Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

তদন্তের আগেই কেন নাশকতার তত্ত্ব রেলের

রক্ষণাবেক্ষণ, পর্যবেক্ষণ বা চালকের ত্রুটি পিছনের সারিতে। দুর্ঘটনা ঘটলেই এখন রেলের আপ্তবাক্য একটিই, নাশকতা। বিহার হোক বা উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ বা অন্ধ্রপ্রদেশ— দেশের সাম্প্রতিক সব রেলের দুর্ঘটনার পিছনে নাশকতাই নাকি একমাত্র কারণ।

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩৩
Share: Save:

রক্ষণাবেক্ষণ, পর্যবেক্ষণ বা চালকের ত্রুটি পিছনের সারিতে। দুর্ঘটনা ঘটলেই এখন রেলের আপ্তবাক্য একটিই, নাশকতা। বিহার হোক বা উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ বা অন্ধ্রপ্রদেশ— দেশের সাম্প্রতিক সব রেলের দুর্ঘটনার পিছনে নাশকতাই নাকি একমাত্র কারণ।

গত সপ্তাহে একটি খুনের মামলায় তিন দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করেছিল পূর্ব চম্পারণ পুলিশ। তদন্তে পুলিশের দাবি, কানপুরের কাছে পটনা-ইনদওর ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটানোর পিছনে তাদের ভূমিকা রয়েছে। টাকার বিনিময়ে তাদের হাতে সেই দায়িত্ব দিয়েছিল পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। ওই দুর্ঘটনার তদন্তে নামে এনআইএ। তার পর রেল দাবি করে শিয়ালদহ-অজমেঢ় দুর্ঘটনার পিছনেও নাকি রয়েছে নাশকতাই।

শনিবার রাতে দুর্ঘটনার কবলে পড়া হিরাখন্দ এক্সপ্রেস, বা আজ সকালে কোচবিহারের ঘুঘুমারির কাছে লাইনে ফাটল— তদন্ত শুরু হওয়ার আগেই এই সব কিছুর পিছনে নাশকতার কারণ দেখিয়ে সরব হয়েছে রেলের শীর্ষ মহল। এ সব কারণ দেখিয়ে রেল কর্তারা তদন্তকে প্রভাবিত করছেন কি না, সেই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে মন্ত্রকে।

রেলকর্তারা এখন বিহার পুলিশকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন। নাশকতা ও রেল দুর্ঘটনার সম্পর্ক তুলে দায় এড়াবার পথ দেখিয়েছিলেন তারাই। কিন্তু রেলের একটি অংশ ইতিমধ্যেই এর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছে। তাঁদের বক্তব্য, দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ চিহ্নিত না হলে ভবিষ্যতে আরও বড় বিপদ হতে পারে।

আর কয়েক সপ্তাহ পরেই পাঁচ রাজ্যে ভোট। এখন রেল লাইনে রক্ষণাবেক্ষণ, পুরনো প্রযুক্তির কোচ, সিগন্যালিং বা চালকের ভুলে দুর্ঘটনার বিষয় তদন্তে উঠে এলে দায় নিতে হবে রেলকে। দায়িত্ব এড়াতে পারবেন না প্রধানমন্ত্রীও। ভোটের বাক্সে এর প্রভাবও পড়তে পারে। তাই ভোটের মুখে ঝুঁকি নিতে নারাজ শাসক শিবির। অনেকেই মনে করছেন, নাশকতার তত্ত্ব সামনে এলে তা পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই (ইন্দোর-পটনা, শিয়ালদহ-অজমেঢ়), মাওবাদী (হিরাখন্দ এক্সপ্রেস), স্থানীয় দুষ্কৃতী (আলিপুরদুয়ার-বামনহাট প্যাসেঞ্জার, মুজফফ্‌পুর-ভাগলপুর)-দের চাপিয়ে দিয়ে মন্ত্রক নিজের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে। কারণ এ ক্ষেত্রে আইন–শৃঙ্খলা রক্ষা বা নাশকতার রোখার দায়িত্ব এসে পড়ে রাজ্যের ঘাড়ে।

রেলের শ্রমিক সংগঠনগুলি কিন্তু মনে করছে, পিঠ বাঁচানোর খেলায় আখেরে ক্ষতি হচ্ছে রেলের। বর্তমানে রেলের চতুর্থ শ্রেণিতে পদে প্রায় এক লক্ষ পদ খালি রয়েছে। এদের কাজই হল জমিতে নেমে সুরক্ষার বিষয়টি খতিয়ে দেখা। কিন্তু এত পদ খালি থাকায় এক-একজনকে বাড়তি দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। যা ডেকে আনছে বিপদের সম্ভাবনা। রেলের সুরক্ষায় অর্থ বিনিয়োগে কেন্দ্রের গড়িমসির নিন্দা করেছেন প্রাক্তন রেলকর্তারা। রেলের এক প্রাক্তন কর্তা আর এন মলহোত্রর কথায়, ‘‘লাইন, সিগন্যাল বা কোচ নির্দিষ্ট সময়ের পরে পাল্টানো উচিত। কিন্তু রেলের হাতে টাকা নেই। গত বছর সুরক্ষা তহবিলের জন্য কেন্দ্রের কাছে দরবার করা হয়েছিল। কিন্তু সেই আবেদন ফেরৎ পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’’ যার খেসারতে একের পর দুর্ঘটনা ঘটছে। রেলকর্তাদের আশঙ্কা, পরিকাঠামোর খোলনলচে না বদলালে দুর্ঘটনার ঘটনা আরও বাড়বে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Centre accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE