Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ঢালাও আমলা-বদলি অন্য রাজ্যেও, বিতর্ক শুধু বাংলায়

এক ধাক্কায় ৪৪। তবু রা কাড়েননি অখিলেশ-মুলায়মেরা। ভোটের মুখে পাল্টে দেওয়া হল চেন্নাইয়ের পুলিশ কমিশনার ও এক ডিজি-কে। তার পরেও স্পিকটি নট আম্মা জয়ললিতা। একই ভাবে পুলিশের ডিজি বা জেলাশাসকদের বদলির পরেও মুখে কুলুপ পঞ্জাব-ওড়িশার। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার নির্বাচন কমিশনের নির্দেশকে যে ভাবে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে জটিলতা তৈরি করল, অন্য কোনও রাজ্যের ক্ষেত্রে তা হয়নি। সর্বত্রই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নবনিযুক্তরা দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৪ ০২:৪৭
Share: Save:

এক ধাক্কায় ৪৪। তবু রা কাড়েননি অখিলেশ-মুলায়মেরা। ভোটের মুখে পাল্টে দেওয়া হল চেন্নাইয়ের পুলিশ কমিশনার ও এক ডিজি-কে। তার পরেও স্পিকটি নট আম্মা জয়ললিতা। একই ভাবে পুলিশের ডিজি বা জেলাশাসকদের বদলির পরেও মুখে কুলুপ পঞ্জাব-ওড়িশার।

কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার নির্বাচন কমিশনের নির্দেশকে যে ভাবে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে জটিলতা তৈরি করল, অন্য কোনও রাজ্যের ক্ষেত্রে তা হয়নি। সর্বত্রই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নবনিযুক্তরা দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন।

কমিশনও বলছে এটাই দস্তুর। নির্বাচনের আগে প্রায় সব রাজ্যেই বিরোধীরা সেখানকার কিছু আমলার ভূমিকা নিয়ে নালিশ করে। কমিশন সেই সব অভিযোগ খতিয়ে দেখে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পরেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ বার যেমন বদলি করা হয়েছে উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা, পঞ্জাব, তামিলনাড়ু ও পশ্চিমবঙ্গ মিলিয়ে মোট ৬১ জন আমলাকে।

শুধু উত্তরপ্রদেশেই নির্বাচন কমিশন ৪৪ জন আমলাকে বদলি করেছে। বদলানো হয়েছে মুলায়ম সিংহ যাদবের নির্বাচনী কেন্দ্র মৈনপুরীর জেলাশাসককেও। এ ছাড়া, একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে বদলি হয়েছেন পঞ্জাব পুলিশের ডিজি সুমেধ সাইনি।

সোমবার দিল্লির ‘নির্বাচন সদন’ থেকে নবান্নে বার্তা পাঠিয়ে এক জেলাশাসক ও পাঁচ জেলার পুলিশ সুপারকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। বদলির তালিকায় দু’জন অতিরিক্ত জেলাশাসকও রয়েছেন। ওই দিনই নির্বাচন কমিশন চেন্নাইয়ের পুলিশ কমিশনার পদ থেকে এস জর্জকে সরিয়ে জে কে ত্রিপাঠীকে নিযুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। এ ছাড়া সেলম, ইরোড ও ভেলোরের জেলাশাসককেও বদলির নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। তামিলনাড়ুতে দিন কয়েক আগে ডিজি (নির্বাচন) পদ তৈরি করে প্রবীণ এক আইপিএস-কে বসানো হয়। একতরফা এই সিদ্ধান্তের জন্যই চেন্নাইয়ের সিপি-কে সরানো হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

ডিএমকে-র একটি অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার রাজ্য পুলিশের ডিজি (আইন-শৃঙ্খলা)-কে রামানুজনকে ভোটের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয় কমিশন। ডিএমকে নির্বাচন কমিশনকে জানায়, অবসরের পরে ‘এক্সটেনশন’-এ রয়েছেন রামানুজন। বর্ধিত মেয়াদে থাকা কোনও পুলিশ অফিসার ভোটের দায়িত্ব সামলাতে পারেন না।

মঙ্গলবার উত্তরপ্রদেশের ২২ জন জেলাশাসক, পুলিশের ৩ জন ডিআইজি এবং ১৯ জেলার এসপি-কেও বদলি করেছে নির্বাচন কমিশন। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন অফিসার উমেশ সিংহ জানিয়েছেন, সব জায়গায় নতুন আমলারা দায়িত্বও নিয়ে নিয়েছেন। বদলি হওয়া আমলাদের মধ্যে রয়েছেন দেওরিয়া, মহারাজগঞ্জ, মাহোবা, মউ, মেরঠ, সম্ভাল, সন্ত রবিদাস নগর, শোনভদ্রা, আমরোহা, বাহারিচ, বান্দা, চিত্রকূট, এটাওয়া, ফিরোজাবাদ, গোন্ডা, ঝাঁসি, কৌশাম্বি, ললিতপুর, প্রতাপগড়, রামপুর এবং শাহজাহানপুরের জেলাশাসক। যে ১৯ জেলার পুলিশ সুপারকে বদলি করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ফারুকাবাদ, গাজিয়াবাদ, সুলতানপুরও। দিন কয়েক আগে উত্তরপ্রদেশ ঘুরে নির্বাচন প্রস্তুতি খতিয়ে দেখেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ভি এস সম্পত। বিরোধীরা তাঁর কাছে বেশ কিছু নালিশ করেন। তার ভিত্তিতে খোঁজখবর নিয়েই এই আমলাদের বদলি করা হল। কমিশন সূত্রের খবর, শুক্রবার ওড়িশা যান সম্পত। তার পরে সেখানকার বিভিন্ন দলের অভিযোগের ভিত্তিতে তিন জেলাশাসক ও এক ডিআইজি-কে বদলি করা হয়।

অতীতে তৃণমূল যখন বিরোধী দলে ছিল, তখন ভোটের সময় বার বার বহু আমলার বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছিল তারা। সেই সব অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থাও নিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। সেই সব নির্দেশের বিরুদ্ধে সরবও হয়েছিল তৎকালীন শাসক পক্ষ বামফ্রন্ট। কিন্তু কমিশনের সঙ্গে তাদের সংঘাত কখনওই সাংবিধানিক সঙ্কটের দোরগোড়ায় পৌঁছয়নি। (সবিস্তার খবর পৃঃ ৬)

এ বার তৃণমূল সরকারের মারকুটে মূর্তি দেখে বেশ অবাক কমিশনের কর্তারা। মমতা আজ শেষ পর্যন্ত কমিশনের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু এই সংঘাতের আবহ রয়ে গেলে সুষ্ঠু ভাবে ভোট করাই কঠিন হবে বলে মনে করছেন তাঁরা। কিন্তু আমলাদের বদলি নিয়ে মমতা যে ভাবে প্রশ্ন তুলেছেন, তাকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি কংগ্রেস ও বিজেপি। দু’দল একই সুরে বলেছে, কমিশনের সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে।

সিপিএম বলছে, মাটি ঢিলে হচ্ছে বলেই ‘বিদ্রোহিনী’ সাজতে হচ্ছে মমতাকে। দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নীলোৎপল বসু বলেন, “সর্বত্র যদি বিপুল জয়ের সম্ভাবনাই থাকে, তা হলে দু’চার জন অফিসারের বদলি নিয়ে তাঁর এত উত্তেজনা কেন!” আর কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীর কথায়, “মমতা মাওবাদীদের মতো কথা বলছেন। পায়ের তলায় মাটি সরছে দেখে তিনি হতাশায় ভুগছেন। তাই কমিশনকে আক্রমণ করে দেখাতে চাইছেন এ যেন দিল্লির বিরুদ্ধে বাংলার বিদ্রোহ! কিন্তু মানুষ এত বোকা নন।”

যার পাল্টা তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব বলছেন, প্রশাসন না চালিয়ে এ রকম আলটপকা অনেক মন্তব্যই করা যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

election commission votebadyi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE