Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ডর্নিয়ের খুঁজে দিল যন্ত্র-ডুবুরির চোখই

ইনিও ডুবুরি! এক জোড়া চোখ নিয়ে সাগরের তলায় খুঁজে বেড়াচ্ছেন লক্ষ্যবস্তুকে। চোখে পড়তেই বাড়িয়ে দিচ্ছেন হাত। নিপুণ কায়দায় সেই সব জিনিস তুলে এনে পুরে ফেলছেন ‘ঝোলা’য়। তার পরে উঠে আসছেন সাগরে ভাসতে থাকা জাহাজে।

ক্যামেরায় ধরা পড়া ধ্বংসাবশেষ।

ক্যামেরায় ধরা পড়া ধ্বংসাবশেষ।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৫ ০৩:৩৬
Share: Save:

ইনিও ডুবুরি! এক জোড়া চোখ নিয়ে সাগরের তলায় খুঁজে বেড়াচ্ছেন লক্ষ্যবস্তুকে। চোখে পড়তেই বাড়িয়ে দিচ্ছেন হাত। নিপুণ কায়দায় সেই সব জিনিস তুলে এনে পুরে ফেলছেন ‘ঝোলা’য়। তার পরে উঠে আসছেন সাগরে ভাসতে থাকা জাহাজে।

এই ডুবুরি ঠিক রক্তমাংসের মানুষ নন। আদ্যোপান্ত একটি যন্ত্র। বলা চলে যন্ত্রমানবের একটি প্রজাতি। পোশাকি ভাষায় যার নাম ‘রিমোটলি অপারেটেড ভেহিকল’। উড়তে উড়তে উধাও হয়ে যাওয়া একটি ডর্নিয়ের বিমান এবং তার পাইলট, কো-পাইলট, নেভিগেটরকে খুঁজতে এমনই একটি যন্ত্রকে নামিয়েছিল ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী। সাগরের প্রায় ৯৯৬ মিটার গভীর থেকে বিমানের ধ্বংসাবশেষ এবং অফিসারদের দেহাবশেষ তুলে আনার পরে উদ্ধারকাজের ভিডিও প্রকাশ করেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। তাতেই ফুটে উঠেছে এই যন্ত্র-ডুবুরির কেরামতি।

কী রয়েছে সেই ভিডিওয়?

অতল গভীরে একটি আলোর রেখা ছুটে চলেছে। তাতেই যন্ত্র-ডুবুরির চোখে উঠে আসছে সাগরের তলার দৃশ্য। খুঁজতে খুঁজতে ক্রমশই এগিয়ে চলেছেন তিনি। এক সময় চোখে পড়ল ডাঁই করা ধ্বংসাবশেষ। সেখানে গিয়ে খুঁজতেই মিলল একটি বিমানের ভাঙা অংশ। আশেপাশে পড়ে রয়েছে যন্ত্রপাতির আরও অনেক টুকরো। সেই জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন যন্ত্র-ডুবুরি। তার পরে লোহার হাত (দেখতে অনেকটা সাঁড়াশির মতো) বার করে সেই সব ধ্বংসাবশেষ অর্থাৎ ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার, ককপিট ভয়েস রেকর্ডার ইত্যাদি তুলে আনলেন তিনি। উপকূলরক্ষী বাহিনী সূত্রের খবর, এর পরেই দৃশ্যটা দিন তিনেক পরের। সন্ধানী চোখে ধরা পড়েছিল মানুষের হাড়ের কিছু টুকরো। সেগুলিও তুলে এনে ঝোলায় পুরেছেন যন্ত্র-ডুবুরি।

গত ৮ জুন চেন্নাই উপকূলে উড়তে উড়তে উধাও হয়ে গিয়েছিল উপকূলরক্ষী বাহিনীর একটি বিমান। উপকূলরক্ষী বাহিনী ও নৌসেনার জাহাজ, ডুবোজাহাজ, বিমান তল্লাশিতে নামলেও কোনও সূত্র খুঁজে পায়নি। তার পরে রিল্যায়্যান্স সংস্থা যান্ত্রিক ডুবুরি-সহ ‘অলিম্পিক ক্যানিয়ন’ নামে একটি ছোট জাহাজ দেয় উপকূলরক্ষী বাহিনীকে। বাহিনীর এক কর্তা বলছেন, সাধারণত জলের তলায় সংস্থার পাইপলাইনে নজরদারি এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজে এই যন্ত্রটি ব্যবহার করে ওই সংস্থা। সাগরের তলায় ডর্নিয়েরের ধ্বংসাবশেষ এবং অফিসারদের দেহ সন্ধানে তাই ওই যন্ত্র-ডুবুরির উপরেই ভরসা করা হয়েছিল। ‘‘বাহিনীর ভরসার মর্যাদা অবশ্য দিয়েছে ক্যানিয়ন। যন্ত্র-ডুবুরি যে-কাজ করেছেন, কোনও মানুষ ডুবুরিকে দিয়ে সেটা হত না,’’ বলছেন উপকূলরক্ষী বাহিনীর ওই কর্তা।

উপকূলবাহিনীর অনেক কর্তারই দাবি, এমন যন্ত্রের সাহায্যে সমুদ্রগর্ভে উদ্ধারকাজ চালানো সারা বিশ্বেই বিরল। যন্ত্রের পাশাপাশি উদ্ধারকাজে উপকূলরক্ষী বাহিনী, নৌসেনা, তামিলনাড়ু পুলিশের যে-সব অফিসার ছিলেন, তাঁদেরও প্রশংসা করছেন বাহিনীর কর্তারা। বাহিনীর সর্বভারতীয় মুখপাত্র কম্যান্ডান্ট আই জে সিংহ বলেন, ‘‘যন্ত্র ও মানুষের সমন্বয়ই সাফল্য এনে দিয়েছে। সাগরের এত গভীরে উদ্ধারকাজ চালানো চাট্টিখানি কথা নয়!’’

মানুষ যেখানে অসহায়, সেখানে কী ভাবে কাজ করেছেন যন্ত্র-ডুবুরি? সূত্রের খবর, বঙ্গোপসাগরের যে-এলাকায় বিমানটিকে শেষ বারের জন্য রেডারে দেখা গিয়েছিল, সেখানে জাহাজটিকে নিয়ে যাওয়া হয়। তার পরে জাহাজ থেকে জলে নামানো হয় ওই যন্ত্র-ডুবুরিকে। জলের তলায় ডুবুরির চোখ অর্থাৎ ক্যামেরায় যে-দৃশ্য ধরা পড়েছে, তা চলে এসেছে জাহাজের কন্ট্রোল রুমে। ইঞ্জিনিয়ারেরা সেই দৃশ্য দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করেছেন। অর্থাৎ কোথায় দাঁড়াতে হবে, কী ভাবে সাঁড়াশি হাত দিয়ে ধ্বংসাবশেষ তুলে আনতে হবে, সেই নির্দেশ গিয়েছে যন্ত্র-ডুবুরির কাছে। ক্যামেরায় তার কাজ শেষ হওয়ার পরে তাকে জলের তলা থেকে তুলে এনেছেন ইঞ্জিনিয়ারেরাই।

ছবি: উপকূলরক্ষী বাহিনীর সৌজন্যে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dornier Chennai coast skeletal sea goa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE