পুলিশের কাছে হৃতিক যা জানিয়েছে, তা অতি ভয়ঙ্কর। শুনে তদন্তকারীরাও চমকে গিয়েছেন। ছুরি দিয়ে ওই শিশুকে আঘাত করার সময় ছাত্রীটি বলছিল, ‘‘তোকে মারলে, তুই মারা গেলে স্কুল তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে যাবে।’’ কেন এমন ধারণা তৈরি হয়েছিল ওই কিশোরীর মনে? পুলিশ কোনও মন্তব্য করতে না চাইলেও মনোসমাজকর্মী মোহিত রণদীপ বলেন, ‘‘আমরা বড়রাই তো হিংসার পরিবেশ তৈরি করছি প্রতি নিয়ত। সেটাই কোনও ভাবে সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে যাচ্ছে। শিশুরা হয়তো মনে করছে, বড়রা যদি করতে পারে, তা হলে আমরা নই কেন! তাদের মনে তার প্রভাব পড়ছে।’’
আরও পড়ুন:
পুলিশ-দুষ্কৃতী গুলির লড়াইয়ের বলি আট বছরের শিশু
কুরুক্ষেত্রের খালে মিলল সেই তরুণের নগ্ন দেহ!
লখনউয়ের স্কুলে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা ফের একবার মনে করিয়ে দিল গুরুগ্রামের রায়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রদ্যুম্ন ঠাকুরের স্মৃতি। স্কুলের শৌচালয় থেকে গলা কাটা অবস্থায় ওই ছাত্রের দেহ মিলেছিল।খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে ওই স্কুলেরই দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রকে।প্রদ্যুম্নকে বাঁচানো যায়নি। তবে, হৃতিককে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে কিং জর্জ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি। চিকিৎসক সন্দীপ তিওয়ারি জানিয়েছেন, হৃতিকেরবুকে এবং পাকস্থলীতে মারাত্মক জখম রয়েছে। ধারালো ছুরিদিয়ে তার শরীরে একাধিক বার আঘাত করা হয়েছে বলেই মনে করছেন চিকিৎসকেরা।
হৃতিককে শৌচালয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন স্কুলেরই এক শিক্ষক অমিত সিংহ চৌহান। তিনি জানিয়েছেন, স্কুলের তিনতলার ওই শৌচাগারের দু’টি অংশ। স্কুলের শিক্ষক এবং কর্মীদের জন্য একটা অংশ, অন্য অংশটি ব্যবহার করে পড়ুয়ারা। ঘটনার দিন শৌচালয়ের ভিতর থেকে কান্নার আওয়াজ শুনে ভিতরে গিয়ে তিনি দেখেন, চারদিক রক্তে ভেসে যাচ্ছে। তার মধ্যেই শুয়ে কাতরাচ্ছে হৃতিক। মুখে কাপড় গোঁজা। বুক এবং পেট থেকে গলগল করে রক্ত বার হচ্ছে।সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
খবর ছড়িয়ে পড়তেই হইচই শুরু হয়ে যায় গোটা স্কুলে। হৃতিকের বাবা-মাকে খবর দেওয়া হয়। খবর যায় পুলিশের কাছেও। লখনউ পুলিশের এক আধিকারিক নেপাল সিংহ জানিয়েছেন, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছেওই স্কুলের প্রিন্সিপালকে। স্কুলের সমস্ত সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে, শৌচাগার চত্বরে যে কোনও সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল না, তা-ও জানিয়েছে পুলিশ। গোটা ঘটনায় স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছে শিশুটির পরিবার।
কিন্তু বার বার স্কুলের ভিতরে কেন এমন ঘটনা ঘটছে? মোহিতবাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘স্কুল বলতে আমরা যেমন বুঝি, এই শিশুদের কাছে হয়তো সেটা পাল্টে গিয়েছে। ওদের কাছে হয়তো এই সিস্টেমটাই যন্ত্রণাদায়ক। তাই এত হিংস্র হয়ে উঠছে ওরা। স্কুল সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা বদলের প্রয়োজন আছে কি না আমাদের তা ভেবে দেখার সময় এসেছে।’’