পালাবদল ঘটল কেরল সিপিএমে। পিনারাই বিজয়নের জমানার অবসান ঘটিয়ে দলে নতুন রাজ্য সম্পাদক হলেন কোডিয়ারি বালকৃষ্ণন। দলের অন্দরে যিনি বিজয়নের অনুগামী বলেই পরিচিত। কান্ডারি বদলেও তাই ভাবধারায় কোনও পরিবর্তন আসছে না বলেই সিপিএম সূত্রের খবর।
পরিবর্তন অবশ্য ঘটেছে অন্য দিকে! ১৯৬৪ সালের পরে এই প্রথম কেরল সিপিএমের রাজ্য কমিটির তালিকায় নাম থাকল না ভিএস অচ্যুতানন্দনের! রাজ্য সম্মেলনের শেষ দিন সোমবার ৮৮ জনের নতুন রাজ্য কমিটি তৈরি হয়েছে। সেখানে ৮৭ জনের নাম ঘোষণা হলেও ফাঁকা রাখা হয়েছে একটি জায়গাই। দলীয় সূত্রে বলা হচ্ছে, ভিএস মন বদলে যদি দলের কাছে আসেন, তা হলে ওই জায়গায় তাঁর নাম ঢুকতে পারে। তবে সে সম্ভাবনায় গুরুত্ব যে কেরলের রাজ্য নেতৃত্ব দিচ্ছেন না, তার ইঙ্গিত মিলেছে নতুন রাজ্য সম্পাদকের বক্তব্যেই। কোডিয়ারি বলেন, “ভিএস দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। সে হিসাবে রাজ্য কমিটির আলোচনাতে তিনি অংশ নিতে পারেন।”
বিজয়নদের কাজে ক্ষুব্ধ ভিএস এ বার সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনই ওয়াক আউট করে চাঞ্চল্য তৈরি করেন। তাঁর অভিযোগ, রাজ্য সম্মেলনের প্রতিবেদনে একপেশে ভাবে তাঁর সমালোচনা করা হয়েছে। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী তাঁর বিরুদ্ধে যে নিন্দা প্রস্তাব নিয়েছে, তা-ও প্রত্যাহার করার দাবি তোলেন তিনি। ওয়াক আউটের পর দিন দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটের আর্জিতেও কান না দিয়ে সম্মেলন বয়কটে অনড় ছিলেন ভি এস। শেষ দিনেও সম্মেলনে হাজির হননি। সঙ্কট সামাল দিতে কারাটের হস্তক্ষেপে অবশ্য প্রতিবেদনের কিছু অংশ সম্মেলনে পাশ না করিয়ে মুলতবি করা হয়েছে। যে ঘটনাকে ‘ইতিবাচক’ বলেছেন ভিএস-ও। কিন্তু সম্মেলনে ফেরেননি। রাজ্য নেতৃত্বও নতুন রাজ্য কমিটিতে তাই প্রতিষ্ঠাতা-সদস্যের নাম লিখতে চাননি!
পলিটব্যুরোর সদস্য, ৬২ বছরের কোডিয়ারি কান্নুর জেলার নেতা। যুব সংগঠন থেকে শুরু করে কান্নুরে সিপিএমের জেলা সম্পাদক ছিলেন। এলডিএফ জমানায় ছিলেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এখনও তিনি বিধায়ক এবং বিধানসভায় বিরোধী পক্ষের সহকারী নেতা। সংসদীয় রাজনীতির সঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টির সাংগঠনিক দায়িত্বের দূরত্ব যে কমছে, বিধায়ক কোডিয়ারির রাজ্য সম্পাদক পদে অধিষ্ঠান তারই ইঙ্গিত বলে একাংশের মত।
আলাপ্পুঝার ইএমএস স্টেডিয়ামে সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পরে কোডিয়ারি বলেন, দলের ঊর্ধ্বে কেউ নন। দলের পাশেই লোক আসে, নেতার জন্য নয়। কেরলেই অতীতে এম ভি রাঘবন বা গৌরী আম্মার দৃষ্টান্ত সেই সত্য প্রতিষ্ঠা করেছে। কোডিয়ারির এই বার্তা বোঝাচ্ছে, ভিএস-ই ছিলেন চর্চার কেন্দ্রে! সম্মেলন শেষে কারাটও বলেন, “ভিএসের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তিনি দলের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তবে দলীয় শৃঙ্খলা সব কিছুর উপরে।” নতুন রাজ্য কমিটি থেকে এ বার সরে গিয়েছেন পলিটব্যুরো সদস্য এম এ বেবিও। কেন্দ্রীয় নেতা হিসাবে তিনি দিল্লির সদর দফতরের সঙ্গেই জড়িত থাকবেন। কিন্তু ভিএসের ঘটনার অভিঘাত অন্য! তাঁর পরের পদক্ষেপেই নজর থাকছে বাম মহলের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy