উদ্বেগ: প্রকাশিত হয়েছে জাতীয় নাগরিক পঞ্জির খসড়া। সেই তালিকায় নাম আছে কি না, জানতে উদ্বিগ্ন মুখের ভিড়। অসমের করিমগঞ্জের একটি এনআরসি সেবা কেন্দ্রে। সোমবার। ছবি: উত্তম মুহরী
জাতীয় নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) প্রথম খসড়ায় নাম ওঠেনি খোদ এনআরসি কো-অর্ডিনেটর প্রতীক হাজেলার। নাম নেই বেশ কয়েকজন জেলাশাসক, বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী অর্ধেন্দু দে, এআইইউডিএফ প্রধান বদরুদ্দিন আজমলেরও। আসু’র উপদেষ্টা সমুজ্জ্বল ভট্টাচার্যের পরিবারের সকলের নামও এনআরসির প্রথম খসড়ায় ওঠেনি। আবার মায়ানমারে অজ্ঞাতবাসে থাকা আলফা (স্বাধীন) প্রধান পরেশ বরুয়া, প্রচার সম্পাদক অরুণোদয় অসম, সংগ্রামপন্থী এনডিএফবির প্রধান বি বিদাইদের নাম তালিকায় জ্বলজ্বল করছে।
১৯৫১ সালের পরে এই প্রথম এনআরসি নবীকরণ হচ্ছে। প্রথম খসড়ায় ৩ কোটি ২৯ লক্ষের মধ্যে ১ কোটি ৯০ লক্ষের নাম উঠেছে। বাকিদের নথিপত্র যাচাইয়ের কাজ চলছে। এই নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে আশা-আশঙ্কায় দুলেছে অসম। প্রচুর আধা-সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে রাজ্যের স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে। এমনকী বড় ধরনের কোনও গোলমাল হলে যাতে তৎক্ষণাৎ সেনার সাহায্য পাওয়া যায় তার জন্য তাদেরও আগাম সতর্ক করে রেখেছিল রাজ্য প্রশাসন। তবে আশঙ্কা উড়িয়ে প্রথম দিন অন্তত রাজ্যের কোথাও হাঙ্গামার খবর নেই।
হেল্পলাইন, এসএমএস পরিষেবা এবং সেবাকেন্দ্রের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইটে খসড়া দেখার ব্যবস্থা করা হয়। অবশ্য অতিরিক্ত চাপের ফলে এনআরসি-সহ রাজ্য সরকারের ওয়েবসাইটগুলি ‘ডাউন’ হয়ে যায়। ফলে অনলাইনে তালিকা যাচাই করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ। গত কাল মধ্যরাতে প্রথম খসড়া প্রকাশের পরে আজ সকাল থেকে এনআরসি সেবাকেন্দ্রগুলিতে ছিল নাম মিলিয়ে দেখার ভিড়। অনেকে হাসিমুখে ফিরেছেন। নাম না ওঠায় উদ্বেগ বেড়েছে বহু মানুষের। তবে সরকারি প্রচারে আস্থা রেখে তাঁরা পরিবারকে বুঝিয়েছেন, কাজ চলছে। পরের খসড়ায় নিশ্চয় নাম উঠবে।
গুয়াহাটির জয়দীপ বিশ্বাসের পরিবারের নাম ১৯৫৯ সালের ভোটার তালিকায় ছিল। তাঁর ঠাকুরদারা নগাঁওয়ের জখলাবান্ধার আদি বাসিন্দাদের এক জন। কিন্তু পরিবারে কারও নাম এনআরসিতে নেই। পান্ডুর ব্যবসায়ী বাপন ঘোষের বাবা-ভাইয়ের নাম থাকলেও তাঁর ও তাঁর আর এক ভাইয়ের নাম তালিকায় নেই। সমুজ্জ্বলবাবুর পরিবারের সদস্যের নাম তালিকা থেকে বাদ গেলেও তিনি বলেন, ‘‘আশঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। পর্যায়ক্রমে সব ভারতীয়ের নামই তালিকায় উঠবে।’’ প্রতীক হাজেলা জানান, অনেকেরই পরিবারের বাস ভিন রাজ্যে। সেখান থেকে নথি যাচাই হয়ে আসেনি। তাই অনেক আমলা-জেলাশাসকের নামও প্রথম তালিকায় বাদ পড়েছে।
তালিকায় এআইইউডিএফের প্রধান, সাংসদ বদরুদ্দিন আজমল ও তাঁর দুই ছেলে, দলের কার্যনির্বাহী সভাপতি আদিত্য লাংথাসার নাম নেই। বাবা, স্ত্রী, পুত্রের নাম থাকলেও নাম নেই হোজাইয়ের বিধায়ক শিলাদিত্য দেবের। রূপহীহাটের বিধায়ক নুরুল হুদা ও তাঁর পরিবারের ৫ সদস্যার নাম নেই। নাম নেই গৌরীপুরের বিধায়ক নিজানুর রহমান, ধুবুড়ির বিধায়ক নজরুল হকের। সংখ্যালঘু ছাত্র সংগঠন আমসুর সভাপতি আজিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আইনুদ্দিন আহমেদদের নামও খসড়ায় গরহাজির। এঁরা সকলেই মানুষকে অযথা আশঙ্কিত হতে নিষেধ করেন। আজ সকালে কাছাড় জেলার কাশীপুরের এক অটোচালক আত্মহত্যা করেন। পারিবারিক সূত্রের দাবি, এনআরসি-তে নাম থাকবে কিনা—তা নিয়ে উদ্বেগে ছিলেন ৪০ বছরের হানিফ। পুলিশ অবশ্য একে এনআরসি-র জন্য আত্মহত্যা বলতে নারাজ। বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার দিলীপকুমার পালেরও বক্তব্য, ‘‘এনআরসি-তে নাম যাচাই করতে বেলা গড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ওই অটোচালক সাতসকালে তাঁর নাম না থাকার কথা জেনে গিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন, এ কথা বিশ্বাসযোগ্য নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy