Advertisement
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

টোম্যাটো বেচে লাভ নেই! বেঁচে থাকাই দায়

বৃষ্টির অভাবে শুকিয়ে  যাওয়া, কাঁচা, আধপাকা টোম্যাটো ভর্তি গাছ উপড়ে চাষিরা ফেলে রেখেছেন খেতেই।

—প্রতীকী ছবি

—প্রতীকী ছবি

প্রেমাংশু চৌধুরী
শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৪৫
Share: Save:

জমির রং লাল।

হলদে রঙের ঘাসে ঢাকা সহ্যাদ্রি পর্বতমালার কোলে সুরগণা তহশিল। নীচে উঁচু-নিচু খেতের পাশে টোম্যাটো ফেলে দিয়েছেন চাষিরা। পিষে যাচ্ছে পায়ের তলায়। গরু-ছাগল খাচ্ছে। বৃষ্টির অভাবে শুকিয়ে যাওয়া, কাঁচা, আধপাকা টোম্যাটো ভর্তি গাছ উপড়ে চাষিরা ফেলে রেখেছেন খেতেই।

মরাঠাওয়াড়া, উত্তর ও পশ্চিম মহারাষ্ট্রের বিস্তীর্ণ এলাকা খরার কবলে। তার আঁচ মিলছে এই সুরগণায়। এমনিতেই পাথুরে, অসমান জমিতে জলের অভাব। তার উপর এ বছর তেমন বৃষ্টি হয়নি। কুয়োর জল তলানিতে। বাঁধে ধরে থাকা জলও কমছে। চাষিদের মাথায় হাত। সেচের খাল অনেক দূরে। জল জমিতে টেনে আনতে পাম্প চালাতে হবে। কিন্তু ডিজেলের দাম নাগালের বাইরে।

সুরগণার শ্রীরাম পওয়ারের ১০ একর খেতের টোম্যাটো গাছ সেখানেই শুকিয়েছে। শ্রীরাম বলেন, ‘‘দিল্লির সরকার ডিজেলের দাম কমাল না। আমার খেতেও জল এল না।’’ যে টোম্যাটো ফলেছিল, তা-ও খেতের পাশে ফেলে দিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় বিহারে খুন তিন ব্যবসায়ী

শ্রীরামের স্ত্রী শকুন্তলা প্রশ্ন তোলেন, ‘‘টোম্যাটো বেচে কী লাভ? বিশ কেজির ঝুড়িতে ২০-২৫ টাকা দাম মিলছে। মানে কেজিতে দু’টাকা দরও নয়। এ দিকে জমি থেকে টোম্যাটো তুলতে দৈনিক ২৫০ টাকা মজুরি দিতে হবে। তার পরে বাজারে নিয়ে যাওয়ার খরচ। পুরোটাই লোকসান। তাই সব টোম্যাটো ফেলে দিয়েছি। খেয়ে যাক গরু-ছাগলে। এত অনিশ্চয়তা নিয়ে চাষ করা যায় না।’’ তাই তাঁদের ছেলেরা চাষবাস ছেড়ে হাইওয়ের ধারে ধাবা খুলেছেন। আর কিষাণ লং মার্চ-এ হেঁটেছেন শকুন্তলারা। কারণ, ১৫১টি তহশিল, রাজ্যের শতকরা ৬০ ভাগের বেশি চাষির জমি খরার কবলে। নরেন্দ্র মোদী সরকারের কাছে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার ত্রাণ চেয়ে হাত পেতেছে বিজেপি সরকার।

উপায় কী? লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি শাসিত মহারাষ্ট্র-গুজরাত সীমানার সরগুণায় উড়ছে লাল ঝান্ডা। কংগ্রেস-এনসিপির সমর্থনে সিপিএমের সাত বারের বিধায়ক জিভা পাণ্ডু গাভিটকে লোকসভায় প্রার্থী করার আলোচনা শুরু হয়েছে সরগুণায়। উত্তরপ্রদেশের পরে মহারাষ্ট্রে সবথেকে বেশি সংখ্যক লোকসভা আসন। এই ৪৮টি আসনে ধস নামলে মোদীর প্রত্যাবর্তন কঠিন হতে পারে।

উপায় তো খুঁজছেন জনার্দনেরাও। শ্রীরাম-শকুন্তলার জমিতে কাজ করতেন জনার্দন গাঙ্গোডে, অহল্যাবাই শেকনার মতো আদিবাসী খেতমজুরেরা। তাঁরা রোজ শকুন্তলার বাড়ির সামনে বসে থাকেন। কিন্তু কাজ মেলে না। শকুন্তলার আফসোস, ‘‘আমাদেরই এত লোকসান। ওদের পেট চলবে কী করে?’’ হাইওয়ের ধারে তাই পেয়ারা বিক্রি করেন জনার্দন। উল্টোদিকে পেট্রোল পাম্পে হোর্ডিংয়ে নরেন্দ্র মোদীর হাসি মুখ। মোদী সরকার টাকা পাঠালে সমস্যা মিটবে?

জনার্দন হেসে বলেন, ‘‘মোদী তো টয়লেট তৈরি করে দিয়েছেন। সমস্যা মিটেছে?’’ কেন? জবাব আসে, ‘‘চাষের জমিতে জল নেই। কুয়োয় জল নেই। পায়খানায় ঢালার জল কোথা থেকে আসবে?’’

অন্য বিষয়গুলি:

Cultivation Tomato Farmer Profit
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy