পিতৃ তর্পণ শুধুমাত্র বছরের একটা সময়ের জন্য নয়। শাস্ত্রীয় নিয়ম অনুযায়ী প্রতিদিন পিতৃ-পুরুষের আত্মার পরিতৃপ্তির জন্য তর্পণ করা উচিত। প্রাত্যহিক তর্পণের কারণে স্বর্গত পিতৃ পুরুষদের আশীর্বাদ লাভ হয়। শাস্ত্রকার মনিষীদের মতে পিতা হল প্রজাপতির মূর্তি ও মাতা হল পৃথিবীর মূর্তি। সেক্ষেত্রে সন্তান হল আত্মজ।কয়েক লক্ষ্য যোনি ভোগ করার পর মানব জন্ম লাভ করে পিতৃগণ, ঋষিঋন এবং দেবগণ প্রতিটি পুত্রের যতটা সম্ভব শোধ করা একান্ত প্রয়োজন।
বায়ু পুরাণের মতে, জীবিতকালে পিতা-মাতার আদেশ পালন করা আর পরলোক গমনের পর সাংবৎসরিক মৃত্যু তিথিতে শ্রদ্ধা-জ্ঞাপন পূর্বক ব্রাহ্মণ ভোজ-নাদি ও বিষ্ণু-পাদ পদ্মে পিণ্ড দান করলে পুত্রের কর্তব্য সিদ্ধ হয় বা পুত্র হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করা যায়।মুখ্যচান্দ্র ভাদ্র ও গৌণ-চান্দ্র আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষে পরলোক গত পিতৃপুরুষ-গণকে জল তর্পণ করা আবশ্যিক। এই পক্ষটিকে পিতৃপক্ষ, অপরপক্ষ বা প্রেতপক্ষ বলা হয়। শুধুমাত্র বছরের এই সময়টিতে পিতৃপুরুষগণ জল প্রার্থী হয়ে মর্ত্যলোকের কাছাকাছি আসেন। তাই তারা বংশজগনের নিকট তিল তর্পণ ও পার্বণ শ্রাদ্ধ পাওয়ার প্রত্যাশী হন।তিল তর্পণ পনেরো দিনের জন্য। তর্পণ শুরু হয় কৃষ্ণা প্রতিপদ তিথি থেকে। শেষ হয় মহালয়া অমাবস্যায়। যিনি পনেরো দিন তর্পণ করতে অসমর্থ তিনি ষষ্ঠী তিথি থেকে অমাবস্যায় করবেন। এই রীতিতে যাদের অসুবিধে হবে তাদের জন্য অষ্টমী থেকে অমাবস্যা মোট আটদিন ধার্য। সেইভাবে একাদশী তিথি থেকে অমাবস্যা মোট পাঁচদিন তর্পণ করা যায়। আর একেবারেই অসমর্থ ব্যক্তির পক্ষে শুধুমাত্র একদিন অর্থাৎ অমাবস্যার দিন তর্পণ পুত্রের কর্তব্য।
অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, মৃত্যুর পর পিতা-মাতার দেহ চিতাগ্নিতে ভস্মীভূত হয়ে সব শেষ যায়, তাহলে আর শ্রাদ্ধ-তর্পণের কি প্রয়োজন ? তারা এসব অনুষ্ঠানকে অবান্তর বলে মনে করে। কিন্তু যারা এটা মেনে চলে তারা ভাবে যে শ্রদ্ধার সঙ্গে এই অনুষ্ঠান সম্পন্ন করলে অবশ্যই ব্রহ্ম-প্রাপ্তি ঘটে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy