বঙ্গে কঠিন লড়াই। প্রকাশ কারাটদের বেশি ভরসা এ বার তাই কেরল। কিন্তু আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রার্থী ঘোষণার আগেই সে রাজ্যে চিরাচরিত গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বে বেসামাল হয়ে পড়ছে সিপিএম!
প্রার্থী তালিকা ঘিরে অসন্তোষের জেরে রাস্তায় নেমে বাম সমর্থকদের বিক্ষোভ আগেই দেখেছে কেরল। গত বারের বিধানসভা ভোটের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকায় ভি এস অচ্যুতানন্দনকে না-রাখার প্রতিবাদে যে বিক্ষোভ চরমে উঠেছিল। এ বার লোকসভা ভোটের প্রাথমিক তালিকাতেও পিনারাই বিজয়নদের শিবির ব্রাত্য করে দিয়েছে ভি এস-অনুগামীদের! রাজ্য নেতৃত্বের অনুমোদিত প্রার্থীদের নাম হাতে পাওয়ার পরে আপত্তি তুলে বেঁকে বসছেন জেলা নেতৃত্ব। ইতিমধ্যেই অন্তত তিনটি জেলা থেকে আপত্তির কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বকে। বেকায়দায় পড়ে বিকল্প নামের খোঁজে দফায় দফায় আলোচনা চলছে তিরুঅনন্তপুরমের এ কে জি সেন্টারে।
এক দিকে যখন বাম শরিকদের আসনের দাবি বিজয়নেরা মানতে নারাজ হওয়ায় এলডিএফ শিবিরে ভাঙন ধরেছে, তারই পাশাপাশি সিপিএমের প্রাথমিক তালিকায় বেশ কিছু ‘বহিরাগতে’র ভিড়! দলের এক ঝাঁক ওজনদার নেতা-নেত্রীকে বিভিন্ন জেলা থেকে লোকসভা ভোটে প্রার্থী করছে সিপিএম। আবার অন্য দল ছেড়ে-আসা কিছু নেতাকে টিকিট দিয়ে লড়তে পাঠাতে চাইছেন বিজয়নেরা! যেমন, পাতানামতিট্টা আসনে প্রাক্তন জেলা কংগ্রেস সভাপতি টমাস ফিলিপোজকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। উত্তর কেরলের আরও একটি আসনে মুসলিম লিগ ছেড়ে-আসা নেতা ভি আব্দুরহমানকে সমর্থন করতে চান সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। এর্নাকুলাম আসনে বিজয়নদের পছন্দের প্রার্থী এক প্রাক্তন আইএএস। যিনি প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিলের সচিব ছিলেন। এর্নাকুলাম, কোঝিকোড়-সহ কয়েকটি জেলা কমিটি রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছে, এই রকম একাধিক প্রার্থীকে মেনে নিতে তারা অপারগ। এবং বিজয়ন শিবিরের সন্দেহ, এই জটিলতা তৈরির নেপথ্যে আছেন খোদ ভিএস!
কোঝিকোড় আসন থেকে এ বার দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এ বিজয়রাঘবনকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্তে আগেই সিলমোহর দিয়েছে সিপিএমের কেরল রাজ্য কমিটি। পাশের আসন ভাটাকারার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল যুব নেতা এ এন সামশিরের নাম। ওই লোকসভা আসনের অন্তর্গত পাঁচটি বিধানসভা কেন্দ্র কোঝিকোড় জেলায়, বাকি দু’টি কান্নুরে। কোঝিকোড় জেলা কমিটি জানিয়ে দিয়েছে, জেলার দু’টি লোকসভা আসনেই ‘বাইরের লোক’কে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়! এই অবস্থায় দলের অন্দরে ভি এস রফাসূত্র দিয়েছেন, সিপিএমের মধ্যে যখন ঐকমত্য হচ্ছে না, কোঝিকোড়ের একটি আসন বাম শরিক, দেবগৌড়ার দল জেডি (এস)-কে দিয়ে দেওয়া হোক। সমস্যা মেটানোর জন্য আজ, বুধবার ফের বৈঠক ডাকা হয়েছে এলডিএফের। সিপিএমের এক পলিটব্যুরো সদস্যের কথায়, “কেরলে জাত্যাভিমান এমনিতেই প্রবল। সেখানে বাইরের জেলার লোক নিয়ে কিছু সমস্যা আছে। এখনও সব মেটেনি। তবে চেষ্টা জারি আছে।”
কোল্লম থেকে প্রার্থী হওয়ার কথা সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য এম এ বেবির। কিন্তু সেই আসনটিই চেয়েছিল আরএসপি। দাবিপূরণ না-হওয়ায় তারা রীতিমতো চুক্তিপত্রে সই করে কংগ্রেসের জোট ইউডিএফের শরিক হয়ে গিয়েছে! তাতে আরএসপি-র মধ্যে সঙ্কট গভীর। কিন্তু মুখ পুড়েছে সিপিএমের! পরে তারা কোল্লম এবং কোট্টায়ম, দু’টি আসন নিয়ে আলোচনা চালাতে উৎসাহী হলেও আরএসপি আর আগ্রহ দেখায়নি। লোকসভা ভোটের মুখে এমন অবাঞ্ছিত সমস্যা ডেকে আনা যে গোটা দেশেই বামেদের সম্পর্কে ভুল বার্তা দিচ্ছে, বুঝতে পারছেন আলিমুদ্দিনের নেতারাও। যে কারণে মঙ্গলবারই বঙ্গ সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠকে এক প্রাক্তন মন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছেন, আরএসপি-কে একটি আসন ছেড়ে দিলে কী অসুবিধা হতো? একই সুরে রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুও বৈঠকের অন্দরে মন্তব্য করেছেন, দলের অনেক কমরেডই মনে করেন ছেড়ে দিলেই হতো।
বড় দলকেই বেশি উদারতা দেখাতে হয় বলে যুক্তি দিয়ে বিমানবাবু ওই বৈঠকেই জানিয়েছেন, আসন্ন বিধানসভা উপনির্বাচনে বাম শরিক আরসিপিআই শান্তিপুর আসনে লড়ার দাবি না-ছাড়লে তাদের উপরে চাপাচাপি করা হবে না।
তবে এ সবের ঊর্ধ্বেও দলেই প্রশ্ন উঠছে, হঠকারী সিদ্ধান্ত নিতে দেখেও তামিলনাড়ু বা কেরলের রাজ্য নেতৃত্বকে কেন নিরস্ত করতে পারছেন না সাধারণ সম্পাদক কারাট? আলিমুদ্দিনের বৈঠকে উত্তরবঙ্গের এক নেতার মন্তব্য, যাতেই হাত দিচ্ছেন, ব্যর্থ হচ্ছেন কারাট!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy