ছেলের মৃত্যুতে শোকে বিহ্বল মা। (বাঁ দিকে)
নীতীশ কাটারা। জেসিকা লাল। নয়না সাহনি। রাজনৈতিক নেতা বা তাদের নিকটাত্মীয়দের হাতে খুন হওয়ার তালিকায় জুড়ে গেল কুড়ি বছর বয়সী আদিত্য সচদেবের নাম।
গয়ার রাজপথে কাল রাতে টক্কর দিয়ে চলছিল দু’টি গাড়ি। একটিতে ছিলেন উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী আদিত্য। আর অন্যটিতে জেডিইউ বিধায়ক মনোরমা দেবীর ছেলে রকি যাদব। রকির সঙ্গে গাড়িতে ছিল তার মায়ের এক দেহরক্ষীও।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত রাতে বুদ্ধগয়ায় একটি জন্মদিনের পার্টির পরে এক বন্ধুর সঙ্গে বাড়ি ফিরছিলেন আদিত্য। ওই সময় রকির গাড়ি ওই রাস্তায় ঢুকে পড়ে। নতুন ল্যান্ডরোভার গাড়ি নিয়ে সামনে এগোনোর জন্য বার বার হর্ন বাজাতে থাকে রকি। এক লেনের রাস্তায় পাশে সরতে কিছুটা দেরি হয়েছিল আদিত্যর। এতেই বিগড়ে যায় বিধায়ক-পুত্রের মেজাজ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, তার পরেই আদিত্যর গাড়িটি ওভারটেক করে তার সামনে এসে দাঁড়ায় রকির গাড়ি। আদিত্য গাড়ি থেকে নেমে এলে তাঁকে সেখানেই মারধর করতে শুরু করে দেয় রকি। বারবার ক্ষমা চেয়ে নিয়ে নিজের গাড়ির দিকে আদিত্য এগোতেই পিছন থেকে তাঁকে গুলি করা হয় বলে অভিযোগ। মাথায় গুলি লেগে ঘটনাস্থলেই মারা যান আদিত্য। গাড়িতে থাকা আদিত্যর এক বন্ধু পুলিশকে জানিয়েছেন, রকির গাড়িতে কম্যান্ডো পোশাকে থাকা এক জনও গুলি ছুঁড়ছিলেন। একটি গুলি গিয়ে লাগে আদিত্যদের গাড়িতে।
ওই ঘটনা ঘিরে রাজনীতির পারদ তুঙ্গে উঠেছে। চরম অস্বস্তিতে পড়েছে বিহারের নীতীশ কুমারের সরকার। এমনিতেই বিহারের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই বিরোধীরা সরব। শনিবার রাতের এই ঘটনার পরে তা আরও বেড়েছে। প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ জেলার ব্যবসায়ী সংগঠনগুলি। তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষও। অভিযুক্ত বিধায়ক-পুত্রকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি উঠেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, আদিত্যর বাড়ি গয়া শহরের স্বরাজপুরী রোড এলাকায়। গয়ার এসএসপি গরিমা মালিক জানিয়েছেন, অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি চলছে। গয়ার এপি কলোনি এলাকায় বিধায়ক মনোরমা দেবীর বাড়ি থেকে রকির এসইউভি গাড়িটি আটক করেছে পুলিশ। বিধায়কের এক দেহরক্ষীকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার সময়ে সে-ই রকির সঙ্গে ছিল বলে অভিযোগ। মনোরমা দেবীর স্বামী বিন্ধেশ্বরী প্রসাদ ওরফে বিন্দি যাদবকে জেরা করছে রামপুর থানার পুলিশ।
নিহতের গাড়ির কাচ ফুঁড়ে গিয়েছে গুলি।ছবি: পিটিআই
সকালে খবর ছড়াতেই গয়া জুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিজেপি এবং ব্যবসায়ী সংগঠনগুলি রাস্তা অবরোধ করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা গয়ার বিজেপি বিধায়ক প্রেম কুমার ঘটনার নিন্দা করে বলেন, “বিহারে জঙ্গলরাজ কায়েম হয়েছে। রাস্তায় সামান্য গোলমালেই গুলি করে ছাত্রকে খুন করছে বিধায়কের ছেলে। বিধায়কের দেহরক্ষীও ঘটনায় জড়িত। এ সবের জন্য পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিতে পারছে না। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছি।”
জেডিইউয়ের সাধারণ সম্পাদক কে সি ত্যাগীও ঘটনার নিন্দা করেছেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন। পাশাপাশি দলের তরফে বিধায়ক মনোরমা দেবী এবং তাঁর স্বামী বিন্দি যাদবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেডিইউ মুখপাত্র রাজীব রঞ্জন।
রকির হদিস পেতে তার বাবা বিন্দি যাদবকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। বিন্দি দাবি করেছেন, আদিত্যরা মদ্যপ ছিলেন। গাড়ি থামিয়ে তাঁরা রকিকে মারধর করেন। আত্মরক্ষার জন্য নিজের লাইসেন্সপ্রাপ্ত বন্দুক বার করেছিল রকি। কোনও ভাবে তা থেকে গুলি ছিটকে যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy