Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

দাবির সঙ্গে মনও জিতল লাল মিছিল

সিপিএমের কৃষক সভার ‘লং মার্চ’-এর চাপের মুখে মাথা নোয়াতে বাধ্য হল মহারাষ্ট্রের বিজেপি সরকার। নাশিক থেকে পায়ে হেঁটে এসে বাণিজ্যনগরী দখল করে ফেলা প্রায় আধ লাখ কৃষককে মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসের প্রতিশ্রুতি, তাঁদের সিংহভাগ দাবিই মেনে নিচ্ছে সরকার।

কৃষকদের মিছিল মুম্বইতে।

কৃষকদের মিছিল মুম্বইতে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৮ ০২:৪৪
Share: Save:

তীব্র গরম আর পথের কষ্টকে উড়িয়ে ছ’দিনে দুশো কিলোমিটার হেঁটে এসে প্রতিশ্রুতি মিলল— পূরণ হবে সব দাবি। সময় লাগবে ছ’মাস।

সিপিএমের কৃষক সভার ‘লং মার্চ’-এর চাপের মুখে মাথা নোয়াতে বাধ্য হল মহারাষ্ট্রের বিজেপি সরকার। নাশিক থেকে পায়ে হেঁটে এসে বাণিজ্যনগরী দখল করে ফেলা প্রায় আধ লাখ কৃষককে মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসের প্রতিশ্রুতি, তাঁদের সিংহভাগ দাবিই মেনে নিচ্ছে সরকার। দাবি পূরণের লিখিত রূপরেখা মেলার পরে কৃষক-নেতারা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

শুধু তো দাবি আদায় নয়, ঘরে ফেরার আগে মুম্বই-সহ গোটা দেশের মনও জিতে নিলেন আদিবাসী, কৃষকরা। সাধারণ মানুষ, ছাত্রছাত্রীদের অসুবিধেয় না ফেলে শৃঙ্খলাবদ্ধ ভাবে রাস্তায় নেমে যে আন্দোলন করা যায়, দাবি আদায়ের পাশাপাশি মানুষের মনও জেতা যায়, সেই দৃষ্টান্ত তৈরি করে ফেললেন মরাঠওয়াড়া, নাশিক, বিদর্ভের চাষি-ক্ষেতমজুর-আদিবাসীরা।

ঠিক ছিল, সোমবার মুম্বইয়ের আজাদ ময়দানে জড়ো হবেন কৃষকরা। তার পর বিধানসভা ঘেরাও। রবিবার সন্ধ্যায় মুম্বই শহরতলির সায়নের সোমাইয়া ময়দানে পৌঁছে যায় কৃষকদের ‘লং মার্চ’। ১৮০ কিলোমিটার হাঁটার পরে দম নিয়ে নেওয়া। সোমবার চূড়ান্ত যুদ্ধের আগে।

আরও পড়ুন: চাষিদের লড়াইকে সমর্থন জানাল বলিউডও

কিন্তু সোমবার থেকেই শুরু দশম শ্রেণির পরীক্ষা। ছাত্রছাত্রীদের অসুবিধা হতে পারে আঁচ করে কৃষক নেতারা ঠিক করেন, ভোরের আগেই মুম্বইয়ে ঢুকে পড়বেন তাঁরা। রাত একটার পরে ফের যাত্রা শুরু হয়। ১৯ কিলোমিটার হেঁটে মুম্বই ভাল করে জেগে ওঠার আগেই ভোরবেলা আজাদ ময়দানে পৌঁছয় মিছিল। কৃষক সভার সভাপতি অশোক ধাবালে বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের অসুবিধা হবে বলে আমরা না হয় রাতের ঘুমটা
বাদই দিলাম।’’

আর এখানেই মন জিতেছেন কৃষকরা। মিছিল যখন মুম্বই ঢুকছে, তখন অনেকেই পথে দাঁড়িয়ে থেকে এগিয়ে দিয়েছেন খাবার-জল। অনেকে ওষুধ নিয়ে অপেক্ষা করেছেন আন্দোলনকারীদের ক্ষতবিক্ষত পায়ের চিকিৎসার জন্য। শুশ্রূষা শেষে যত্ন করে পরিয়ে দিয়েছেন চপ্পল-জুতো। আর যাতে পা না কেটে যায়।

পথের দাবি: কৃষকদের দখলে রাতের মুম্বই। রবিবার। ছবি: পিটিআই।

বিধানসভা ঘেরাওয়ের দরকার অবশ্য পড়েনি। তার আগেই মুখ্যমন্ত্রী ১১ জন কৃষক প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেন। দাবি মেনে মুখ্যসচিব সই করে লিখিত প্রতিশ্রুতিও দেন। বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা প্রায় সব দাবি মেনে নিচ্ছি। ছয় মাসের মধ্যে সব দাবি পূরণ হবে।’’ লিখিত প্রতিশ্রুতির সঙ্গে বিধানসভাতেও তা ঘোষণা করবেন মুখ্যমন্ত্রী।

কৃষক সভার দাবি ছিল, মহারাষ্ট্র সরকার ৩৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ মকুব প্রকল্প ঘোষণা করলেও এমন সব শর্ত রেখেছে, যাতে মাত্র ৮ হাজার কোটি টাকা বণ্টন হবে। সেই সব শর্ত প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি মিলেছে। ভূমিহীন আদিবাসীরা জঙ্গলের জমির পাট্টা চেয়েছিলেন। ফডণবীস বলেন, ‘‘লং মার্চে আসা কৃষকদের ৯০ শতাংশই ভূমিহীন আদিবাসী। চাষের জমিতে তাঁদের অধিকার ছ’মাসের মধ্যে পূরণ হবে।’’ বৃদ্ধ কৃষক, ক্ষেতমজুরদের জন্য পেনশনের দাবিও সরকার বিধানসভায় ঘোষণা করবে। ফসলের ন্যায্য দামের জন্য কৃষক সভার প্রতিনিধিদের রেখে তৈরি হবে সরকারি কমিটি। কৃষক সভার নেতা হান্নান মোল্লা বলেন, ‘‘মহারাষ্ট্রে কৃষকদের এই জয় অন্য রাজ্যের কৃষক আন্দোলনের সামনেও উদাহরণ তৈরি করল।’’ দাবি পূরণের পাশাপাশি কৃষকদের বাড়ি ফেরার জন্য বিশেষ ট্রেনেরও বন্দোবস্ত করা হয়েছে।

রোদে পুড়ে, ক্ষতবিক্ষত হয়েও যুদ্ধ জিতেই ঘরে ফিরছে মরাঠওয়াড়া-বিদর্ভ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE