শুধুমাত্র সীমান্তে রক্তক্ষয়ী সঙ্ঘর্ষ নয়, ভারতকে প্রতিহত করতে ভারতের মাটিতেও জাল বিস্তার করছে চিন। তার জন্য ভারতের বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, পেট্রো শোধনাগার এমনকি, পরমাণু শক্তিকেন্দ্রগুলিকেও নিশানা করছে তারা। প্রযুক্তি-ক্ষতিকারক ভাইরাস ছড়িয়ে সেগুলিকে কাবু করে ফেলছে তারা। এমনই উদ্বেগজনক তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে আমেরিকার সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা ‘রেকর্ডেড ফিউচার’-এর একটি রিপোর্টে। প্রসঙ্গত, লাদাখে রক্তক্ষয়ী সঙ্ঘর্ষ চলাকালীন ২০২০-র অক্টোবরে আচমকা অন্ধকারে ডুবে গিয়েছিল দেশের বাণিজ্যনগরী মুম্বই। তার পিছনে চিনা সরকারের মদতপুষ্ট হ্যাকারদেরই হাত ছিল বলে দাবি করা হয়েছে ওই রিপোর্টে।
করোনা অতিমারির জেরে গত বছর যখন ধুঁকছে গোটা দেশ, সেই সময় ১২ অক্টোবর আচমকাই বিদ্যুৎ বিভ্রাটে থমকে যায় আরবসাগরের তীরে মায়ানগরী। শহরের ২ কোটি বাসিন্দা তো বটেই, সেখানকার পরিবহণ ব্যবস্থা, শিল্প এবং শেয়ারবাজারেও ব্যাপক প্রভাব পড়ে। স্টেশনে স্টেশনে থমকে যায় ট্রেন। কোভিড রোগীদের ভেন্টিলেটর চালু রাখতে জরুরি ভিত্তিতে চালু করতে হয় জেনারেটর। কল-কারখানায় বন্ধ হয়ে যায় উৎপাদন। তার জেরে বিপুল ধস নামে শেয়ারবাজারে। সেই সময় জানা গিয়েছিল, কালওয়াতে সেন্ট্রাল লাইনে গ্রিড বসে যাওয়াতেই বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কবলে পড়েছে মায়ানগরী। বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীরা যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ শুরু করায় ২-৩ ঘণ্টার মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়। কিন্তু ওইটুকু সময়ের মধ্যেই ঘণ্টায় প্রায় ২৫৮ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছিল বলে জানা যায়। বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামার পর তখন সাইবার হানার বিষয়টি উঠে এসেছিল। তবে পরবর্তীকালে তা নিয়ে আর কোনও তথ্যই সামনে আনা হয়নি।
যদিও ‘রেকর্ডেড ফিউচার’-এর দাবি, চিন সরকারের মদতে সে দেশের হ্যাকাররাই ওই বিভ্রাট ঘটিয়েছিল। তারা জানিয়েছে, ভারতীয় ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ ঘিরে ২০২০-র ৫ মে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় চিনাবাহিনীর সঙ্গে হাতাহাতি বেধে যায় ভারতীয় সেনার। তার পর দফায় দফায় সেখানে সঙ্ঘর্ষে জড়িয়েছে দু’পক্ষ। তাতে ২০ জন ভারতীয় জওয়ান প্রাণ হারান। প্রাণহানি ঘটে চিনা বাহিনিতেও। সেই সময়ই হাতে নয়, চিন সরকার ভারতকে কার্যত ‘ভাতে’ মারার সিদ্ধান্ত নেয়। তার জন্য দেশের শিল্পের প্রাণকেন্দ্র মুম্বইকেই বেছে নেয় তারা। ওই রিপোর্টে আরও দাবি করা হয়েছে, সীমান্তে সঙ্ঘাত অব্যাহত থাকাকালীন দেশের প্রায় সর্বত্র বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রগুলির প্রযুক্তিতে ঝাঁকে ঝাঁকে চিনা ভাইরাস (ম্যালওয়্যার) ঢুকতে থাকে। শুধু তা-ই নয়, ওই একই দিনে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন এবং একটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রযুক্তিতেও ভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ তাদের। তবে এদের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটিকেই সক্রিয় (অ্যাক্টিভেট) করা হয়েছিল। তাই একটি নির্দিষ্ট রাজ্যেই বিভ্রাট সীমাবদ্ধ ছিল। এক সঙ্গে সবক’টিকে সক্রিয় করে দিলে গোটা দেশ অন্ধকারে ডুবে যেত।