Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সারোগেসি বিলে ‘বঞ্চনা’, বিতর্ক তুঙ্গে

সারোগেসিতে রাশ টানতে গিয়ে বড়সড় প্রশ্নের মুখে কেন্দ্রীয় সরকার। কারণ, নিঃসন্তান দম্পতির জন্য একটুখানি জানলা খুলে রাখলেও বঞ্চনার তালিকাটি সুদীর্ঘ। সেখানে বাদ সমকামীরা। বাদ লিভ-ইন সম্পর্কে থাকা মানুষরা। বাদ সিঙ্গল পেরেন্টও।

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৪০
Share: Save:

সারোগেসিতে রাশ টানতে গিয়ে বড়সড় প্রশ্নের মুখে কেন্দ্রীয় সরকার। কারণ, নিঃসন্তান দম্পতির জন্য একটুখানি জানলা খুলে রাখলেও বঞ্চনার তালিকাটি সুদীর্ঘ। সেখানে বাদ সমকামীরা। বাদ লিভ-ইন সম্পর্কে থাকা মানুষরা। বাদ সিঙ্গল পেরেন্টও। এখানেই প্রশ্ন উঠছে— পরিবার কাকে বলে, তা-ও কি তবে ঠিক করে দেবে সরকার? সন্তানকে বড় করার ক্ষমতা কাদের আছে, কাদের নেই— সেটিও কি বাতলে দেবে তারা?

গত কাল ঢাকঢোল পিটিয়ে নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভা সারোগেসি বিলের খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে। বাণিজ্যিক সারোগেসি বন্ধ করে মহিলাদের শোষণ রুখে দেওয়ার উদ্দেশ্যটি যে মহৎ, তা নিয়ে বিশেষ বিতর্ক নেই। যদিও এ ভাবে কড়াকড়ি করলে সারোগেসির চোরাগোপ্তা কারবারই ফুলেফেঁপে উঠবে বলে আশঙ্কা অনেকের। কিন্তু তা বাদেও নতুন বিলটি যে ভাবে শুধুমাত্র বিবাহিত দম্পতিদের সারোগেসির অধিকার দিয়েছে, সেটা আদৌ প্রগতিশীলতার পরিচয় কি না, সে তর্ক থাকছেই।

গত এপ্রিলেই এই বিলের একটি খসড়া কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তা নিয়ে মন্ত্রীদের মধ্যেই প্রবল বিরোধ ছিল। যে কারণে নরেন্দ্র মোদী তখন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের অধীনে একটি মন্ত্রিগোষ্ঠী গঠন করে দেন। সেই মন্ত্রিগোষ্ঠীর সুপারিশের ভিত্তিতেই গত কাল মন্ত্রিসভা বিলের খসড়াটি অনুমোদন করে ফেলে। দেশের সামনে বিলটি তুলে ধরতে খোদ সুষমাকেই সামনে আসার অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তার পরেও মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে মতানৈক্য রয়ে গিয়েছে। মন্ত্রিসভার এক সদস্যই যেমন আজ বলেন, ‘‘এই বিলে এখনও অনেক ফাঁকফোকর রয়েছে। অনেক বড় অংশ বাদ দেওয়া হয়েছে। আমি নিশ্চিত এটি যখন সংসদের স্থায়ী কমিটির কাছে আসবে, তখন সব দলের সাংসদরা এর খুঁটিনাটি দিকগুলি বিবেচনা করে দেখবেন।’’

মন্ত্রীমশাই যে কথাটি প্রকাশ্যে বলতে পারেননি, সেটিই খোলাখুলি বলেছেন রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত। মোদী সরকারের সেনাপতি অরুণ জেটলির ঘনিষ্ঠ বলেই মনে করা হয় তাঁকে। স্বপন আজ টুইট করেছেন, ‘‘বিলটি নতুন করে পর্যালোচনার প্রয়োজন আছে। যে বাবা-মায়েদের এই সুবিধা থেকে বাদ দেওয়া হল, সেই পরিধিটা অনেকটাই বড়। তাঁদের সুখ থেকে বঞ্চিত করবেন না।’’ কাল সুষমাকে যখন সমকামী-সিঙ্গল পেরেন্ট-লিভ-ইন সম্পর্কে থাকা দম্পতিদের বাদ দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তখন তাঁর জবাব ছিল, ‘‘যে কোনও দেশ নিজের হিসেবে আইন তৈরি করে। যা এ দেশের মেজাজের বিরুদ্ধে, যা এখনও আইনি স্বীকৃতি পায়নি, তার ভিত্তিতে কী করে আইন করা যায়?’’ এই ভাবনার পিছনে অনেকেই আরএসএসের দর্শনের ছাপ দেখছেন। প্রশ্ন উঠছে, এ দেশের আইন মোতাবেক সিঙ্গল পেরেন্টরা যদি দত্তক নিতে পারেন, সারোগেসির মাধ্যমে সন্তানের জন্ম দিতে বাধা কেন? সমকামীদের নিয়ে লড়াই করা ‘স্পেস’ সংগঠনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য অঞ্জন জোশী বলেন, ‘‘সমকামীরা সন্তান পালন করতে পারবেন না, এমন ধারণার ভিত্তিতে সরকার কেন বৈষম্যমূলক আইন আনতে চলেছে? এই সরকারই সদ্য রূপান্তরকামীদের নিয়ে বিল পেশ করেছে। অথচ সারোগেসির অধিকার কেড়ে নিচ্ছে।’’

কেন্দ্রের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কর্তারা অবশ্য বলছেন, কারা বাদ পড়ছেন, সেটি মাথায় রেখে এই বিল আনা হয়নি। সারোগেসির মাধ্যমে এ দেশে প্রায় ৯০০ কোটি টাকার ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠেছে। সেটা বন্ধ করাই উদ্দেশ্য। যাঁদের বাবা-মা হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে, তাঁদের জন্য দত্তক নেওয়ার পথ এখনও খোলা। কিন্তু সারোগেসির নামে কোনও গরিব মহিলাকে অর্থের বিনিময়ে ব্যবহার করাটা সরকার মানবে না। সে কারণে সরকার সত্যিকারের নিঃসন্তান দম্পতির স্বার্থই একমাত্র সুরক্ষিত করতে চাইছে। নারীবাদী কর্মী কবিতা কৃষ্ণণের মতে, ‘‘সরকারের ভাবনা সঠিক পথে রয়েছে। কিন্তু এক দিকে আইন করে অন্য দিকে পিছনের দরজা দিয়ে বাণিজ্যিক সারোগেসিকে ডেকে আনা হবে না তো?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Surrogacy Bill Debate
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE