Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ওষুধের দাম কমেনি কেন, দেখছে কমিটি

ঘোষণাই সার। কাজের কাজ কিছু হয়নি। কিছু হচ্ছেও না। গত চার বছরে অন্তত তিন বার ওষুধের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। কিন্তু কোনও বারেই বাজারে সেই ঘোষণার প্রভাব পড়েনি। ফলে স্বস্তি পাননি সাধারণ মানুষ।

সোমা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৭ ০২:৫১
Share: Save:

ঘোষণাই সার। কাজের কাজ কিছু হয়নি। কিছু হচ্ছেও না।

গত চার বছরে অন্তত তিন বার ওষুধের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। কিন্তু কোনও বারেই বাজারে সেই ঘোষণার প্রভাব পড়েনি। ফলে স্বস্তি পাননি সাধারণ মানুষ।

ঘোষণা সত্ত্বেও ওষুধের দাম কমছে না কেন, তা খতিয়ে দেখতে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্র। এই প্রক্রিয়ায় সাধারণ মানুষকে যুক্ত করা হচ্ছে একটি বর্ধিত কমিটির মাধ্যমে। তাতে থাকছেন রোগী-স্বার্থে কর্মরত সংগঠনের প্রতিনিধিরা। কেন্দ্রের গড়া কমিটির একটি বৈঠক হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

চিকিৎসা শিবির সূত্রে জানা গিয়েছে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ওষুধ সংস্থাগুলিরও বক্তব্য শোনা হবে বলে জানানো হয়েছিল। দাম কমানোর ব্যাপারে বিভিন্ন সংস্থা ও ‘লবি’র তরফে জোরদার আপত্তি আসছে। স্বার্থে ঘা লাগার আশঙ্কাতেই যে এই আপত্তি, সেটা স্পষ্ট করে দিচ্ছেন চিকিৎসা শিবিরের একটি অংশ।

তবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূ্ত্রের খবর, আগে একাধিক বার সিদ্ধান্ত নিয়েও ওষুধের দাম কমানো যায়নি কেন, সেই বিষয়টি গোড়াতেই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে ২০১৩ সালের নির্দেশিকাকে আরও শক্তিশালী করা জরুরি। অত্যাবশ্যক এবং জীবনদায়ী ওষুধের দামের সীমা কী হবে, ওই নির্দেশিকায় তা সুস্পষ্ট ভাবেই বলা হয়েছে। কিন্তু সেই নিয়মকে তোয়াক্কা না-করেই ওষুধের দাম ঠিক করছে অনেক সংস্থা।’’

আগের বার দাম বেঁধে দেওয়া সত্ত্বেও একাধিক সংস্থা আগের দামেই ওষুধ বিক্রি করেছে বলে অভিযোগ। তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কিছু ওষুধ রাতারাতি গায়েব হয়ে গিয়েছিল বলেও অভিযোগ। তার জেরে সমস্যায় পড়তে হয় রোগীদের। এ বার যাতে তেমন কিছু না-ঘটে, তা-ও নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে।

কোন ওষুধের কী দাম, চাহিদা কত, গত কয়েক বছরে তার দাম কী হারে বেড়েছে, সেই সংক্রান্ত তথ্যপঞ্জিকে আরও পূর্ণাঙ্গ করে তোলার কথাও ভেবেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণ, সেই সংক্রান্ত নিয়মবিধির প্রয়োগ, দাম বাড়ালে সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ইত্যাদির জন্য তৈরি হবে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রোটোকল-ও।

কেন্দ্রের ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল জে এন সিংহ জানান, প্রথমেই সাড়ে চারশো ওষুধকে বেছে নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে আছে ক্যানসার, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের ওষুধ এবং বেশ কিছু অ্যান্টিবায়োটিক। শুধু মধ্যবিত্ত নন, সাধারণ গরিব মানুষ যাতে ওষুধ কিনতে পারেন, সেই বিষয়টির উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কর্তাদের একটা বড় অংশ অবশ্য এই ধরনের উদ্যোগের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান। এক কর্তার মন্তব্য, ২০১৪-য় প্রথমে ৩৪৮ এবং পরে ১০৮ রকমের ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। পরে ১০৮টি ওষুধের উপর থেকে নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ তুলে নেওয়া হয়। আর ৩৪৮টি ওষুধের দাম বছরে ১০ শতাংশ বাড়ানোর অনুমতি দেওয়া হয়। নিয়ন্ত্রণী নির্দেশ জারি করেও তা শিথিল করা হলে সাধারণ মানুষের সুবিধে হওয়ার কথা নয়। ‘‘আমজনতাকে স্বস্তি দিতে গেলে ওষুধ সংস্থাকে তোয়াজ করা বন্ধ করতে হবে,’’ বলছেন ওই স্বাস্থ্যকর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Medicine Price Committee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE