মহিলা কমিশনের দফতরে সোমা ও বুধনি। রাঁচিতে।—নিজস্ব চিত্র।
বেঁচে থাকতে মা, পরে স্ত্রী পরিবারের দু’জনকে গ্রামের লোকজন ডাইনি অপবাদ দেওয়ায় নাজেহাল ঝাড়খণ্ডের প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দা সোমা কাশ্যপ।
অভিযোগ, গ্রামের মোড়ল ফরমান দিয়েছেন, ২ লক্ষ টাকা না-দেওয়া হলে পিটিয়ে মারা হবে সোমার স্ত্রী বুধনিকে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে না-পেলে টাকার পরিমাণ দ্বিগুণ হবে। এই পরিস্থিতিতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঘরছাড়া পেশায় রাজমিস্ত্রি সোমা। স্ত্রীর প্রাণ বাঁচাতে তিনি দ্বারস্থ রাজ্য মহিলা কমিশনের।
খুঁটির আওতা গ্রামে বসবাস কাশ্যপ পরিবারের। হঠাৎ সোমার মায়ের নামে ডাইনি অপবাদ ছড়ায়। প্রতিবেশীর কটূক্তি শুনতে হত। প্রাণনাশের হুমকিও ছিল। বাঁচার জন্য জমি বিক্রি করে পঞ্চায়েতকে টাকা দিতেন সোমারা। কয়েক মাস আগে বুধনির সঙ্গে বিয়ে হয় সোমার। সব কিছু ঠিকঠাক চলছিল। ছবিটা বদলায় গ্রামের এক অসুস্থ কিশোরীর মৃত্যুর পর। সোমা, বুধনি মহিলা কমিশনে জানান, পড়শি বাড়ির মেয়েটির জন্ডিস হয়। মৃত্যুর পর গ্রামে খবর রটানো হয় বুধনি ডাইনি। তাঁর নজর লেগেই মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে। মোড়ল কাশ্যপদের ডেকে পাঠান।
সোমা জানান, সেখানেই তাঁকে বলা হয়, টাকা না-পেলে পিটিয়ে মারা হবে বুধনিকে। অভিযোগ, গ্রামের মোড়ল অমৃত তিরুর চক্রান্তেই এ সব হয়েছে। সোমার কথায়, “মাকেও ডাইনি সাজানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। ওঁকে বাঁচানোর জন্য কখনও জমি লিখে দিয়েছি, কখনও জমি বন্ধক রেখে পঞ্চায়েতকে টাকা দিয়েছি।” মহিলা কমিশন জানায়, এ রাজ্যে ডাইনি অপবাদে খুনের একাধিক ঘটনা ঘটেছে। কখনও ‘ব্ল্যাক-মেল’ করতেও এ ধরনের গুজব ছড়ানো হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গ্রামের ক্ষমতাবান কয়েক জন লোক এ সব কাজে জড়িত থাকে। ঝাড়খণ্ড আদিবাসী অধ্যুষিত রাজ্য। মহিলা কমিশনের বক্তব্য, সাধারণ ভাবে গ্রামে কিছুটা জমি-সম্পত্তির মালিক, লোকবল কম থাকা কোনও মহিলার নামেই ডাইনি অপবাদ ছড়ানো হয়। অনেক সময়ই তাঁদের খুন করে জমি, সম্পত্তি দখল করে ষড়যন্ত্রকারীরা। এ নিয়ে পদক্ষেপ করতে জেলা পুলিশকে অনুরোধ জানিয়েছে কমিশন। খুঁটির এসপি অনীশ গুপ্ত বলেন, “অভিযুক্ত পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে এফআইআর করতে বলেছেন। অভিযোগকারিণী এখনও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তিনি চাইলে পুলিশের তরফে নিরাপত্তাও পেতে পারেন।” কমিশনের চেয়ারপার্সন মহুয়া মাঁজি বলেন, “আরও কয়েকটি ঘটনার খোঁজ পেয়েছি। পুলিশ কী ব্যবস্থা নেয় তা দেখব। প্রয়োজনে গ্রামে গ্রামে আদালত বসিয়ে সমস্যার সমাধান করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy