Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
National News

ভেমুলার স্মৃতি উস্কে দলিত ছাত্রের মৃত্যুতে উত্তপ্ত হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়

মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন পড়ুয়ারা। বিহার থেকে আসা পড়ুয়া অভিষেক নন্দন জানালেন, গত ১৫ নভেম্বর জ্বর এবং গা ব্যথা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়েছিলেন ওড়িশা থেকে পিএইচডি করতে আসা ছাত্র রশ্মিরঞ্জন সুনা।

মৃত ছাত্র রশ্মিরঞ্জন সুনা। নিজস্ব চিত্র।

মৃত ছাত্র রশ্মিরঞ্জন সুনা। নিজস্ব চিত্র।

উজ্জ্বল চক্রবর্তী
হায়দরাবাদ শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৮ ১২:৩২
Share: Save:

তেলঙ্গানায় ভোটের আর দশ দিন বাকি। তার মধ্যেই বছর দুয়েক আগের রোহিত ভেমুলা স্মৃতি ফিরে এল হায়দরাবাদ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। পদার্থবিদ্যা বিভাগের এক দলিত ছাত্রের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে উঠল বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। আবারও জোরালো হয়ে উঠল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পড়ুয়াদের স্বার্থ না দেখার অভি়যোগ।

মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন পড়ুয়ারা। বিহার থেকে আসা পড়ুয়া অভিষেক নন্দন জানালেন, গত ১৫ নভেম্বর জ্বর এবং গা ব্যথা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়েছিলেন ওড়িশা থেকে পিএইচডি করতে আসা ছাত্র রশ্মিরঞ্জন সুনা। চিকিৎসক তাঁকে জ্বরের জন্য কিছু ওষুধ দেন। কিন্তু, সেই ওষুধে না কমায় তিনি ফের ১৯ তারিখ ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান। তখন তাঁকে চিকিৎসক স্থানীয় গাচ্চিবউলির এক নার্সিংহোমে রেফার করেন। ওই পড়ুয়া সেই সময় অন্য কোনও নার্সিংহোমে পাঠানোর কথা বলেন। তাঁর কথা যদিও শোনা হয়নি।

ওই নার্সিংহোমে যাওয়ার পর রশ্মিরঞ্জনের রক্ত পরীক্ষা করা হয়। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের দাবি, সেই রিপোর্টে ডেঙ্গির কোনও নমুনা মেলেনি। ক্রমশ ওই ছাত্রের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তিন দিন পরে তাঁর ফের রক্ত পরীক্ষা করা হয়। ধরা পড়ে ডেঙ্গি। কিন্তু তত ক্ষণে অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছে।এর পর তাঁকে অন্য এক নার্সিংহোমে রেফার করা হয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার পর দিনই গত রবিবার ২৫ নভেম্বর মারা যান বছর ছাব্বিশের রশ্মিরঞ্জন।

আরও পড়ুন: শবরীমালার তীর্থযাত্রায় যাওয়ার ‘শাস্তি’! কেরলের সমাজকর্মীকে সাসপেন্ড করল বিএসএনএল

অভিষেক নন্দন বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই ঘটনায় নিজেদের দায় অস্বীকার করতে পারেন না।’’ তাঁর দাবি, বছর দুয়েক আগে গাচ্চিবউলির ওই হিমাগ্রি নার্সিংহোমকে কালো তালিকাভুক্ত করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়। পরে কী ভাবে তারা ফের তালিকায় ঢুকে পড়ে তা পড়ুয়ারা জানেন না। রোগী বারণ করা সত্ত্বেও ওই নার্সিংহোমে রশ্মিরঞ্জনকে প্রায় জোর করে পাঠানো হল কেন, তা নিয়ে সরব হয়েছে অভিষেকের সংগঠন এসএফআই-সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক’টি ছাত্র সংগঠন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যাতে ওই নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতিরঅভিযোগ নিয়ে পুলিশের কাছে এফআইআর করেন, সেই দাবি তুলেছে তারা। পাশাপাশি, রশ্মিরঞ্জন‌ের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথাও ছাত্র সংগঠনগুলো বলেছে। কিন্তু, কর্তৃপক্ষ সে সব দাবি মানতে নারাজ। গত সোমবার থেকে আন্দোলনে নেমেছেন পড়ুয়ারা।

রোহিত ভেমুলার মৃত্যুর প্রতিবাদ। ফাইল চিত্র।

এই মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)-এর। তারা পড়ুয়াদের ওই সব দাবি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে। যদিও এসএফআই এবং অম্বেডকর স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (এএসএ)-এর অভিযোগ, এবিভিপি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হয়ে কাজ করছে। তারা পড়ুয়াদের স্বার্থ দেখছে না। রোহিত ভেমুলার এক সহপাঠী বিজয় পেডামপুডি বললেন, ‘‘রোহিতের মৃত্যু থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কোনও শিক্ষাই নেয়নি। কী ভাবে পড়ুয়াদের স্বার্থ দেখতে হয়, তা যেমন কর্তৃপক্ষ জানেন না, তেমনই জানে না এবিভিপি। শুধু ছাত্র রাজনীতি করলেই হয় না, ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থ দেখাটাই ছাত্র সংসদের আসল কাজ।’’

আরও পড়ুন: পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ২৫ সেনাবাহিনীর তালিকায় ভারত

২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক হস্টেলে আত্মহত্যা করেছিল রোহিত ভেমুলা নামে এক দলিত ছাত্র। সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, এবিভিপির কথা শুনে তাঁরা রোহিত-সহ পাঁচ পড়ুয়ার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেন। বিশ্ববিদ্যালয় হস্টেল তাঁদের ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ক্লাস ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিষয়েই তাঁদের প্রবেশাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। পরে জানা যায়, দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরও সায় ছিল বিষয়টিতে।

রোহিতের মৃত্যুর পর গোটা দেশে আলোড়ন পড়ে যায়। এ দিন এসএফআইয়ের এক সদস্য কুলদীপ সিংহ বলেন, ‘‘রশ্মিরঞ্জনের মৃত্যুর সঙ্গে রোহিতের আত্মহত্যার আপাত ভাবে কোনও মিল নেই। কিন্তু, ছাত্রছাত্রীদের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মনোভাব এখনও বদলায়নি। বিশেষ করে দলিত এবং অনগ্রসর পডুয়াদের ক্ষেত্রে সেটা ভীষণ ভাবে স্পষ্ট। রোহিতের পর রশ্মিরঞ্জনের মৃত্যুই তার প্রমাণ। এবং এবিভিপি মদতেই গোটাটা হয়।’’

এবিভিপি যদিও এই অভিযোগ মানতে নারাজ। তাদের তরফে অভিষেক মলহোত্র বলেন, ‘‘আমরা ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গেই আছি। রশ্মিরঞ্জনের পরিবার যাতে ক্ষতিপূরণ পায় এবং পুলিশ যাতে ওই নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়, সে চেষ্টাও করছি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে।’’ ­­­

আগামী ৭ ডিসেম্বর এ রাজ্যে ভোট। তার আগে পুলিশ বিষয়টি খুব একটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠুক সেটা চাইছে না। বিষয়টি যাতে রোহিতের মতো বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের বাইরে না ছড়িয়ে পড়ে সে চেষ্টাও করছে তারা। তবে পড়ুয়াদের স্পষ্ট মত, তাদের দাবি না মেটা পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে।

(দেশজোড়া ঘটনার বাছাই করা সেরাবাংলা খবরপেতে পড়ুন আমাদেরদেশবিভাগ।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hyderabad university Telengana Rohit Vemula
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE