গৌতম রায়।
পুরভোটে নিজের এলাকায় কংগ্রেসের দুর্গ বাঁচানোর পুরস্কার হিসেবে অসম মন্ত্রিসভায় ফিরতে পারেন হিমন্তবিশ্ব শর্মা, গৌতম রায় এমনই জল্পনা ছড়িয়েছে রাজ্য রাজনীতির অলিগলিতে। কংগ্রেস সূত্রে খবর, তরুণ গগৈ বিরোধী গোষ্ঠীর ওই দুই বিধায়ককে মন্ত্রী করতে চাপ বাড়ছে মুখ্যমন্ত্রীর উপরও।
দলের সদ্যনিযুক্ত প্রদেশ সভাপতি অঞ্জন দত্ত ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছিলেন, নির্বাচনে কোনও এলাকায় কংগ্রেস ভাল ফল করলে সেখানকার দলীয় জনপ্রতিনিধি পেতে পারেন মন্ত্রিত্বের ছাড়পত্র। পুরসভা ও নগর কমিটির ভোটে অসমের বেশিরভাগ জায়গাতেই ভরাডুবি হয় কংগ্রেসের। ব্যতিক্রম, হিমন্তবিশ্ব ও গৌতমবাবুর মতো কয়েক জন নেতা।
দলীয় নেতৃত্বের প্রাক-নির্বাচনী পরিকল্পনা অনুযায়ীই, নিজের ঘাঁটি অক্ষত রাখা জালুকবাড়ির বিধায়ক হিমন্তবিশ্ব শর্মা ও বরাকের কাটলিচেরার বিধায়ক গৌতম রায়কে মন্ত্রিসভায় ফেরানোর সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়েছে। উল্লেখ্য, গগৈ মন্ত্রিসভায় এখনও চারটি আসন খালি রয়েছে। ১৯ জনের বদলে মন্ত্রীর সংখ্যা বর্তমানে ১৫। যদিও এ নিয়ে সরকারের কেউ মুখ খোলেননি। তবে গৌতমবাবু জানিয়েছেন, এ বিষয়ে দলীয় নেতৃত্ব তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁর মন্তব্য, “আমি মন্ত্রিত্ব পেতে ছুটব না। শীর্ষ নেতৃত্ব কোনও দায়িত্ব দিলে হাসিমুখে তা পালন করতে প্রস্তুত।” হিমন্তের অধীনে থাকা উত্তর গুয়াহাটির চারটি বোর্ডে জিতেছেন কংগ্রেস প্রার্থীরা। হিমন্ত অবশ্য জানিয়েছেন, অন্তত ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত তিনি গগৈয়ের অধীনে মন্ত্রী হতে চান না। উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ’ করার জন্য কয়েক মাস আগে হিমন্তকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
অসমে প্রায় ১৯ বছর ধরে মন্ত্রী ছিলেন বরাকের গৌতমবাবু। গত লোকসভা ভোটে তাঁর পছন্দের প্রার্থী ললিতমোহন শুক্লবৈদ্য বিপুল ভোটে পরাজিত হওয়ায় তাঁকে গগৈ মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তারপর থেকেই কোমর বেঁধে বরাকের হাইলাকান্দিতে দলের সংগঠন আরও মজবুত করার কাজ শুরু করেন তিনি। পুরভোটে প্রার্থী বাছাই থেকে প্রচার সব ছিল তাঁরই কাঁধে। হাতেনাতে ফলও মিলেছে। অসমজুড়ে বিজেপি হাওয়ার মধ্যেও হাইলাকান্দি পুরসভা ও নগর কমিটি দখলে রাখে কংগ্রেস। ১৬ আসনের হাইলাকান্দি পুরসভায় ৯টি আসন জিতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ হয় তারা। লালা নগর কমিটিতে বিজেপি ৫ ও কংগ্রেস ৪টি আসন দখল করেছে। সেখানকার এক মাত্র নির্দল বিজয়লক্ষ্মী দেবনাথকে চেয়ারপার্সন করার আশ্বাস দিয়ে সমর্থন আদায় করেছেন গৌতমবাবু। অসম রাজ্য পুর-আইনে কোনও এলাকার বিধায়ক-সাংসদরা পুরসভা, নগর কমিটির সদস্য হন। বোর্ড গঠনের ক্ষেত্রে তাঁরাও ভোট দিতে পারেন। ওই হিসেবে কংগ্রেসই লালায় ক্ষমতা পাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে দলে গৌতমবাবুর বিরোধী একটি গোষ্ঠী সক্রিয় হয়েছে। তাঁদের যুক্তি, প্রদ্যোৎ বরদলৈর মত নেতার বদলে গৌতমবাবুকে মন্ত্রিসভায় সামিল করা হলে বিদ্রোহ দেখা দিতে পারে। তা ছাড়া, হাইলাকান্দি পুরসভায় গত নির্বাচনের তুলনায় এ বার কংগ্রেসের আসন কমেছে। লালা নগর কমিটিতেও কংগ্রেসের চেয়ে বিজেপি বেশি আসন জিতেছে। ওই গোষ্ঠীর বক্তব্য, গগৈ মন্ত্রিসভায় বরাক উপত্যকার সংখ্যালঘু বিধায়ক আব্দুল মুহিব মজুমদার বা জামালউদ্দিন আহমদকে নেওয়া হোক। কারণ, হাইলাকান্দিতে মুহিব মজুমদারই পুরভোটে দলকে জিতিয়েছেন। কিন্তু অন্য পক্ষের নেতাদের দাবি, মুহিববাবু নিজের এলাকাতেই যান না। পুরভোটে প্রচার করেননি। আর জামালউদ্দিনের বদরপুরে চারটি ওয়ার্ডের একটিতেও জিততে পারেনি কংগ্রেস।
২০০৯ সালের পুর নির্বাচনে রাজ্যের ৬৯৬টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস জিতেছিল ৪২৬টি আসনে। ৭৪টি বোর্ড ও নগর কমিটির মধ্যে ৮০ শতাংশই সে বার ছিল তাদের দখলে। কিন্তু এ বারের ভোটে কংগ্রেস শিবিরের ছবিটা বদলেছে। ৭৪টি বোর্ড ও কমিটির মধ্যে ৩৯টিই দখল করে বিজেপি। কংগ্রেস জিতেছে ১৮টি। দলের এই পরিস্থিতিতে আত্মপক্ষ সমর্থনে গগৈ বলেছেন, “শহরে কংগ্রেস সব সময় কম ভোট পেত। কিন্তু, এ বারের ভোটে মোদী ঝড়ের তেজ কমেছে। শহরেও তাই কংগ্রেসের ভোট বেড়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy