কাশ্মীর সীমান্তে এই যুদ্ধ পরিস্থিতি নতুন নয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বক্তব্য, সাধারণত জঙ্গি ঢোকাতেই এ ভাবে গুলি চালাত পাক সেনা। কিন্তু এত দিন তা হত গরম কালে। এ বার শীতের সময়েও যে ভাবে পাক বাহিনী হামলা চালাচ্ছে, তা কিছুটা নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন নয়াদিল্লি। কুর্সিতে বসার পরে ইতিবাচক বার্তা দিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে দিল্লিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মোদী। দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়ুক, এটাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে শান্তি বজায় থাকলে সামগ্রিক ভাবে জাতীয় অর্থনীতিতে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে, এটা বিশ্বাস করেন মোদী। কারণ তাঁর বিদেশনীতির মূল মন্ত্রই হল অর্থনীতি। কিন্তু এখন যখন লাগাতার হামলা শুরু হয়েছে, তার জবাবে পাকিস্তানের প্রতি কড়া মনোভাব নেওয়ার প্রশ্নেও পিছু হটছেন না মোদী। আগের সরকারের নরম মনোভাবের পরিবর্তে সীমান্তে পাল্টা জবাব দেওয়ার নীতি গ্রহণ করেছেন তিনি। রাজনৈতিক শিবিরের মতে তাঁর এই কড়া নীতি নিঃসন্দেহে খুশি করবে সঙ্ঘ পরিবারকেও।
কাশ্মীর সীমান্ত ছাড়া সমুদ্রপথেও পাকিস্তান ভারতে জঙ্গি ঢোকাতে চাইছে বলে আজ দাবি করেছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পর্রীকর। ৩১ ডিসেম্বর রাতে সেই ট্রলারে সত্যিই জঙ্গিরা ছিল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল কংগ্রেস। আজ পর্রীকর এ বিষয়ে প্রথম মুখ খোলেন। তিনি বলেন, “আমি কোনও জল্পনা উস্কে দিতে চাই না। শুধু কয়েকটা বিষয়ের উপর জোর দিতে চাই।” কোন বিষয়? প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর দাবি, “ট্রলারে যদি মাদক থাকত, দুষ্কৃতীরা আত্মহত্যা করত না। মাদক জলে ফেলে দিয়ে আত্মসমর্পণ করত।” তাঁর আরও যুক্তি, চোরাকারবারিরা অন্যান্য মাছ ধরার ট্রলারের ভিড়ে মিশে থাকার চেষ্টা করে। কিন্তু আরব সাগরের যে এলাকায় ওই ট্রলারটি ঘুরছিল, সেখানে কোনও মাছ ধরার ট্রলার আসে না। তা ছাড়া, গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ট্রলার থেকে তাইল্যান্ডের এক ব্যক্তির মাধ্যমে করাচিতে সেনাবাহিনী ও নৌ-অফিসারদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছিল। প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর প্রশ্ন, কোনও চোরাকারবারি কেন পাক সেনার সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে? তিনি বলেন, সন্দেহজক ট্রলারটি ধাওয়া করার বারো ঘণ্টা আগে থেকে সেটির উপর নজর রাখছিল ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী। সে দিনের ঘটনার সম্পূর্ণ বিবরণ ও ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনীর হাতে আসা তথ্য-প্রমাণ দিন চারেকের মধ্যেই প্রকাশ করা হবে বলে জানান পর্রীকর। এর মধ্যেই আবার পাকিস্তানকে বিপুল পরিমণ আর্থিক অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। ট্রলার-কাণ্ডের ঠিক পরের দিনই মার্কিন সেনেট ওই আর্থিক অনুদান সংক্রান্ত বিলটি পাশ করে। আমেরিকা প্রতি বছর পাকিস্তানকে দেড় বিলিয়ন ডলার অর্থ সাহায্য করবে। যে অর্থ ব্যবহার হওয়ার কথা আল-কায়দা, তালিবান বা লস্করের মতো জঙ্গি সংগঠন ধ্বংস করার কাজে। শুধু তাই নয়। পাকিস্তানের ঢালাও প্রশংসা করেছেন মার্কিন বিদেশ সচিব জন কেরি জানিয়েছেন, পাকিস্তান জঙ্গি দমনে আন্তরিক। সে দেশের মাটিতে সন্ত্রাসবাদী পরিকাঠামো দমনে দীর্ঘমেয়াদি দায়বদ্ধতা ও উল্লেখযোগ্য প্রয়াস নিচ্ছে ইসলামাবাদ।
ভারতের দাবি ঠিক উল্টো। নয়াদিল্লির বক্তব্য, নিজের দেশে নাশকতার শিকার হওয়া সত্ত্বেও ইসলামাবাদ এখনও জঙ্গিদের মদত দিয়ে যাচ্ছে। মুম্বই হামলার মূল অভিযুক্ত জাকিউর রহমান লকভির জামিন পাওয়া থেকেই তা স্পষ্ট। মার্কিন সহায়তা নিয়ে কটাক্ষ করে আজ বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরউদ্দিন বলেন, আমেরিকার করদাতাদের অর্থ মার্কিন প্রশাসন কী ভাবে খরচ করবে তা তাদের ব্যাপার। কিন্তু যে ভাবে জঙ্গি কাঠামো ধ্বংস করার বিষয়ে মার্কিন প্রশাসন ইসলামাবাদকে ঢালাও শংসাপত্র দিয়েছে, তা আদপেই ঠিক নয়। ভারত মনে করে না যে লস্কর-ই-তইবা, জইশ-ই-মহম্মদ, হক্কানি নেটওয়ার্ক বা আল-কায়দার সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের ভিত আদৌও পাকিস্তান ধ্বংস করেছে। নয়াদিল্লি এ-ও মনে করে না যে, সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসলামাবাদের কোনও দীর্ঘমেয়াদি দায়বদ্ধতা রয়েছে। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাতে’ যোগ দিতে যখন কেরি আসবেন তখন এ বিষয়ে ভারতের অসন্তোষ তাঁকে স্পষ্ট জানাবেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত বিরোধী সন্ত্রাসে ইসলামাবাদের ভূমিকা নিয়েও বিশদে ব্যাখ্যাও করা হবে কেরির কাছে।