Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ভোজপুরি রবীন্দ্রসঙ্গীতে মেতেছে ঝাড়খণ্ড

কয়েক দিন আগের কথা। জামশেদপুরে একটি জলসা তখন জমে উঠেছে জনপ্রিয় ভোজপুরি গানে। হঠাৎই গায়ক রাজেন্দ্র প্রসাদ সাউ গেয়ে উঠলেন কিছুটা অন্য ধাঁচের গান— ‘যদি কেহু বলওলা সে না আয়ে/ ত অকেলা চলা হো’। শ্রোতারা অবাক। কিন্তু গায়ক বুঝলেন, গানটা তাঁদের মনে ধরেছে। তাই ফের তিনি গাইলেন— ‘নিতহি ভরসা রাখ হই হই/ আরে মন হইবে করি’। হাততালির শব্দে ভেসে যায় গোটা আসর।

জামশেদপুরের এক অনুষ্ঠানে রামেন্দ্রর ভোজপুরি রবীন্দ্র সংগীত। ছবি পার্থ চক্রবর্তী।

জামশেদপুরের এক অনুষ্ঠানে রামেন্দ্রর ভোজপুরি রবীন্দ্র সংগীত। ছবি পার্থ চক্রবর্তী।

আর্যভট্ট খান
রাঁচি শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৫:৫৮
Share: Save:

কয়েক দিন আগের কথা। জামশেদপুরে একটি জলসা তখন জমে উঠেছে জনপ্রিয় ভোজপুরি গানে। হঠাৎই গায়ক রাজেন্দ্র প্রসাদ সাউ গেয়ে উঠলেন কিছুটা অন্য ধাঁচের গান— ‘যদি কেহু বলওলা সে না আয়ে/ ত অকেলা চলা হো’। শ্রোতারা অবাক। কিন্তু গায়ক বুঝলেন, গানটা তাঁদের মনে ধরেছে। তাই ফের তিনি গাইলেন— ‘নিতহি ভরসা রাখ হই হই/ আরে মন হইবে করি’। হাততালির শব্দে ভেসে যায় গোটা আসর।

জামশেদপুর শুধু নয়— ঘাটশিলা, যদুগোড়া, ঝাড়খণ্ডের ছোট ছোট গঞ্জ শহরের অনুষ্ঠানে এ ভাবেই ভোজপুরি ভাষায় রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে চলেছেন বছর পঁয়তাল্লিশের রাজেন্দ্রপ্রসাদ। বাংলা লিখতে-পড়তে পারেন তিনি। রবীন্দ্রসঙ্গীতেরও ভক্ত। রাজেন্দ্রবাবু চেয়েছিলেন ঝাড়খণ্ড, বিহারের দেহাতি গ্রাম, শহরতলিতে বিশ্বকবির সৃষ্টি ছড়িয়ে দিতে। সে দিকে তাকিয়ে ১১টি রবীন্দ্রনাথের গান ভোজপুরিতে অনুবাদ করেন। তৈরি করেন সেই গানগুলির সিডিও।

রাজেন্দ্রপ্রসাদ বলেন, ‘‘ছোট থেকেই রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতাম। মনে হতো ভোজপুরি ভাষার মানুষ তো সেই গানের সুর থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন! তাই কয়েকটা গান ভোজপুরিতে অনুবাদ করি। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মঞ্চে সে সব গাইতে শুরু করলাম।’’

রাজেন্দ্র পেশায় প্রোমোটার। একটা পেট্রোল পাম্পও রয়েছে তাঁর। ফ্ল্যাটের স্কোয়ার ফুটের হিসেব কষা বা পেট্রোল, ডিজেলের দামের ওঠানামার খবর রাখার মধ্যেই রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চা চলে রাজেন্দ্রর। তিনি বলেন, ‘‘ভোজপুরি গান মানেই আদি-রসাত্মক আর চটুল, সেই ধারণাটা ভাঙতে চাইছি। আমি সামান্য এক গায়ক। তবু চেষ্টা করছি ভোজপুরি শ্রোতাদের মনে রবীন্দ্রনাথের গানের ছাপ ফেলতে।’’

শুনুন সেই রবীন্দ্র সংগীত

পুজোর পর শুরু হয়েছে জলসার মরসুম। রাজেন্দ্র বলেন, ‘‘অনেক সময় ভোজপুরি ভাষায় যদি কেহ বলওলা সে না আয়ে গাওয়ার পর মূল বাংলা গান— যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে’ও গাইছি। তা শুনে শ্রোতারা হাততালি দিচ্ছেন। ভাষাগত কোনও সমস্যা হচ্ছে না।’’

সম্প্রতি ঘাটশিলায় জলসা করতে গিয়েছিলেন রাজেন্দ্রপ্রসাদ। সেটির আয়োজক মনোজ দুবে বলেন, ‘‘রাজেন্দ্রপ্রসাদের কাছে এখন অনেকে ভোজপুরি জনপ্রিয় গানের আগে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতে চাইছেন। এ এক নতুন অভিজ্ঞতা।’’

ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন জলসায় তাই ভোজপুরি গান, ‘‘বলমা বোলা না/ মনওয়া ডুবল যায়ে’’-র সঙ্গে মিশে যাচ্ছে রবীন্দ্রসঙ্গীত— ‘বহুতে আশা লেকে আইল বানি।’

হাততালির ঝড় উঠছে সেই গানের সুরেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE