আকবর খান। —ফাইল চিত্র।
ভোঁতা অস্ত্রের আঘাতে ভেঙে গিয়েছিল হাড়। শুরু হয়েছিল অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ। তাতেই অলওয়ারে ‘গোরক্ষক’দের হামলার শিকার আকবর খানের মৃত্যু হয়েছে বলে ময়না তদন্ত রিপোর্টে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। অন্য দিকে আকবরের মৃত্যু পুলিশ হেফাজতেই হয়েছে বলে মেনে নিয়েছেন রাজস্থানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গুলাবচন্দ কাটারিয়া। বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
ময়না তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, অলওয়ারের রামগড়ে ‘গোরক্ষক’দের হামলায় আকবর খানকে কোনও ভোঁতা অস্ত্র দিয়ে বার বার আঘাত করা হয়েছিল। তাতে তাঁর পাঁজর, পিঠ, পা ও কব্জিতে গুরুতর আঘাত লাগে। মাথার নীচেও বড় আঘাত রয়েছে। ময়না তদন্তের দলের সদস্য চিকিৎসক রাজীব গুপ্তের মতে, ‘‘ওই আঘাতের ফলে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ শুরু হয়। তাতে মারা গিয়েছেন আকবর।’’
ঘটনার পরে পুলিশকে ডেকেছিলেন স্থানীয় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কর্মী নওল কিশোর। আকবরকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়েও সঙ্গে ছিলেন তিনি। গত কাল মারধরের পরে তাঁর তোলা আকবরের কয়েকটি ছবি প্রকাশিত হয়। তাতে আকবরকে আহত বলে মনে হলেও মৃতপ্রায় বলে মনে হয়নি।
আগেই অভিযোগ উঠেছিল, পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে যেতে তিন ঘণ্টা সময় লাগানোর ফলেই আকবরের মৃত্যু হয়েছে। নওল কিশোরের তোলা ছবি প্রকাশিত হওয়ার পরে সেই অভিযোগ নিয়ে আরও হইচই শুরু করেন বিরোধীরা। আকবরকে আরও মারধরের অভিযোগও ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে।
গত কালই চার পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেছে রাজস্থানের বিজেপি সরকার। আজ রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গুলাবচন্দ কাটারিয়া বলেন, ‘‘পুলিশ হেফাজতেই আকবরের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। তদন্তে জানা গিয়েছে পুলিশ প্রথমে গরুগুলিকে গোশালায় পাঠায়। তার পরে আকবরকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এটা করা পুলিশের উচিত হয়নি।’’ এ দিন রামগড়ে গিয়ে পুলিশের কী গাফিলতি হয়েছে তা খতিয়ে দেখেন গুলাবচন্দ। আকবরের পরিবারের সদস্যেরা এখন অলওয়ারে। তাঁদের সঙ্গেও দেখা করেন গুলাবচন্দ। তাঁর দাবি, তদন্ত নিয়ে আকবরের পরিবার খুশি। তবু ঘটনার ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
তবে রাজস্থান সরকারের পদক্ষেপে সমস্যা মিটছে না। কারণ, বিতর্কিত মন্তব্য করা থেকে পিছু হটতে রাজি নন বিজেপি-আরএসএসের কয়েক জন নেতা। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের দাবি, ‘‘গণপিটুনিতে খুনের ঘটনা বরদাস্ত করা যায় না। একই ভাবে গোহত্যা ও গরু পাচারের ঘটনাও বরদাস্ত করা হবে না।’’ তাঁর মতে, গণপিটুনিতে খুনের ঘটনা নিয়ে এখন বেশি প্রচার করা হচ্ছে। এক ধাপ এগিয়ে আরএসএস নেতা ইন্দ্রেশ কুমারের মন্তব্য, ‘‘গোহত্যার পাপ বন্ধ হলেই গণপিটুনিতে খুন বন্ধ হবে।’’
আকবরের হত্যা ভয়ঙ্কর ঘটনা বলে মেনেছেন অলওয়ার (গ্রামীণ) কেন্দ্রের বিধায়ক বনওয়ারিলাল সিঙ্ঘল। কিন্তু আকবরের মেয়ো সম্প্রদায়ের সদস্যেরা হরিয়ানা থেকে রাজস্থানে এসে ডাকাতি-সহ নানা অপরাধ ঘটায় বলে দাবি তাঁর। মেয়ো সম্প্রদায়ের নেতা শের মহম্মদের পাল্টা দাবি, তাঁরা রাজস্থানে সুরক্ষিত নন। রামগড়ের বিধায়ক জ্ঞানদেব আহুজার সহযোগীরা প্রকাশ্যেই বলে বেড়াচ্ছে, আকবরকে তারাই খুন করেছে। এ নিয়ে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়াকে একটি চিঠিও দিয়েছে মেয়ো সম্প্রদায়ের পঞ্চায়েত। রাজস্থান পুলিশের অবশ্য দাবি, শের মহম্মদের বিরুদ্ধেও রাজ্যে অনেক অভিযোগ রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy