লোকসভা ভোটের ধাক্কা এখনও সামলে ওঠা যায়নি। এর মধ্যে একই দিনে পাঁচ রাজ্যে বিক্ষোভের মুখে পড়ে গেল কংগ্রেস হাইকম্যান্ড।
অসমের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে তরুণ গগৈয়ের অপসারণ দাবি করে আজ ইস্তফা দিলেন শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। মহারাষ্ট্রে একই দাবিতে শিল্পমন্ত্রীর পদ ছাড়লেন নারায়ণ রাণে। হরিয়ানায় মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহ হুডার বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে দল ছাড়ার হুমকি দিলেন কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির প্রাক্তন সদস্য বিজেন্দ্র সিংহ। জম্মু-কাশ্মীরে আনুষ্ঠানিক ভাবে কংগ্রেস ছাড়লেন প্রাক্তন সাংসদ চৌধুরী লাল সিংহ। আর পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন তিন বিধায়ক।
অধীর চৌধুরী আশা করেছিলেন রাজ্য সভাপতি হয়ে সংগঠনের হাল ফেরাবেন। লোকসভা ভোটে আগের ফল মোটামুটি ধরে রাখতে পারলেও, এখন ধস ঠেকাতে তেমন কিছুই করে উঠতে পারছেন না। যদিও এখনও তাঁর দাবি, কর্মী-সমর্থকরা সঙ্গেই আছেন।
কিন্তু এক সঙ্গে পাঁচ রাজ্য থেকে ধাক্কা খেয়ে কী করবেন রাহুল-সনিয়া? অসমে বিধানসভা ভোটের এখনও বছর দুই বাকি। কিন্তু হিমন্তের ইস্তফার পর দল ভাঙা ও গগৈ সরকারের পতনের আশঙ্কা রয়েছে। অন্য দিকে মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা ও জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচন সামনেই।
কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের তরফে প্রাথমিক ভাবে আজ বলা হয়েছে, “কারও ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা কোনও রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী বদলের জন্য যথেষ্ট কারণ হতে পারে না।” দলের মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির কথায়, “রাণে নিজে মুখ্যমন্ত্রী হতে চান। সেই উচ্চকাঙ্ক্ষা তিনি গোপনও করছেন না। হিমন্তও উচিত কাজ করেননি।”
তবে তলে তলে উদ্বিগ্ন কংগ্রেস নেতৃত্ব। লোকসভা ভোটে ধরাশায়ী হওয়ার পর মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানায় বিধানসভা ভোটে জয়ের ব্যাপারে এমনিতেই খুব আত্মবিশ্বাসী নয় কংগ্রেস। তার ওপর অসমেও ক্ষমতা চলে গেলে জাতীয় রাজনীতিতে আরও দুর্বল হয়ে পড়বে দল। ফলে প্রকাশ্যে সাহসী মুখ দেখালেও দুপুর থেকেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় নেমে পড়েন আহমেদ পটেল, গুলাম নবি আজাদের মতো রাজনৈতিক ম্যানেজাররা।
লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই অসম, হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্রে মুখ্যমন্ত্রী বদল নিয়ে দলের অন্দরে প্রবল চাপে রয়েছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। কিন্তু মহারাষ্ট্রে পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ ও হরিয়ানায় ভূপেন্দ্র সিংহ হুডাকে যে সরানো হবে না, সেটা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন সনিয়া গাঁধী। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে সনিয়া বুঝতে পেরেছেন, ভূপেন্দ্র সিংহর কোনও বিকল্প নেতা এখনও নেই হরিয়ানায়। তাঁকে সরালে ফল আরও খারাপ হবে।
মহারাষ্ট্রের ক্ষেত্রে হাইকম্যান্ডের বক্তব্য হল, পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ সম্পর্কে দলের অন্দরে ও শরিক এনসিপি নেতা শরদ পওয়ারের যত অসন্তোষই থাক, ভোটের মাত্র দু’মাস আগে মুখ্যমন্ত্রী বদল করে কোনও লাভ হবে না। বরং পৃথ্বীরাজকে মুখ্যমন্ত্রী পদে রেখেই মহারাষ্ট্রে বিক্ষুব্ধ নেতাদের অসন্তোষ সামলাতে মরিয়া কংগ্রেস সভানেত্রী।
অসমের বিষয়টি আলাদা। তরুণ গগৈয়ের বিরুদ্ধে অনেক বিধায়কের ক্ষোভ থাকায় তাঁকে সরানোর ব্যাপারে কিছুটা নিমরাজি ছিল দল। বিধায়কদের সঙ্গে কথা বলতে মল্লিকার্জুন খড়্গেকে পাঠানো হয়। সম্প্রতি হিমন্তর নেতৃত্বে গগৈ-বিরোধী বিধায়করা দিল্লিতে এলে তাঁদের এই বার্তা দেওয়া হয় যে শীঘ্রই মুখ্যমন্ত্রী বদল হবে। কিন্তু হিমন্তকে মুখ্যমন্ত্রী করার ব্যাপারে এখন বেঁকে বসেছেন রাহুল। তাঁকে পরামর্শদাতারা বুঝিয়েছেন যে, হিমন্ত দিল্লির কংগ্রেস নেতাদের নানা ভাবে প্রভাবিত করে ক্ষমতা দখল করতে চাইছেন। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করছেন, রাহুলের এই মনোভাব জেনেই অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছেন হিমন্ত। দলের এক শীর্ষ নেতা আজ বলেন, “মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিয়ে হিমন্ত আসলে নিজের সম্ভাবনাই নষ্ট করলেন। তা ছাড়া গগৈ তিন বারের মুখ্যমন্ত্রী। তাঁকে অসম্মানজনক ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরানো যে সম্ভব নয় সেটা বোঝা উচিত ছিল।”
কংগ্রেস শীর্ষ সূত্র বলছে, হিমন্তকে মুখ্যমন্ত্রী করা না হলেও তাঁর পছন্দের কাউকে সেই পদে বসানোর বিকল্প ভাবনা এখনও রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy