Advertisement
E-Paper

চারপাশে আর্তনাদ, কাসভের গুলিতে চোখের সামনে লুটিয়ে পড়ল ওয়ালু…

২৬ নভেম্বর, ২০০৮। মুম্বইয়ে ঢুকে পড়েছিল ১০ জঙ্গি। একের পর এক জায়গায় তাণ্ডব চালাতে চালাতে এগিয়ে আসছিল। সেই রাতেই হাসপাতালে দায়িত্বেছিলেন কৈলাস। আজমল কাসভরা তত ক্ষণে ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাসে ৫২ জনকে খুন করে হাসপাতাল চত্বরে ঢুকে পড়েছিল।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৮ ১৩:২৪
২৬/১১ মুম্বই হামলার মোকাবিলায় পুলিশ। ফাইল চিত্র।

২৬/১১ মুম্বই হামলার মোকাবিলায় পুলিশ। ফাইল চিত্র।

মুহুর্মুহু গুলির আওয়াজ ভেসে আসছিল। আওয়াজটা আসছিল হাসপাতালের খুব কাছ থেকেই। তবে কি আবার গ্যাংওয়ার শুরু হল!এমনটাই ভেবেছিলেন কামা অ্যান্ড অ্যালব্লেস হাসপাতালের কর্মী কৈলাস ঘেঘারমল। তবে আসল ব্যপারটা বুঝতে খুব একটা সময় লাগেনি তাঁর।

২৬ নভেম্বর, ২০০৮। মুম্বইয়ে ঢুকে পড়েছিল ১০ জঙ্গি। একের পর এক জায়গায় তাণ্ডব চালাতে চালাতে এগিয়ে আসছিল। সেই রাতেই হাসপাতালে দায়িত্বে ছিলেন কৈলাস। আজমল কাসভরা তত ক্ষণে ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাসে ৫২ জনকে খুন করে হাসপাতাল চত্বরে ঢুকে পড়েছিল।

দূর থেকেই সশস্ত্র কয়েক জনকে দেখতে পেয়ে ভয়ে শিউরে উঠেছিলেন কৈলাস। কৈলাসের ভুলটা ভেঙেছিল তখনই। না,কোনও গ্যাংওয়ার নয়, জঙ্গি হামলা হয়েছে!সঙ্গে সঙ্গে এক ওয়াচম্যানকে নিয়ে হাসপাতালের বিভিন্ন গেট বন্ধ করতে দৌড়ান। কাসভরা তখন হাসপাতালে মূল বিল্ডিংয়ের পিছনে ছিল।

চোখের সামনেই ওয়ালুকে গুলি করল কাসভরা। এর পর কি আমার পালা? ওয়ালুকে লুটিয়ে পড়তে দেখেছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে একটা গাছের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে ফেলেছিলাম। দেখলাম মাত্র ১০ ফুট দূর দিয়ে মূল বিল্ডিংয়ের দিকে হেঁটে যাচ্ছে জঙ্গিরা। প্রত্যেকের হাতে একে ৪৭। সঙ্গে আরও অস্ত্রশস্ত্র।” সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে এমনটাই বলেন কৈলাস।

আরও পড়ুন: ‘আপনারা জিতে গেলেন, আমি হেরে গেলাম’, ফাঁসির আগে বলে কাসভ

ওয়ালু-কে চোখের সামনে মরতে দেখা। তার পরই আরও পর পর কয়েকটা গুলির আওয়াজ। গাছের আড়াল থেকে এ বার কৈলাস দেখলেন মূল বিল্ডিংয়ের লাঠিধারী ওয়াচম্যান ভানু নরকরকে গুলি করল জঙ্গিরা। গুলিটা চালিয়েছিল কাসভই।

জঙ্গি হামলার খবর চাউর হতেই হাসপাতালে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু প্রতিরোধ করার আগেই হাসাপাতালের মূল বিল্ডিংয়ে ঢুকে এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে রোগী, তাঁদের আত্মীয়, হাসপাতালের কর্মীদের নির্মম ভাবে হত্যা করে জঙ্গিরা।

হাসপাতালে হামলার খবর পেয়ে তত ক্ষণে পুলিশ সেখানে হাজির হয়। পুলিশকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যান কৈলাসই। বিল্ডিংয়ের সাত তলায় পৌঁছন তাঁরা। সেখানে যেতেই জঙ্গিদের সঙ্গে তুমুল গুলির লড়াই শুরু পুলিশের। বেশ কিছু ক্ষণের লড়াইয়ে দুই পুলিশকর্মী নিহত হন। কৈলাস এবং আইপিএস অফিসার সদানন্দ দাতে আহত হন।

আরও পড়ুন: ২৬/১১? আমার দ্বিতীয় জন্মদিন, তবে এ দিনটা সেলিব্রেট করা যায় না

আরও পড়ুন: ২৬/১১-র হামলাকারীদের সম্পর্কে তথ্য দিলেই ৩৫ কোটি পুরস্কার, ঘোষণা আমেরিকার

ওই দিন শিশু বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন নার্স মীনাক্ষি মুসালে এবং অস্মিতা চৌধরি। হাসপাতালে জঙ্গিরা হামলা চালিয়েছে, খবরটা পৌঁছেছিল তাঁদের কাছেও। এক মুহূর্ত দেরি না করেশিশু বিভাগের সব দরজা বন্ধ করতে শুরু করেন। হাতের সামনে যা ছিল, চোয়ার টেবিল, ফ্রিজ, ট্রলি, এমনকি এক্স-রে মেশিনও ব্যবহার করেছিলেন দরজা বন্ধ করতে। যাতে জঙ্গিরা কোনও ভাবেই ওই ঘরে ঢুকতে না পারে। শিশু বিভাগের দায়িত্বে থাকা সুনন্দ চহ্বাণ বলেন, “শিশু ও তাদের মায়েদের বাঁচানোটা আমাদের কর্তব্য। গুলি থেকে বাঁচাতে ঘরের দেওয়াল ঘেঁষে বাচ্চাগুলোকে শুইয়ে রাখা হয়েছিল।”

সেই ঘটনার পর কেটে গিয়েছে দশ-দশটা বছর। সে দিনের হামলার অন্যতম ধৃত জঙ্গি কাসভের ফাঁসি হয়ে গিয়েছে। সেই ঘটনার পর আরব সাগরে অনেক জোয়ার ভাটা খেলেছে। স্বাভাবিক ব্যস্ততার মধ্যে ডুবে গিয়েছে বাণিজ্যনগরী। কিন্তু এই ২৬/১১দিনটা মুম্বইবাসীর কাছে এখনও দুঃস্বপ্ন হিসেবে থেকে গিয়েছে মনের কোণে।

(কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, গুজরাত থেকে মণিপুর - দেশের সব রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদেরদেশবিভাগে ক্লিক করুন।)

Mumbai Attack Mumbai Ajmal Kasab
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy