কলকাতা ও আগরতলা থেকে ঢাকায় যাচ্ছে বাস। মেঘালয়ের দউকি ছুঁয়ে গুয়াহাটি-ঢাকার মধ্যে বাস চলাচলের প্রস্তুতি চলছে। এ বার সে সবের মতো শিলচর থেকে সিলেট পর্যন্ত ওই পরিষেবা শুরুর দাবি উঠল।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, গত মাসে শিলচরে ভারত-বাংলাদেশের জেলাশাসক পর্যায়ের বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে পড়শি রাষ্ট্রে গিয়ে সিলেটের জেলাশাসককে এ নিয়ে উদ্যোগী হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন বরাকের প্রতিনিধি দল।
দক্ষিণ অসমে কাছাড় ও করিমগঞ্জের পাশে বাংলাদেশের সীমান্ত রয়েছে। দেশভাগের সময় সিলেটের অনেক বাসিন্দা সীমান্তের এ পারে এসেছেন। মাতৃভূমির টানে তাঁরা নিয়মিত সে দেশে যান। আসেন ও পারের বাসিন্দারাও। বৈদেশিক বাণিজ্যও চলে সুতারকান্দি ট্রেড সেন্টার দিয়ে। সে দিকে তাকিয়ে বাস পরিষেবার দাবি জোরাল হয়েছে। সিলেট ও শিলচরের সড়কপথে দুরত্ব ১১৪ কিমি। কিন্তু সরাসরি বাস চালু না থাকায় সমস্যায় পড়েন যাত্রীরা।
এখানেও বরাক বঞ্চনার ছবি। রাজ্য সরকারের তরফে এ নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠছে। শিলচরের ‘ভাষাশহিদ স্মরণ সমিতি’ সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে গিয়ে সিলেটের জেলাশাসক মহম্মদ শহিদুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করেন। শিলচর-সিলেট রুটে বাস চালুর বিষয়ে তাঁকে তৎপর হওয়ার অনুরোধ জানান। সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাজীব কর জানান, এ নিয়ে বাংলাদেশের সরকারি কর্তার আশ্বাস মিলেছে। তাঁরা এখন কেন্দ্র ও অসম সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাবেন। ইন্দো-বাংলা মৈত্রী সমিতির শুভদীপ দত্ত বলেন,“এখন সিলেট পর্যন্ত বাস চালু হলে, পরে শিলচর থেকে ঢাকা হয়ে কলকাতা পর্যন্ত বাস পরিষেবা শুরু হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ১৬ ঘণ্টায় এখান থেকে কলকাতা পৌঁছনো যাবে। এখন ২-৩ দিন সময় লাগে।” গত মাসে ভারতের কাছাড়, করিমগঞ্জ ও বাংলাদেশের সিলেট ও মৌলবীবাজারের জেলাশাসক শিলচরে বৈঠক করেছিলেন। তখন সিলেটের জেলাশাসক জানান, ছ’মাস পর পরবর্তী বৈঠকে শিলচর থেকে সিলেট পর্যন্ত বাস পরিষেবা নিয়ে আলোচনা করা হবে।
এ দিকে, গত বছর ১০ ডিসেম্বর পরীক্ষামূলক ভাবে গুয়াহাটি-শিলং-সিলেট-ঢাকা বাস পরিষেবা চালু হয়। কিন্তু রাস্তা খারাপ থাকায় সে দিন অসম রাজ্য পরিবহণ নিগমের ৩২-আসনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস উমিয়ামের আগে এগোতে পারেনি। সওয়ারিরা পরে ছোট বাস, গাড়িতে বাংলাদেশের দিকে যান। তাঁদের মধ্যে ছিলেন কেন্দ্র, রাজ্য ও মেঘালয়ের বিভিন্ন দফতর এবং বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা। বাস পরিষেবা চালু হলে সকালে গুয়াহাটি থেকে রওনা দিয়ে রাত ১০টার মধ্যে ঢাকা পৌঁছবেন যাত্রীরা। কিন্তু কবে পরিষেবা চালু হবে, তা নিয়ে ধন্দ কাটছে না।
ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা জানিয়েছিলেন, মাস দু’য়েকের মধ্যে পরিষেবা চালু হবে। কিন্তু, বাস চালানোর দায়িত্বপ্রাপ্ত এএসটিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, দুর্গম ওই রাস্তায় বড় বাস চালানো অসম্ভব। ছোট বাস চালানো হলেও, দউকিতে উমগত নদীর উপরে ১৩৬ মিটার দীর্ঘ ইংরেজ আমলের ‘সাসপেনসন’ সেতু দিয়ে সেটি যেতে পারবে না। ২০০৯ সালে ওই সেতু নতুন করে তৈরি করতে শিলান্যাস করা হয়। সেই কাজ ২০১১ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ ও জাতীয় সড়ক মন্ত্রকের এক ইঞ্জিনিয়ার জানান, দউকি সেতুটি নতুন করে তৈরির কাজ দ্রুত শুরু হবে।
এএসটিসি-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর খগেন্দ্রনাথ চেতিয়া বলেন, “দউকি পর্যন্ত রাস্তা ঠিক করতে ২৫০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সেখানে রাস্তা তৈরি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।” ফিকির উত্তর-পূর্ব উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান রঞ্জিৎ বরঠাকুরের মতে, ঢাকা পর্যন্ত যাত্রী ও পণ্য চলাচল পুরোদমে চালু হলে এই অঞ্চলের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নতি হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy