মণিপুরি প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে বেধড়ক মার খেলেন ব্রিটিশ যুবক। কারণ, সেই প্রেমিকা যে আফস্পা বিরোধী আন্দোলনের নেত্রী ইরম শর্মিলা চানু!
কঠিন লড়াইয়ের পথে প্রেমের মতো ‘সাময়িক আবেগ’ চানুর আন্দোলনকে লঘু করে দিতে পারে এমনই মনে করেন তাঁর সমর্থকরা। তাই ডেসমন্ড অ্যান্টনি বেলারমাইন কুটিনহো ইম্ফলের আদালত চত্বরে শর্মিলার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে নিগৃহীত হলেন তাঁদের হাতেই।
‘বার্নি ব্রাইট’ বইয়ে শর্মিলার কথা পড়েছিলেন ডেসমন্ড। ২০০৯ সালে তিনি শর্মিলাকে প্রথম চিঠি লেখেন। তখন থেকেই দু’জনের পরিচয়। ২০১১ সালে শর্মিলার সঙ্গে দেখা করতে ইম্ফলে যান ওই যুবক। শর্মিলার সমর্থকদের সংগঠন ‘শর্মিলা কানবা লুপ’ তখনও তাঁকে বাধা দিয়েছিল। অনশনে বসেন ডেসমন্ড। দু’দিন পর শর্মিলার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি মেলে। কিন্তু, আন্দোলনের মঞ্চে শর্মিলার সঙ্গে বসতে গিয়ে অপদস্থ হন ডেসমন্ড। চানুর সমর্থকরা জানান, শর্মিলা এক অনন্ত লড়াইয়ের নাম। সেখানে প্রেমের ঠাঁই নেই।
তার পর থেকে চিঠিতেই টিকে ছিল সম্পর্ক। ইম্ফলের হাসপাতালে শর্মিলার ‘সিকিউরিটি ওয়ার্ডে’ জমেছে ডেসমন্ডের পাঠানো কাঠের রাধাকৃষ্ণ, সান্তার টুপি, ডায়েরি, ল্যাপটপ। কুটিনহোর ই-মেল, চিঠিগুলিও পাঁচ বছর ধরে শর্মিলাকে এগিয়ে চলার প্রেরণা দিয়েছে।
পাঁচ জন সাধারণ মেয়ের মতো চানুও চান আন্দোলনের শেষে সংসার গড়তে। সংবাদমাধ্যমের সামনেও তিনি একাধিক বার ক্ষোভের সুরে বলেছেন, “আমার কোনও ব্যক্তিগত জীবন নেই। আমি সমর্থকদের সম্পত্তি হয়ে গিয়েছি। হারিয়েছি প্রেমের অধিকার। আমি যে পুরস্কার পাই, তার টাকাও ইচ্ছামতো কোথাও দান করার সুযোগ নেই।” শর্মিলার পরিবার ও সমর্থকদের বক্তব্য, “মণিপুরের মঙ্গলের জন্যই এ সব করা হচ্ছে।”
ভারতীয় দণ্ডবিধি থেকে ৩০৯ ধারা (আত্মহত্যার চেষ্টা) বিলোপের কথা চলছে। গত কাল শর্মিলাকে পূর্ব ইম্ফলের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে পেশ করা হয়। সেই খবর পেয়ে আফ্রিকার জাঞ্জিবারে জন্ম নেওয়া ব্রিটিশ ডেসমন্ড ইম্ফলে পৌঁছন। সমর্থকদের পাশাপাশি তাঁরও আশা ছিল, শর্মিলা মুক্তি পাবেন। বিচারক উইসডম কামোডাং আগামী বছরের ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত রায়দান স্থগিত রাখেন। এর পরই শর্মিলার সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে আদালতে আর্জি জানান ডেসমন্ড। তাঁকে ২৫ ডিসেম্বর সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত শর্মিলার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়।
আদালত-কক্ষ থেকে বেরোতেই শর্মিলার সমর্থকরা ডেসমন্ডকে তাড়া করেন। তাঁকে ঘিরে গালাগালি, ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে লাম্ফেল থানায় নিয়ে যায়। কাঁদতে থাকেন ডেসমন্ড। আদালত চত্বরে চোখের সামনে সব দেখে কাঁদছিলেন শর্মিলা। ধাক্কাধাক্কির সময় ডেসমন্ডের পকেট থেকে ২৭ হাজার টাকা, ৪৫০ ইউরো, দু’টি পাসপোর্ট, বাইবেল, ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়া হয়। পুলিশ সেগুলি উদ্ধার করে। ডেসমন্ড জানান, বড়দিনে প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করে ফিরবেন তিনি। শর্মিলার সমর্থকরা ডেসমন্ডের বিরুদ্ধেই অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, এ সব শর্মিলার আন্দোলনকে দুর্বল করার চক্রান্ত।
শর্মিলার ভাই সিংগজিৎ বলেছেন, “ডেসমন্ডকে কেউ পছন্দ করি না। ওর ব্যবহার, আচরণ সন্দেহজনক।” শর্মিলার আন্দোলনের সেনাপতি বাবলু লৌইতোংবামের মতে, ‘‘ডেসমন্ড সুন্দর ভাষায় চিঠি লিখে শর্মিলার মনকে বিক্ষিপ্ত করছেন। আমাদের কাছে উনি বিভিন্ন সময় টাকাও দাবি করেছেন। এ ভাবে শর্মিলাকে প্রভাবিত করা হলে আন্দোলনের ক্ষতি হবে।”
হতাশ ডেসমন্ডের মন্তব্য, “আমি আন্দোলনকারী নই, লেখকও নই। আমি শর্মিলাকে ভালবাসি। এ সবে চক্রান্তের গন্ধ খোঁজা অন্যায়। শর্মিলার পাশে আছি, থাকবও।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy