— প্রতীকী চিত্র।
দিদির বাড়ি গেলে জামাইবাবু তার গায়ে হাত তুলত। যৌন নির্যাতনও চালাত। আর হুমকি দিত কাউকে বলে দিলে প্রাণে মেরে ফেলবে। বোকারোর চন্দ্রপুরার কাছে প্রত্যন্ত গ্রামের বছর বারোর কিশোরী তাই ভয়ে চুপ থাকত। এক দিন এই জামাইবাবুই তাকে নিয়ে গিয়ে কাজে ঢুকিয়ে দিল পশ্চিমবঙ্গের একটি জেলা শহরে ইঁটভাটায়। বছর দুই হাড়ভাঙা খাটুনির বিনিময়ে জুটত একবেলা খাবার। নিজের অভিশপ্ত জীবনের কথা বলতে গিয়ে বছর বারোর ওই কিশোরীর চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ।
আর চাইবাসার কাছে একটি গ্রামের বছর ১৩-এর কিশোরী জানাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের কোনও এক জেলা সদরে পরিচারিকার কাজ করত সে। কাজে কোনও রকম গাফিলতি দেখলে জুটত মার। কিন্তু কাউকে বলার ছিল না। কারণ বাড়ির বাইরে তাকে যেতেই দেওয়া হতো না। দু’বছর টানা এ রকম অত্যাচারের শিকার হতে হয়েছে তাঁকে।
আরও পড়ুন, প্রতিবেশীর বেনামী সম্পত্তি ধরিয়ে দিলে পেতে পারেন কোটি টাকা
আরও পড়ুন, ৪ মাস লড়াইয়ের পর বাড়ি ফিরল ২২ সপ্তাহে জন্মানো শিশু!
এ রকমই চাইবাসা, চন্দ্রপুরার মতো ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন জেলার গ্রাম থেকে পাচার হওয়া ৫৯ জন কিশোর কিশোরী ফিরল রাঁচীতে। আপাতত তারা রয়েছে রাঁচী স্টেশনের কাছে ঝাড়খণ্ড সরকারের ‘প্রেমাশ্রয়’ নামে একটি হোমে। হোমে ফিরে এখন এই সব কিশোর কিশোরীরা বাড়ি ফেরার জন্য উদগ্রীব। সামনেই তো পুজো। এ বার তারা পুজো দেখবে নিজের গ্রামে।
ঝাড়খণ্ডের স্টেট কমিশন ফর প্রোটেকশন অব চাইল্ড রাইটসের চেয়ারপার্সন আরতি কুজুর বলেন, ‘‘৫৯ জন কিশোর কিশোরীর মধ্যে ১৮ জন মেয়ে ও ৩৯ জন ছেলে। এরা সবাই নাবালক, নাবালিকা। এদের সবাইকে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে উদ্ধার করে পশ্চিমবঙ্গেরই তিনটি হোমে রাখা হয়েছিল। ওই হোমগুলো থেকে তাদের ঝাড়খণ্ডে নিয়ে আসা হয়েছে।’’
হোমে আশ্রয় পাওয়া কিশোর কিশোরীদের চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ। অনেকে গুছিয়ে কথাও বলতে পারে না। কিন্তু সবাই উদগ্রীব কখন বাড়ি ফিরবে। যেমন খুঁটির এক কিশোরী আশা ভরা চোখে বলল, এ বার বাড়ি ফিরলে পাড়ার পুজোতে খুব আনন্দ করবে। কত দিন দেখা হয়নি তার পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে। সবার সঙ্গে মজা করবে খুব। তাদের গ্রামের পুজোতে মেলাও বসে। সেই মেলা থেকে সে দু’বছর কাজ করে যে টাকা জমিয়েছে, সেই জমানো টাকা থেকে অনেক কিছু কিনবে।
কিন্তু এই সরল কিশোর কিশোরীদের পুজোর সময় বাড়ি ফেরার স্বপ্ন পূরণ কতটা হবে? আরতি কুজুর অবশ্য বলেন, ‘‘উদ্ধার হওয়া বেশির ভাগ কিশোর কিশোরীর বাড়ির ঠিকানাও জানা গিয়েছে। বাড়ির লোকদের সঙ্গে যোগাযোগও করা শুরু হয়েছে।’’
কিন্তু বাস্তবটা একটু অন্য রকম। ঝাড়খণ্ডে নারী ও শিশু পাচার রোধ নিয়ে কাজ করে এ রকম এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের এক কর্তা বৈদ্যনাথ কুমার জানান, অনেক সময় দেখা যায় বাড়ির লোকেরা ফিরে আসা সন্তানদের খুব ভাল ভাবে স্বাগত জানায় না। কারণ এই গরিব বাচ্চাদের পাচার হওয়ার পিছনে অনেক সময়ই থাকে তাদের বাড়ির কোনও নিকট আত্মীয়েরই হাত। অভাব অনটনের মধ্যে পড়ে বাড়ির নিকটাত্মীয়রাই মোটা টাকার বিনিময়ে তাদের ছেলেমেয়েদের পাচারকারীর হাতে তুলে দেন। তাই উদ্ধার হওয়া এই শিশু কিশোররা ফের পাচার হয়ে যায় অন্য কোথাও।
এই উদ্ধার হওয়া ৫৯ জন কিশোর কিশোরী এ বার পুজোয় আর পাঁচজনের মতো কি আনন্দে মেতে উঠতে পারবে? না ফের ফিরে যাবে অন্ধকার জগতে? আরতি কুজুরের অবশ্য দাবি, ‘‘উদ্ধার হওয়া কিশোর কিশোরীরা কোথায় পড়াশোনা করছে, বাড়িতে ওরা কেমন আছে সে ব্যাপারে আমরা কড়া নজরদারি চালাই। অভিভাবকদের রীতিমতো সর্তকও করে দেওয়া হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy