রেলের রক্ষণাবেক্ষণের দুর্দশার ছবিটা আরও এক বার পরিষ্কার হল দেহরাদূন-বারাণসী জনতা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু হওয়ার পরে।
গত শুক্রবার উত্তরপ্রদেশের রায়বরেলীতে লাইনচ্যুত হয় দেহরাদূন-বারাণসী জনতা এক্সপ্রেস। রেল সূত্রের খবর, লখনউ-বারাণসী শাখার বছরাবাঁ স্টেশনে পৌঁছনোর কিছু ক্ষণ আগেই চালক বুঝে গিয়েছিলেন তাঁর ইঞ্জিনের ‘ভ্যাকুয়াম ব্রেক’ কাজ করছে না। সে কথা তিনি ওয়াকিটকির মাধ্যমে ট্রেনের গার্ড ও বছরাবাঁ স্টেশনের স্টেশন মাস্টারকে জানিয়েও দিয়েছিলেন। তদন্তের সময় এমন তথ্যই উঠে এসেছে তদন্তকারীদের হাতে। আর ব্রেক না ধরার ফলেই ট্রেনটি সে দিন প্ল্যাটফর্মে থামানো যায়নি বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। লুপ লাইন দিয়েই সোজা এগিয়ে এক সময়ে লাইন শেষ করে বালির গাদায় (স্যান্ড হেড) উঠে যায় ট্রেনের ইঞ্জিন ও তিনটি কামরা। আর ইঞ্জিনে ব্রেক না ধরা যেহেতু রক্ষণাবেক্ষণের ত্রুটি, তাই প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, বছরাবাঁর স্টেশন মাস্টার বা ট্রেনের চালকের এ ক্ষেত্রে কিছুই করার ছিল না।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সময় মেন লাইনে আসার কথা ছিল গঙ্গা-গোমতী এক্সপ্রেসের। সেই কারণে দেহরাদূন-বারাণসী জনতা এক্সপ্রেসকে নেওয়া হয়েছিল লুপ লাইনে। আর সে জন্যই সে দিন দু’টি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ এড়ানো গিয়েছে বলে রেল কর্তারা মনে করছেন। যদিও শুক্রবারের ওই দুর্ঘটনাতেও প্রাণ গিয়েছে ৩৮ জনের। আহত হয়েছেন শতাধিক যাত্রী।
লখনউ-বারাণসী শাখার রেল কর্তারা নাকি দুর্ঘটনার পরেই এই তথ্য জেনে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেননি। রেল প্রতিমন্ত্রী ও রেল বোর্ডের কর্তারা তদন্তের আগেই এই দুর্ঘটনাকে চালকের ত্রুটি বলে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু তদন্ত শুরু হওয়ার পর পরে এই তথ্য উঠে আসায় এখন আর দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে কেউ কিছু বলতে চাইছেন না। ইঞ্জিনের পরের কামরাগুলি যাত্রীদের সাক্ষ্যতেও এই তথ্যের সায় মিলেছে।
ইঞ্জিনে ব্রেক ধরে না কখন? এর অনেকগুলি কারণ থাকতে পারে। দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে পুরনো হয়ে গেলে, রক্ষণাবেক্ষণ ঠিক মতো না হলে, ব্রেক-শু ক্ষয় হয়ে গেলে, ব্রেক-পাওয়ার অর্থাৎ ব্রেক-ড্রামের ভিতরে থাকা হাওয়ার চাপ কমে গেলে বা ব্রেকের অয়েল-পটের তেল কমে গেলে। রেল কর্তারা জানাচ্ছেন, এ ক্ষেত্রে ব্রেকের পাওয়ার কমে গিয়েছিল। অর্থাৎ কোনও ভাবে ব্রেক-ড্রামের হাওয়া বেরিয়ে গিয়েছিল। আর তাতেই এই বিপত্তি।
শুক্রবারই রেল বোর্ডের একটি সূত্র অন্তর্ঘাতের আশঙ্কা করেছিলেন। কেউ মনে করেন, ইচ্ছে করে হয়তো ইঞ্জিনের ব্রেক খুলে দেওয়া হয়েছে। তখনই পরিষ্কার হয়ে যায়, ব্রেক না ধরার কারণে চালক সিগন্যাল মানতে পারেননি। কিন্তু ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে তদন্ত না করেই সে দিন রেল প্রতিমন্ত্রী এবং রেল বোর্ডের কর্তারা নিজেদের ত্রুটি এড়িয়ে দুর্ঘটনার দায় চালকের উপরেই কেন চাপিয়ে ছিলেন, সে প্রশ্ন উঠছে। তদন্তের পরে যদিও রেলের গাফিলতির কথাই বেরিয়ে এসেছে। কমিশনারের রিপোর্ট অবশ্য জমা পড়েনি। এই পরিস্থিতিতে রেল কর্তাদের একাংশ বলছেন, যে দফতর ওই ইঞ্জিনটি মেরামতি করেছে, উত্তর রেলের সেই দফতরের কর্তা-কর্মী সকলকেই এই দুর্ঘটনার দায় নিতে হবে। না হলে পরেও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে গাফিলতি হতে থাকবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy