Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

দশ ছুঁতেই বিয়ে মেয়েদের, জানে না পঞ্চায়েত

কপালে টিপ, সিঁথি ভরা সিঁদুর। হাতে নেলপালিশ। দুলে দুলে নামতা পড়ছে। বয়স বড়জোর আট কি নয়! গোড্ডা শহর থেকে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে কুশমনি পঞ্চায়েত। এই কুশমনি পঞ্চায়েতের রাজপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্ধুদের সঙ্গে নামতা পড়ছিল এক বালিকা-বধূ।

ক্লাসে পুতুল কুমারী।-নিজস্ব চিত্র।

ক্লাসে পুতুল কুমারী।-নিজস্ব চিত্র।

আর্যভট্ট খান
রাঁচি শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৫ ০২:৫৬
Share: Save:

কপালে টিপ, সিঁথি ভরা সিঁদুর। হাতে নেলপালিশ। দুলে দুলে নামতা পড়ছে। বয়স বড়জোর আট কি নয়! গোড্ডা শহর থেকে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে কুশমনি পঞ্চায়েত। এই কুশমনি পঞ্চায়েতের রাজপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্ধুদের সঙ্গে নামতা পড়ছিল এক বালিকা-বধূ।

সে একা নয়, এই কুশমনি পঞ্চায়েত এলাকারই রাজকীয় কৃত মধ্যবিদ্যালয় এবং উৎক্রমিক চারকাকোল মধ্যবিদ্যালয়েও গেলেও চোখে পড়বে একই দৃশ্য। আরতি কুমারী, পুতুল কুমারীরা মাথা ভর্তি সিঁদুর দিয়ে পড়াশোনা করছে অন্যদের সঙ্গে।

কিন্তু বাল্যবিবাহ যে নিষিদ্ধ, তা কি জানেন না আরতি বা পুতুলের বাবা-মায়েরা? জানেন। আর তাই জন্য এ সব নিয়ে চর্চা হোক, চান না কেউই। চর্চা হলে যদি সব বন্ধ করে দেওয়া হয়! এখানে এমনটাই নাকি ‘রীতি।’ দশ বছর পেরিয়ে গেলে মেয়ের বিয়ে হওয়া সমস্যা। তাই দশের আগেই বিয়ে হয়ে যায় ওদের।

আরতির পাশে বসা আরও কয়েক জনের মাথাতেও সিঁদুর। তারা অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। ওরা জানাল, বিয়ে হয়েছে ২০১০-২০১১ সালের মধ্যে। তখন কেউ পড়ত ক্লাস টু-এ। কেউ বা থ্রি-তে। বিয়ে নিয়ে বেশি কিছু বলতে চায় না ওদের অনেকেই।

তবে বিয়েটা স্বাভাবিক বলেই মেনে নিয়েছে এই সব কিশোরী। যেমন আরতি কুমারী বলে, ‘‘২০১১-য় বিয়ে হয়েছে আমার। বয়স বেড়ে গেলে আমাদের গ্রামে মেয়েদের বিয়ে হতে চায় না। তাই দশের মধ্যেই বিয়ে দিয়ে দেয় মা বাবারা। এটাই রীতি।’’ সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী পুতুল কুমারী বলে, ‘‘আগে বিয়ে, তার পর পড়াশোনা। মা বাবা বলেছে, বিয়ে করে পড়াশোনা করো। আমার বিয়ে হয়েছে ২০১০ সালে।’’ তবে বিয়ে হলেও এখনই শ্বশুরবাড়ি যেতে হচ্ছে না বলে জানাল পুতুল-আরতিরা। বিয়ের পর পাঁচ থেকে ছ’বছর তারা বাপের বাড়িতেই থাকে।

নাম বলতে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বললেন, ‘‘গ্রামের যে ছেলের সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ে দিয়েছি, সে ভাগলপুরে সাইকেলের দোকানে কাজ করে। এত ভাল পাত্র যদি আর না পাই! তাই আগেভাগে মেয়ের বিয়ে দিয়ে রেখেছি।’’

উৎক্রমিক চারকাকোল স্কুলের প্রধানশিক্ষক সম্বলকুমার ঠাকুর জানালেন, নিম্নবিত্ত মূলত প্রান্তিক কৃষক, অথবা মুটে-মজুর পরিবারের মেয়ে এরা। পাত্রদের বয়স অবশ্য এত কম নয়। আঠারোর আশপাশে। কেউ কাজ করে গ্রামে। কেউ আবার গোড্ডা জেলা লাগোয়া বিহারেও চলে যায়। সম্বলকুমার বলেন, ‘‘আমরা ওদের অনেক বুঝিয়েছি। ওরা শুনতে চায় না। বলে, এটাই ওদের নিয়ম। তবে এই সব বিবাহিত ছাত্রীরা যাতে শারীরিক অত্যাচারের শিকার না হয়, সে দিকে খেয়াল রাখা হয়।’’ গোড্ডা জেলার ডেপুটি কমিশনার হর্স মঙ্গলা বলেন, ‘‘বিষয়টি জানতাম না। সম্প্রতি কানে এসেছে। যে সব নাবালিকার বিয়ে হয়েছে, তাদের একটা তালিকা তৈরি করে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE