Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

হাসপাতালের পাশেই বাংলো অসুস্থ দাউদের

৬০-এর কোঠায় পৌঁছে তিনি না কী এখন অসুস্থ। তাই আগের মতো আর ঘনঘন দুবাই যেতে পারেন না। প্রায়ই চিকিৎসার জন্য ছুটতে হয় করাচির ক্লিফটনের জিয়াউদ্দিন হাসপাতালে। তাই হাসপাতালের পাশেই দু’বছর আগে একটি বাংলো কিনে ফেলেছেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৫ ০৩:১৫
Share: Save:

৬০-এর কোঠায় পৌঁছে তিনি না কী এখন অসুস্থ। তাই আগের মতো আর ঘনঘন দুবাই যেতে পারেন না। প্রায়ই চিকিৎসার জন্য ছুটতে হয় করাচির ক্লিফটনের জিয়াউদ্দিন হাসপাতালে। তাই হাসপাতালের পাশেই দু’বছর আগে একটি বাংলো কিনে ফেলেছেন তিনি। সে’টি আবার বেনজির ভুট্টোর পুত্র বিলাওয়ালের বাড়ির একেবারে গায়েই।

তিনি দাউদ ইব্রাহিম। করাচিতেই ক্লিফটন এলাকার যে বাংলোয় তিনি থাকেন, তা ঘিরে রেখেছে আইএসআই এজেন্ট ও পাকিস্তানি রেঞ্জার্সরা। সব মিলিয়ে করাচিতে দাউদের দশটা বাড়ি। ইসালামাবাদেও বাড়ি রয়েছে গোটা তিনেক। যার মধ্যে রয়েছে আইএসআই-এর একটি ‘সেফ হাউস’-ও।

ইসলামাবাদ অবশ্য বরাবরই দাবি করে এসেছে দাউদ পাকিস্তানে নেই। কিন্তু ভারতের গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে, করাচিতেই ক্লিফটন এলাকার বাড়িতেই সপরিবার বহাল তবিয়তে রয়েছেন দাউদ। দু’দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ের বৈঠক বাতিল হয়ে গিয়েছে ঠিকই, কিন্তু এই তথ্য পেশ করে ইসলামাবাদকে ফের কাঠগড়ায় তুলতে চাইছে নয়াদিল্লি।


সবিস্তারে দেখতে ক্লিক করুন

কীসের ভিত্তিতে এতটা নিশ্চিত হচ্ছেন গোয়েন্দারা? দাউদের ১৩টি বাড়ির ঠিকানা, পাসপোর্ট নম্বর, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর, টেলিফোন নম্বর, সাম্প্রতিক টেলিফোন বিল, স্ত্রী-পরিবারের পাকিস্তান থেকে দুবাই আসা-যাওয়ার বিশদ বিবরণ, পাকিস্তান থেকে দুবাইয়ে টেলিফোনের কল ডিটেলস—সবই গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে। ক্লিফটন এলাকার বাড়ির ঠিকানায় দাউদের স্ত্রীর নামে থাকা টেলিফোন বিলেরও খোঁজ পেয়েছেন গোয়েন্দারা। বিলটি এপ্রিল মাসের। এই সব তথ্য পাকিস্তানের হাতে তুলে দিতে চায় ভারত। উদ্দেশ্য একটাই। ‘দাউদ পাকিস্তানে নেই’ বুলি আউড়ে যাওয়া ইসলামাবাদকে ‘মিথ্যেবাদী’ প্রমাণ করা।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এ দিন দাউদ সম্পর্কে বলেন, ‘‘এই ধরনের লোকেরা নিজের ঠিকানা বদলাতে থাকেন। কিন্তু পাকাপাকি ভাবেই পাকিস্তানে থাকেন।’’

দাউদের কাছে একাধিক পাকিস্তানি পাসপোর্ট রয়েছে বলেও জানিয়েছেন রাজনাথ। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি এ কথা সংসদেও বলেছি। এই ধরনের লোকের কাছে প্রায়ই একাধিক পাসপোর্ট থাকে। এর মধ্যে অসম্ভব কিছু নেই।’’ বিসিসিআই সচিব অনুরাগ ঠাকুরও এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন, দাউদকে আশ্রয় দেওয়া বন্ধ না করলে পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রিকেট খেলবে না ভারত।

বস্তুত এ দিন দুপুরে একটি বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের তরফে পাকিস্তানে দাউদের স্ত্রী মেহজবিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলা হয়। মেহজবিন জানান, তাঁরা এখন করাচিতেই রয়েছেন। দাউদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি জানান, দাউদ এখন ঘুমোচ্ছেন। ফলে দাউদ যে করাচিতে সপরিবার নিশ্চিন্তে দিন কাটাচ্ছেন, তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে বলেও গোয়েন্দাকর্তারা মনে করছেন। তবে পাকিস্তানের অভিযোগ, এ সব ভারতের গুপ্তচর সংস্থা ‘র’-এর কারসাজি।

ইসলামাবাদ অস্বীকার করতে চাইলেও, দাউদ পাকিস্তানে কোথায় রয়েছেন, আইএসআই কী ভাবে তাঁকে মদত দিচ্ছে—এ বিষয়ে যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ সংবলিত একটি ‘ডসিয়ার’ তৈরি করেছে ভারত। পাকিস্তানের হাতে তুলে দেওয়ার জন্যই তা তৈরি করা হয়েছিল। কিছু দিন আগেই দিল্লিতে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাই কমিশনার আব্দুল বাসিত দাবি করেছেন, দাউদ পাকিস্তানে নেই। কিন্তু মোদী সরকারের বক্তব্য, ভারতের হাতে যে তথ্যপ্রমাণ রয়েছে, তা পাকিস্তানকে মিথ্যে প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট। বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেন, ‘‘এ বিষয়ে আমরা যা যা জানি, তা পাকিস্তানের হাতে তুলে দিতে তৈরি।’’

কী আছে দাউদ সম্পর্কে ওই ‘ডসিয়ার’-এ? গোয়েন্দা সূত্রের বক্তব্য, গত দু’দশকে যখনই পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের বৈঠক হয়েছে, তখনই দাউদ সম্পর্কে তথ্য ইসলামাবাদের হাতে তুলে দিয়েছে ভারত। ইউপিএ-সরকারের আমলে স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকেও পাকিস্তানের হাতে একাধিক ‘ডসিয়ার’ তুলে দেওয়া হয়েছিল। এ বারের তথ্যভাণ্ডারে একেবারে সাম্প্রতিকতম তথ্য রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে দাউদের স্ত্রী মেহজবিনের নামে এপ্রিল মাসের একটি টেলিফোন বিল। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে তৈরি পাকিস্তান টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানির এই নম্বরটির সংযোগ দেওয়া হয়েছে করাচির ক্লিফটনের পাঁচ নম্বর স্কিমে করাচি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি এলাকার ৪ নম্বর ব্লকের ডি-১৩ নম্বর বাংলোয়।

দাউদের তিনটি পাকিস্তানি পাসপোর্টের বিবরণও রয়েছে ডসিয়ারে। তিনটি পাসপোর্টে আলাদা আলাদা ঠিকানা রয়েছে। এর মধ্যে সব থেকে পুরনো পাসপোর্ট তৈরি হয়েছে ১৯৯৬ সালে। ১৯৯৩-র মুম্বই ধারাবাহিক বিস্ফোরণের পরে দাউদ ভারত ছেড়ে গা ঢাকা দেওয়ার পরেই। করাচি থেকে দাউদের জন্য তৈরি সি-২৬৭১৮৫ নম্বরের পাসপোর্টটিতে নাম দেওয়া হয়েছে শেখ দাউদ হাসানের। বাকি দু’টি পাসপোর্টের মধ্যে একটিতে করাচির ঠিকানা রয়েছে। একটিতে রাওয়ালপিন্ডির।

১৯৯৩-র মুম্বই ধারাবাহিক বিস্ফোরণের মূল ষড়যন্ত্রী দাউদের শেষ যে ছবি গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে, তাতে দাউদের গোঁফ কামানো। মাথার চুলও পাতলা হয়ে এসেছে। গোয়েন্দাদের দাবি, দাউদ, তার স্ত্রী মেহজবিন, ছেলে মইন নওয়াজ ও তিন মেয়ে— মাহরুখ, মেহরিন ও মাজিয়া পাকিস্তানেই থাকে। জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মে মাসে দাউদের স্ত্রী ও অন্যদের করাচি থেকে দুবাই যাতায়াতের একাধিক প্রমাণ পেয়েছেন গোয়েন্দারা।

দাউদের সঙ্গে দুবাইয়ে তার ডি-কোম্পানির এক সহযোগী জাভেদের কথাবার্তার রেকর্ডও ডসিয়ার-এ রয়েছে। এই জাভেদই দুবাইয়ে দাউদের রিয়াল এস্টেট, মাদক, হাওয়ালা, ক্রিকেট জুয়ার ব্যবসা দেখাশোনা করে বলে গোয়েন্দাদের দাবি। একই সঙ্গে ভারত ও পাকিস্তানের শেয়ার বাজারে দাউদের টাকা খাটানোও সে দেখাশোনা করে।

তবে এ সবের মধ্যে নতুন কিছু দেখছে না কংগ্রেস। মণীশ তিওয়ারি জানান, দাউদ যে পাকিস্তানে রয়েছে, বিভিন্ন সময়ে ইসলামাদের হাতে সেই প্রমাণ তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রত্যেক বারই এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্তান। মণীশের দাবি, ওসামা বিন লাদেনকে ধরতে আমেরিকা পাকিস্তানের মাটিতে গোপন অভিযান চালিয়েছিল। দাউদকে ধরতে মোদী সরকারও তাই করুক। একই দাবি শোনা গিয়েছে বিজেপির শরিক শিবসেনার গলাতেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE