Advertisement
E-Paper

পঞ্চাশ টাকা কম! রাঁচীতে শিশু-মৃত্যু

অভিযোগ, মন গলেনি কাউন্টারের কর্মীদের। কার্যত বিনা চিকিৎসায় বাবা-মায়ের কোলেই মারা যায় শিশুটি। রবিবার রাতে এমনই অমানবিক ঘটনা ঘটে ঝাড়খণ্ডের সব চেয়ে বড় সরকারি হাসপাতাল রিমসে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য মানতে রাজি নন, সিটি-স্ক্যান না করার জন্যই বাচ্চাটির মৃত্যু হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৭ ০৪:২৫

কোলে শুয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছে একরত্তি ছেলে। হাসপাতালের ক্যাশ কাউন্টারের সামনে কাতর আর্জি জানালেন অসহায় বাবা— ‘‘সত্যি বলছি, কোথাও পালাব না। ৫০ টাকা কম পড়েছে। একটু পরেই জোগাড় করে দেব। সিটি-স্ক্যানটা করিয়ে দিন।’’

অভিযোগ, মন গলেনি কাউন্টারের কর্মীদের। কার্যত বিনা চিকিৎসায় বাবা-মায়ের কোলেই মারা যায় শিশুটি। রবিবার রাতে এমনই অমানবিক ঘটনা ঘটে ঝাড়খণ্ডের সব চেয়ে বড় সরকারি হাসপাতাল রিমসে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য মানতে রাজি নন, সিটি-স্ক্যান না করার জন্যই বাচ্চাটির মৃত্যু হয়েছে। তবে তদন্তের আশ্বাস মিলেছে।

পুলিশ জানায়, রাঁচীর জগন্নাথপুরে বাড়ি রিকশাচালক সন্তোষ লোহারের। দিনতিনেক আগে তাঁর এক বছরের ছেলে শ্যাম খেলতে গিয়ে সিঁড়ি দিয়ে পড়ে যায়। সন্তোষবাবু বলেন, ‘‘মাথায় চোট লাগলেও রক্ত পড়েনি। প্রথমে স্থানীয় চিকিৎসককে দেখাই। কিন্তু ছেলে হঠাৎ বমি করতে শুরু করে। চিকিৎসক ওকে রিমসে নিয়ে যেতে বলেন।’’ ছেলেকে নিয়ে গত রাতে রিমসের জরুরি বিভাগে যান সন্তোষবাবু। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী গুড়িয়াদেবী। সন্তোষবাবুর বক্তব্য, হাসপাতালের চিকিৎসক জানান, শ্যামের অবস্থা সঙ্কটজনক। তিনি দ্রুত সিটি-স্ক্যান করানোর পরামর্শ দেন। রিপোর্ট হাতে পেলে চিকিৎসা শুরু করা যাবে বলে জানানো হয়েছিল।

হাসপাতালের কর্মীরা দম্পতিকে জানান, ওই পরীক্ষা করাতে লাগবে ১ হাজার ৩৫০ টাকা। ব্যাগ কুড়িয়ে-কাচিয়ে ১৩০০ টাকা বের করেন সন্তোষবাবু। ক্যাশ কাউন্টারের কর্মীকে অনুরোধ করেন, ‘‘৫০ টাকা কম পড়ছে। সিটি-স্ক্যান করতে দিন। বাকি টাকা জোগাড় করে দিচ্ছি।’’ তাঁর অভিযোগ, কাউন্টারের কর্মী জানিয়ে দেন, পুরো টাকা না দিলে কোনও পরীক্ষা করা যাবে না। হাসপাতালে ধার-বাকি চলে না। গভীর রাতে টাকা জোগাড়ের অন্য উপায় খুঁজে পাননি সন্তোষবাবুরা। ছটফট করতে করতে এক সময় তাঁদের কোলেই নেতিয়ে পড়ে শ্যাম। চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, বাচ্চাটির মৃত্যু হয়েছে।

ছেলে হারিয়ে কথাও ভুলেছেন গুড়িয়াদেবী। নিজের মনে বলে চলেছেন, ‘‘টাকা না দিয়ে পালাব না বলেছিলাম। গরিব বলে আমাদের বিশ্বাস করল না। চোখের সামনে ছেলেটা মরে গেল।’’

রিমসের নির্দেশক এস কে চৌধুরী বলছেন, ‘‘সময়মতো সিটি-স্ক্যান না করানোর জন্য বাচ্চাটির মৃত্যু হয়েছে, এটা বোধহয় ঠিক নয়। তবে তদন্ত করা হবে। হাসপাতালের কেউ দোষী প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’’

সন্তোষবাবুর প্রশ্ন একটাই, ‘‘এ সব বলে এখন কী হবে!
আমার ছেলেকে কি ওঁরা ফিরিয়ে দিতে পারবেন?’’

Ranchi Hospital Jharkhand Child Death RIMS Shyam রাঁচী শ্যাম
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy