর দিককে অর্থ ও পেশাগত সাফল্যের দিক বলে অভিহিত করা হয়। উত্তর মেরুর কারণে বাড়ির উত্তর দিক থেকে প্রচুর চৌম্বক শক্তি নির্গত হয়। উত্তর মেরুর এই ধনাত্মক শক্তি বাড়িতে যাতে ঢুকতে পারে তার জন্য বাড়ির উত্তর দিক সব সময় খোলা রাখা উচিত। টাকাপয়সা, সোনাদানা ও দামি জিনিসপত্র বা ভাঁড়ার ঘর এই দিকে হলেই ভাল।

পশ্চিম দিক: এই দিকের অধিপতি বরুণ। বাড়ির পশ্চিম দিক খুব একটা খোলামেলা না থাকাই বাঞ্চনীয় কারণ এই দিক জীবনে প্রতিষ্ঠা ও সমৃদ্ধি দেয়। স্বাভাবিক ভাবেই বাড়িতে যে অর্থ ও সম্পদ আসে তা ব্যবসা বা চাকরি বা অন্য যে কোনও উপায়ে , সেটা বাধা প্রাপ্ত হয় পশ্চিম দিক বেশী খোলা থাকলে। পশ্চিম দিকে বাড়ির মূল ফটক না থাকাই ভাল।

নৈঋত্ বা দক্ষিণ পশ্চিম দিক: এই দিকের অধিদেবতা নৈঋৎ নামে এক রাক্ষস। উত্তর-পূর্ব দিক থেকে নির্গত হওয়া চৌম্বকীয় শক্তি এই কোণো সঞ্চিত হয়, তাই এই কোণ বাড়ির সব থেকে শক্তিশালী দিক। এই কোণের সঠিক ব্যবহার বাড়ির লোকদের শক্তিশালী ও স্বাস্থ্যকর জীবনী শক্তি দিতে পারে। কিন্তু ভুল ব্যবহার করলে হতাশা, উদ্বেগ, অবসাদ-সহ সমস্ত রকম নেগেটিভ প্রভাব দিতে পারে।

বায়ু কোণ বা উত্তর পশ্চিম দিক: এই কোণের অধিদেবতা বায়ু। এই দিক বাড়ির সব থেকে চঞ্চল দিক বা অস্থির দিক। এই দিকের সঠিক ব্যবহারে পেশাগত দিক থেকে উন্নতির সুযোগ রয়েছে। আর ভুল ব্যবহারে বাড়ির লোকেরা নানা রকম অশান্তির মধ্যে বাস করতে হয়। প্রায়শই বাড়ির লোকেরা কোনও না কোনও রোগজ্বালায় কষ্ট পায়। বায়ু কোণের শুভ প্রভাবে মিত্র লাভ হয়। আর অশুভ ব্যবহারে শত্রু বৃদ্ধি হয়।

অগ্নি কোণ বা দক্ষিণ পুর্ব দিক: এই দিকের অধিদেবতা অগ্নি। আগুন সংক্রান্ত সমস্ত রকম কাজকর্ম এই দিকে করলেই ভাল হয়। রান্না ঘর, বৈদ্যুতিক জিনিসপত্র রাখার ঘর এই দিকে করলেই ভাল হয়।

ঈষাণ কোণ বা উত্তর পূর্ব দিক: এই দিকের অধিদেবতা শিব। এই দিক সব সময় মুক্ত রাখতেই হবে। এই দিক থেকে শক্তিশালী চৌম্বকীয় শক্তি নির্গত হয়। ধন, সম্পত্তি, প্রতিপত্তি ও সুস্বাস্থ্য সব এই দিক থেকেই আসে। এই কোণ বংশবৃদ্ধির কারক। এই কোণে শৌচাগার করলে গোটা পরিবারটাকে বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারে। ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার ঘর এই কোণে হওয়া উচিত। কোনও দাহ্য পদার্থ এই কোণে রাখা উচিত নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Vastu Direction Vastu Remedies
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE