Advertisement
E-Paper

জন-ধনের রেকর্ড গড়ল প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্প

ঘোর কাটতে বেশ কিছুটা সময় লাগল জাহানারা বিবির। ১২ বছর হয়ে গেল দক্ষিণ দিনাজপুরের বালিহারা গ্রাম থেকে চলে এসেছেন গুড়গাঁওয়ে। স্বামী মজিদুর রহমান রাজমিস্ত্রি। সংসার চালাতে কয়েক বাড়ি রান্না করতে হয় জাহানারাকে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার কথা জন্মেও ভাবেননি। দিন কয়েক আগে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের ক্যাম্প দেখে অন্যদের সঙ্গে তিনিও ব্যাঙ্কের খাতা খুলতে চলে গিয়েছিলেন। সেই ব্যাঙ্কের পাস বই, ডেবিট কার্ড, অন্যান্য কাগজপত্র যে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁদের হাতে তুলে দেবেন, তা স্বপ্নেও ভাবেননি।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাহানারা বিবি এবং মজিদুর রহমান। ছবি: রাজেশ কুমার।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাহানারা বিবি এবং মজিদুর রহমান। ছবি: রাজেশ কুমার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৪ ০৩:২৮
Share
Save

ঘোর কাটতে বেশ কিছুটা সময় লাগল জাহানারা বিবির।

১২ বছর হয়ে গেল দক্ষিণ দিনাজপুরের বালিহারা গ্রাম থেকে চলে এসেছেন গুড়গাঁওয়ে। স্বামী মজিদুর রহমান রাজমিস্ত্রি। সংসার চালাতে কয়েক বাড়ি রান্না করতে হয় জাহানারাকে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার কথা জন্মেও ভাবেননি। দিন কয়েক আগে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের ক্যাম্প দেখে অন্যদের সঙ্গে তিনিও ব্যাঙ্কের খাতা খুলতে চলে গিয়েছিলেন। সেই ব্যাঙ্কের পাস বই, ডেবিট কার্ড, অন্যান্য কাগজপত্র যে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁদের হাতে তুলে দেবেন, তা স্বপ্নেও ভাবেননি।

আজ কিন্তু সেটাই ঘটল। সকলের জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বা ‘প্রধানমন্ত্রী জন-ধন যোজনা’-র সূচনা করে আজ নরেন্দ্র মোদী যে পাঁচ দম্পতির হাতে নতুন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের কাগজপত্র তুলে দিলেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন জাহানারা-মজিদুরও। দৃশ্যতই বিহ্বল জাহানারা বললেন, “গাড়ি করে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিয়ে এসেছে। আবার গাড়ি করে বাড়ি পৌঁছে দেবে। এই ভাবে নম্বর লেগে যাবে, ভাবিনি।”

জাহানারা-মজিদুরদের মতো অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়ে এই ‘আর্থিক অস্পৃশ্যতা’ দূর করার ডাকই আজ দিলেন নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী জন-ধন যোজনাকে তিনি আখ্যা দিয়েছেন ‘বিষচক্র থেকে গরিবদের স্বাধীনতার পর্ব’।

একটি রাজনৈতিক বার্তাও দিয়েছেন মোদী। তা হল, “১৯৬৯ সালে ব্যাঙ্ক জাতীয়করণের লক্ষ্য ছিল আম জনতাকে অর্থনীতির মূলস্রোতে নিয়ে আসা। সেই লক্ষ্য পূরণ হয়নি। স্বাধীনতার ৬৮ বছর পরেও ভারতের জনসংখ্যার ৬৮ শতাংশেরও ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট নেই।” এই মন্তব্যের নিশানা যে গাঁধী পরিবার, তা স্পষ্ট। ব্যাঙ্কের জাতীয়করণ করেছিলেন ইন্দিরা গাঁধী। গাঁধী পরিবার ও কংগ্রেস নেতৃত্ব যে ইন্দিরার লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি, ঘুরিয়ে সেই খোঁচাই আজ দিয়েছেন মোদী।

তাঁর সরকারের প্রথম বড় প্রকল্প এই প্রধানমন্ত্রী জন-ধন যোজনা। তার শুরুটা বড় মাপেরই করতে চেয়েছিলেন মোদী। তাঁর নিজের দাবি, সেই লক্ষ্যে তিনি সফল। প্রথম দিনেই বহু রেকর্ড তৈরি হয়েছে। হিসেব অনুযায়ী, দেশের ১০ কোটি পরিবার এখনও ব্যাঙ্কের পরিষেবার বাইরে। পরিবার পিছু দু’জনকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া হবে বলে ১৫ অগস্ট লাল কেল্লা থেকে ঘোষণা করেছিলেন মোদী। প্রথমে ঠিক হয়েছিল, এক বছরের মধ্যে সাড়ে ৭ কোটি পরিবারকে ব্যাঙ্কের পরিষেবার আওতায় নিয়ে আসা হবে। কিন্তু মোদী বলেন, এক বছরও সময় তিনি দিতে পারবেন না। এক বার জাতীয় পতাকা উত্তোলন থেকে আর এক বার পতাকা উত্তোলনের মধ্যেই এই কাজ সেরে ফেলতে হবে। অর্থাৎ আগামী বছরের ২৬ জানুয়ারির আগে, পাঁচ মাসের মধ্যেই এই সাড়ে ৭ কোটির লক্ষ্য ছুঁতে হবে।

ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে উৎসাহ দিতে অর্থ মন্ত্রক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, নতুন অ্যাকাউন্টের সঙ্গে এক লক্ষ টাকার দুর্ঘটনা বিমা দেওয়া হবে। আজ নরেন্দ্র মোদী তাতে আরও উপহার যোগ করেছেন। এক লক্ষ টাকার দুর্ঘটনা বিমার সঙ্গে ৩০ হাজার টাকার জীবন বিমা। মোদীর ঘোষণা, যাঁরা ২৬ জানুয়ারির আগে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলবেন, তাঁদেরই এই সুযোগ দেওয়া হবে।

অর্থ মন্ত্রকের পরিকল্পনা ছিল, আজ শুরুর দিনে দেশ জুড়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি শিবির খুলবে। প্রথম দিনেই এক কোটি অ্যাকাউন্ট খোলা হবে। দিনের শেষে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জানিয়েছেন, ৭৭ হাজারেরও বেশি জায়গায় আজ নতুন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খেলার কাজ হয়েছে। এক কোটি নয়, এক দিনে দেড় কোটি নতুন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে আজ। মোদী বলেন, “এটাও একটা রেকর্ড। বিমা সংস্থাগুলি জন্মাবধি এক বছরে দেড় কোটি মানুষের বিমা করেনি। ব্যাঙ্কগুলোও এক দিনে দেড় কোটি নতুন খাতা খোলেনি।” দিল্লির পাশাপাশি সব রাজ্যের রাজধানীতেও আজ অনুষ্ঠান করে সূচনা হয় প্রধানমন্ত্রী জন-ধন যোজনার। কলকাতায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রী নাজমা হেপতুল্লা।

নয়াদিল্লির বিজ্ঞান ভবনে নরেন্দ্র মোদী সরকারের প্রথম বড় মাপের এই অনুষ্ঠানে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। বিদেশি কূটনীতিকরা ভিড় করে এসেছিলেন। সরকারি ও বেসরকারি ব্যাঙ্কের প্রধানরাও ছিলেন। তাঁদের উদ্দেশে মোদী বলেন, “আপনারা হয়তো অনেক কোটিপতির অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। কিন্তু যে মহিলা টাকা জমিয়ে বাড়িতে লুকিয়ে রাখার জায়গা খুঁজে পান না, তাঁদের আশীর্বাদ কখনও পাননি।” নতুন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার পর ছয় মাস খতিয়ে দেখে সেখানে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত ওভার-ড্রাফ্ট বা ঋণ নেওয়ার সুবিধা পাওয়া যাবে। মোদী বলেন, “গরিবরা কখনও ঋণ না মিটিয়ে বসে থাকেন না। মহিলারা ঋণ নিলে তো অবশ্যই মিটিয়ে দেন। কোটিপতিরা কী করেন, তা আমি জানি।” মোদীর বক্তব্য, ব্যাঙ্কগুলি কর্পোরেট সংস্থার সঙ্গে ব্যবসা করার জন্য লাইন দেয়। তাদের কম সুদে ধার দেয়। অথচ যে গরিব মানুষের কম সুদে ঋণ দরকার, তাকে মহাজনের কাছে পাঁচ গুণ বেশি সুদে ঋণ নিতে হয়। তার পর ঋণের বোঝায় আত্মহত্যার পথও খুঁজতে হয়। তাঁদের ওই বিষচক্র থেকে মুক্তি দিতেই এই নতুন প্রকল্প। মোদী বলেন, “গরিব মানুষের হাতে যেমন মোবাইল ফোন এসেছে, তাঁদের হাতে এ বার ডেবিট কার্ডও থাকবে।”

jan dhan yojana narendra modi bank account

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}