ইঞ্জিন খারাপ হওয়া থেকে শুরু করে পচা খাবার। গত ১৫ দিনে নানান বিপত্তিতে কয়েক বার ভুগতে হয়েছে ট্রেনযাত্রীদের। রবিবারেও তার ব্যতিক্রম হল না। এ দিন ভোরে পয়েন্ট ভেঙে লাইনচ্যুত হল মুড়ি-চন্দ্রপুরা-ধানবাদ প্যাসেঞ্জার। বোকারো স্টেশনের কাছে ওই দুর্ঘটনায় কেউ হতাহত না-হলেও প্রায় সারা দিনই ব্যাহত হয় ট্রেন চলাচল।
দুর্ঘটনার পরে রেলকর্তারা জানান, ট্রেনের গতি বেশি হলে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। লাইনচ্যুত হয়ে ট্রেনটির ইঞ্জিন-সহ পাঁচটি কামরা পাশের লাইনে এসে পড়ায় ওই শাখার আপ ও ডাউন দু’টি লাইনই ছিল বন্ধ। ফলে ভুবনেশ্বর রাজধানী এক্সপ্রেস-সহ বেশ কিছু ট্রেনকে ঘুরপথে চালাতে হয়েছে।
যে-লাইনে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার পাশের লাইনেই আসছিল পটনা-হাতিয়া প্যাসেঞ্জার। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনের চালক ও সহকারী চালক ইঞ্জিন থেকে নেমে পাশের লাইনের ট্রেনের চালককে লাল সিগন্যাল দেখিয়ে থামান। ওই ট্রেনটি এসে পড়লে লাইনে পড়ে থাকা কামরায় ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনা আরও ভয়াবহ হতে পারত বলে জানাচ্ছেন রেলকর্তারাই।
গত সপ্তাহেই প্রতিটি রেলের জেনারেল ম্যানেজার ও ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজারদের দিল্লিতে ডেকে কাজের ব্যাপারে কোনও আপস করা হবে না বলে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন রেলমন্ত্রী সদানন্দ গৌড়া। তার পাঁচ দিনের মধ্যেই, রবিবার ভোরে বোকারোর কাছে যে-দুর্ঘটনা ঘটল, তাতে রেলের রক্ষণাবেক্ষণের গাফিলতি ফের বেআব্রু হয়ে গেল।
এ দিনের দুর্ঘটনার জন্য পয়েন্টের ত্রুটির দিকেই আঙুল উঠছে। ভোরে বোকারোর কাছে লাইনচ্যুত হয় মুড়ি-ধানবাদ প্যাসেঞ্জারের ইঞ্জিন-সহ পাঁচটি কামরা। রেল সূত্রের খবর, প্রাথমিক তদন্তের পরে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে ‘পয়েন্ট’-এর ত্রুটিই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। একটি লাইন থেকে অন্য লাইনে ট্রেন নিয়ে যাওয়ার জন্য পয়েন্টের ব্যবহার করা হয়। কেবিন থেকে পয়েন্টের লিভার টেনে দিলেই ট্রেন এক লাইন থেকে অন্য লাইনে পাঠিয়ে দেওয়া যায়। যে-লিভার দিয়ে লাইন পাল্টানো অর্থাৎ ‘পয়েন্ট’ পাল্টানো হয়, সেই যন্ত্রের একটি লোহার একটি দণ্ড ভেঙে যাওয়াতেই এ দিন দুর্ঘটনা ঘটেছে। কী ভাবে বিপত্তি ঘটল, জানতে তদন্ত শুরু করেছেন রেলের সেফটি কমিশনার ।
এই নিয়ে এক মাসে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটল দক্ষিণ-পূর্ব রেলে। তিন দিন আগেই বাঁকুড়ার কাছে রেললাইনের প্যান্ড্রোল ক্লিপ খুলে যায়। এ বার আদ্রা ডিভিশনের বোকারোয় লাইনচ্যুত হল প্যাসেঞ্জার ট্রেন। খবর পেয়েই উদ্ধারকারী ট্রেন নিয়ে ঘটনাস্থালে চলে যান দক্ষিণ-পূর্ব রেলের কর্তারা। নিয়ে আসা হয় ক্রেনও। লাইনচ্যুত কামরাগুলিকে লাইনে বসাতে সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোর ৬টা নাগাদ বোকারো ও রাধাগাঁও স্টেশনের মধ্যে ‘এ’ কেবিনের সামনে লাইনচ্যুত হয় ট্রেনটি। ট্রেনটির ইঞ্জিন-সহ দু’টি কামরা লাইন থেকে সরে গিয়ে পড়ে পাশের ডাউন লাইনে। অন্য দু’টি কামরা পড়ে আপ লাইনে। দুই লাইনেই ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রেলের খবর, বোকারো স্টেশনের কাছে ‘এ’ কেবিনের অদূরে ১৬ নম্বর পয়েন্টের লোহার দণ্ডটি (টাং রেল) ভেঙে যায়। তার জেরে পয়েন্ট ঠিকমতো ‘সেট’ না-হওয়াতেই দুর্ঘটনা ঘটে। লোহার দণ্ডটি ইঞ্জিনের চাপে ভেঙেছে, নাকি আগে থেকেই ভাঙা ছিল, তা নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তকারীরা ওই দণ্ডটি পরীক্ষা করবেন। বিষয়টি রেলের সিগন্যাল ও টেলিকম দফতরের অধীন। রেললাইন এবং ওই যন্ত্রগুলি ঠিক আছে কি না, তা খতিয়ে দেখাটা রেললাইন পরীক্ষার ইনস্পেক্টরদের (পিডব্লিউআই) কাজের মধ্যে পড়ে। তা ঠিকমতো না-হওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে একাংশের অভিমত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy