অপ্রত্যাশিত ফল। দক্ষিণ অসমের ১৬ আসনে ৯টি পেল বিজেপি। শিলচর, বড়খলা, উধারবন্দ, সোনাই, ধলাই, কাটিগড়া, পাথারকান্দি, রাতাবাড়ি ও হাফলং।
অকল্পনীয় হার। গৌতম রায়, অজিত সিংহ, সিদ্দেক আহমদ, গিরীন্দ্র মল্লিক— বরাকের চার মন্ত্রী পরাস্ত। হেরে গেলেন গৌতমপুত্র রাহুল রায়ও। জিততে পারেননি সন্তোষমোহন-জায়া বীথিকা দেবও। মাত্র তিনটি আসনে সন্তুষ্ট থাকতে হয় কংগ্রেসকে। লক্ষ্মীপুর, উত্তর করিমগঞ্জ ও বদরপুর।
১৯৯১ সালে গেরুয়াবাহিনী ৯টি আসন জিতেছিল, তখনও কংগ্রেসের এত শোচনীয় হার হয়নি। সে বার হাফলং-সহ ওই দল পেয়েছিল ৫টি আসন। তখন অবশ্য এআইইউডিএফ-র জন্ম হয়নি। এরা এ বার মোট ৪টি আসন ছিনিয়ে নিয়েছে। হাইলাকান্দি জেলার হাইলাকান্দি, আলগাপুর, কাটিগড়া সবকটি এআইইউডিএফ জিতে নেয়। করিমগঞ্জ জেলায় জেতে দক্ষিণ করিমগঞ্জ। সে জেলার বাকি ৪ আসনে কংগ্রেস ও বিজেপি ২টি করে জেতে। ডিমা হাসাও জেলার একমাত্র আসনটি এই প্রথম গেরুয়া দলের দখলে গেল।
গত নির্বাচনে একমাত্র আতাউর রহমান মাঝারভুইয়া ছিলেন বিধানসভায় এআইইউডিএফ-এর বরাক প্রতিনিধি। তিনিও পরে দল থেকে বহিষ্কৃত হন। এ বার দাঁড়িয়েছিলেন কংগ্রেস টিকিটে। নামেন তৃতীয় স্থানে। কাটিগড়ায় মূল লড়াই হয় বিজেপির অমরচাঁদ জৈন ও এআইইউডিএফ-র খলিলউদ্দিন মজুমদারের মধ্যে। ৮ হাজার ৮০৮ ভোটে জেতেন অমরবাবু।
কাছাড়ের সাত আসনে বিজেপি ছয়টি জিতে নেয়। শুধু লক্ষ্মীপুরে জেতেন কংগ্রেস প্রার্থী রাজদীপ গোয়ালা। প্রবল প্রতিকূল হাওয়ার মধ্যেও শুধু জেতেননি, ব্যবধানও বাড়িয়েছেন। ১৭ মাস আগে উপনির্বাচনে জিতেছিলেন ৯ হাজার ৮৩৭ ভোটে। এ বার জিতলেন ২৪ হাজার ৩৬৫ ভোটে।
সব চেয়ে বেশি ব্যবধানে জিতেছেন শিলচরের বিজেপি প্রার্থী দিলীপকুমার পাল। তিনিও ১৭ মাস আগের উপনির্বাচন থেকে ব্যবধান বাড়িয়েছেন এ বার। ২০১৪-য় তিনি কংগ্রেসের অরুণ দত্তমজুমদারকে ৩৭ হাজার ৪৪১ ভোটে হারিয়েছিলেন। এ বার বীথিকা দেবকে হারান ৩৯ হাজার ৮২৫ ভোটে।
সবচেয়ে কম ব্যবধানে জেতেন বড়খলার বিজেপি প্রার্থী কিশোর নাথ। শুরু থেকে এগিয়ে ছিলেন নির্দল মিসবাহুল ইসলাম লস্কর। এমনকী, শেষ রাউন্ডের গণনা যখন শুরু হচ্ছে তখনও তিনি জেতার পথে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁকে ৪২ ভোটে পরাজয় স্বীকার করতে হয়। সেখানে কংগ্রেসের বহু-বিতর্কিত বিধায়ক রুমি নাথ তৃতীয় স্থানে। গণনাকেন্দ্র থেকে বেরনোর সময় তিনি নির্বাচকদের উদ্দেশে ক্ষোভ ঝাড়েন। বলে যান, এত কাজের পর হেরে গেলাম! বড়খলার মানুষ আর না-ডাকলে ওই এলাকায় গিয়ে পা রাখব না। তবে রাজনৈতিক সন্ন্যাস বা অন্য আসন বেছে নেওয়ার কথা ভাবছেন না তিনি, জানিয়ে দেন সে-কথাও। একইভাবে আক্ষেপ ব্যক্ত করলেও রাজনৈতিক সন্ন্যাসের কথা ভাবছেন না মিসবাহুল ইসলাম লস্করও। কংগ্রেস থেকে বহিষ্কৃত নেতা মিসবাহুল ইসলাম লস্কর বলেন, আমার দল ছিল না, ব্যানার ছিল না। এরপরও যেভাবে মানুষ আমায় ভোট দিয়েছে, আমি কৃতজ্ঞ।
উধারবন্দেও কংগ্রসেকে এ বার পরাজয় বরণ করতে হয়। ১৯৬৭ সাল থেকে লাগাতার এই আসনে জিতেছেন জগন্নাথ সিংহ। শুধু ১৯৮৫ সালে একবার নির্দল প্রার্থী জয়প্রকাশ তিওয়ারি বিজয়ী হয়েছিলেন। ১৯৯৮ সালে তাঁর মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে তাঁরই ভাতিজা অজিত সিংহ। সে-থেকে তিনিই উধারবন্দের বিধায়ক। এ বার মন্ত্রী হয়েও আসন ধরে রাখতে পারলেন না।
সেখানে জিতেছেন বিজেপির মিহিরকান্তি সোম।
আসন ধরে রাখতে ব্যর্থ হলেন প্রতিমন্ত্রী গিরীন্দ্র মল্লিকও। ধলাই আসনে বিজেপির পরিমল শুক্লবৈদ্যের কাছে তিনি পরাস্ত হন। প্রথম রাউন্ড থেকে একবারের জন্যও তিনি এগোতে পারলেন না। ফলাফল আঁচ করে চতুর্থ রাউন্ডেই তিনি গণনাকেন্দ্র ছেড়ে বেরিয়ে যান।
নির্বাচিত হয়েই পরিমলবাবু বলেন, দুর্নীতি চরমে পৌঁছেছিল। উন্নয়নের ছিঁটেফোটা নেই। ৫ বছরে ধলাইকে ১৫ বছরে পিছিয়ে দিয়েছেন তিনি। চতুর্থবারের জন্য বিধায়ক হওয়ায় তাঁর মন্ত্রিত্ব মোটামুটি পাকা। পরিমলবাবুর কথায়, তা হাইকমান্ডের ব্যাপার। চারবারের জয়টাই মন্ত্রিত্বের বড় যোগ্যতা বলে মনে করি না। তবে দায়িত্ব পেলে নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করব।
উত্তর করিমগঞ্জের মিশনরঞ্জন দাসও এ বার চতুর্থবারের বিধায়ক হতেন। কিন্তু দলের প্রবল হাওয়ার মধ্যেও তিনি জিততে পারেননি। সেখানে জয়লাভ করেন কংগ্রেসের কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ। তাঁর মত আরেক পরিষদীয় সচিব জামালউদ্দিন আহমদ-ও কংগ্রেসকে নিজের বদরপুর আসনটি উপহার দিতে সক্ষম হয়েছেন।
জোরদার ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি বিজেপি ও এআইইউডিএফ-কে পেছনে ফেলে দেন।
তবে হেরে গিয়েছেন মন্ত্রীসিদ্দেক আহমেদ।গত লোকসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করে তিনি এআইইউডিএফ-র পক্ষে কাজ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। এ বার হারতে হল সেই এআইইউডিএফ-র কাছেই। আব্দুল আজিজ খান তাঁকে ৪ হাজারের বেশি ভোটে হারিয়ে দেন।
হারেন পরিষদীয় সচিব মণিলাল গোয়ালাও। তাঁকে তৃতীয় স্থানে ঠেলে বিজেপির কৃষ্ণেন্দু পাল ও এআইইউডিএফ-র দেবেন সিংহ। শেষ হাসি হাসেন কৃষ্ণেন্দুবাবু ।
দল বদলালেও বিধায়ক বদলায়নি রাতাবাড়িতে। আগেরবার কংগ্রেস টিকিটে জিতেছিলেন কৃপানাথ মালা। এ বার দাঁড়ান পদ্মফুল প্রতীকে। ভোটাররা এ বারও তাঁকে বিধানসভায় বসার সুযোগ দেন।
ফলাফলে সবচেয়ে বেশি চমক দেখিয়েছে হাইলাকান্দি। দাপুটে মন্ত্রী হিসেবে পরিচিত গৌতম রায় জিততে পারেননি। আমায় দেখে ভোট দিন, তাঁর এ কথা এ বার আলগাপুরেও কাজ করেনি। হেরে গিয়েছেন ছেলে রাহুল রায়ও। এমনকী মধ্য হাইলাকান্দি আসনটিও কংগ্রেস ধরে রাখতে পারেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy