Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

‘৯০ ভাগ সময় তো নিজের কথাই বলছেন!’

নিজের গায়ে কার্যত ‘নির্যাতিত’-র স্টিকার সেঁটে গত কাল থেকেই গুজরাতে সহানুভূতির ভোট কুড়োতে নেমে পড়েছেন তিনি। জাতীয়তাবাদ ও ধর্মীয় মেরুকরণকে হাতিয়ার করে গুজরাতের ভোটে এ বার টেনে আনলেন আফজল গুরুর প্রসঙ্গও।

প্রচারে: রাহুল গাঁধী ও নরেন্দ্র মোদী। শনিবার গুজরাতে। ছবি: পিটিআই।

প্রচারে: রাহুল গাঁধী ও নরেন্দ্র মোদী। শনিবার গুজরাতে। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:১৪
Share: Save:

তিনি গরিব মায়ের ছেলে। গুজরাতের ভূমিপুত্র এবং চা-ওয়ালা। তা সত্ত্বেও তিনি কংগ্রেসকে ক্ষমতাচ্যুত করেছেন। সেই হার সহ্য হচ্ছে না বলেই কংগ্রেসের নেতারা তাঁর সম্পর্কে খারাপ শব্দ ব্যবহার করছেন।

অভিযোগকারীর নাম নরেন্দ্র মোদী। নিজের গায়ে কার্যত ‘নির্যাতিত’-র স্টিকার সেঁটে গত কাল থেকেই গুজরাতে সহানুভূতির ভোট কুড়োতে নেমে পড়েছেন তিনি। জাতীয়তাবাদ ও ধর্মীয় মেরুকরণকে হাতিয়ার করে গুজরাতের ভোটে এ বার টেনে আনলেন আফজল গুরুর প্রসঙ্গও। শুধু কি তা-ই? বছর তিনেক আগে অভিযোগ উঠেছিল, সলমন আফজল নিজামি বলে এক কংগ্রেস নেতা মোদীর বাবা-মায়ের পরিচয় নিয়ে কুকথা বলেছিলেন। নিজামি অবশ্য বলেছিলেন, তাঁর অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা হয়েছে। কিন্তু এই বাজারে মোদী সুযোগ ছাড়বেন কেন? বরং সেটা নিয়েই বলছেন, ওই নেতা ঘরে ঘরে আফজল গুরুর জন্ম হবে বলেন। ভারতীয় সেনাকে ‘ধর্ষক’ বলেন এবং আজাদ কাশ্মীরের দাবি তোলেন।

এক কথায়, শুধু নালিশের পাহাড় গড়ে তুলছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী!

যা নিয়ে রাহুল গাঁধী এ দিন মোদীর জন্মস্থান ভাডনগরে দাঁড়িয়ে কটাক্ষ করেছেন, ‘‘ভাষণের ৯০ ভাগ সময় তো নিজের কথাই বলছেন! কিন্তু ভোটটা তো মোদীজি বা আমাকে নিয়ে নয়। গুজরাতের জনতার ভবিষ্যৎ নিয়ে।’’ তিনি যে উন্নয়নকেই হাতিয়ার করে প্রচার চালিয়ে যাবেন, তা স্পষ্ট করে দিনভর মোদীকে উন্নয়ন নিয়ে একের পর এক তোপ দেগে গিয়েছেন। প্রথমে পাটান, পরে ভাডনগরের সভায় রাহুলের প্রশ্ন, ‘‘বিজেপির ২২ বছরের রাজত্বে ‘বিকাশ’ বা উন্নয়নের কথা মোদী বলছেন না কেন’’ রাহুলের অভিযোগ, উন্নয়নের প্রশ্নে ভোট মিলবে না বুঝেই মোদী অন্য সব বিষয়ে কথা বলছেন। আর খোদ অমিত শাহর ছেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ বলে এ বার ভোটে দুর্নীতির প্রসঙ্গ তুলছেনই না। মোদীর গড় মেহসানায় রাহুলের তোপ, ‘‘বিকাশের কথা বলুন, শুধু আবেগে চিঁড়ে ভেজে না! ’’

আরও পড়ুন: ‘আমি ওদের দলে নই’ বলেও হাসি-ঠাট্টা-আড্ডা একসঙ্গে ভোটের দিনে

গুজরাতে আজ প্রথম দফায় ৮৯টি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়েছে। এই সব কেন্দ্রে প্রচার শেষ হয়ে গেলেও রাজ্যের অন্যত্র প্রচার করতে গিয়ে মোদী-রাহুল দু’জনেই পাখির চোখ করেছেন আজকের ভোটারদেরও। তরুণ প্রজন্মকে কাছে টানতে দু’জনেই প্রথম বারের ভোটারদের শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন।

কিন্তু মোদী সেখানেই থামেননি। কংগ্রেসের কোন নেতা কবে তাঁর সম্পর্কে কী বলেছিলেন, তা নিয়ে শুক্রবারই সভায় সভায় ঘুরে নালিশ করেছিলেন। আজ উত্তর গুজরাতের লুনাভাডায় বলেন, ‘‘কংগ্রেসের যুব নেতা সলমন নিজামি গুজরাতে প্রচারে এসেছে। তিনি ট্যুইটারে রাহুলজির বাবা, দাদুর সম্পর্কে লেখেন। তার পর প্রশ্ন তোলেন, মোদীর বাবা, মা কে? এমন কথা তো শত্রুর সম্পর্কেও বলে না!’’

মণিশঙ্কর আইয়ারের মোদী সম্পর্কে ‘নীচ’ মন্তব্য নিয়ে ব্যাকফুটে থাকা কংগ্রেস এ দিন নিজামির সঙ্গে দলের সম্পর্ক অস্বীকার করেছে। পাল্টা রাহুল, মনমোহনের সঙ্গে নিজামির ছবি প্রকাশ করেছে বিজেপি। এমনকী মোদী নিজেও সভায় বলেন, ‘‘নিজামি আজাদ কাশ্মীরের নেতা। আপনারা ওঁদের ভোট দেবেন না কি?’’

মোদী এর আগে ঔরঙ্গজেব থেকে রামমন্দির— কিছুই বাদ দেননি। আজ যে ভাবে নিজামির মতো এক স্থানীয় নেতাকেও প্রচারে টেনে আনলেন, তাতে স্পষ্ট, গুজরাতের সম্মানের লড়াইয়ে কোনও অস্ত্রই বাকি রাখতে চান না তিনি।

মোদীর পাতা ফাঁদে রাহুল পা দেননি। কিন্তু মোদী যখন জাতকে হাতিয়ার করছেন, তখন রাহুল গুজরাতের উনায় দলিতদের উপর হামলার প্রসঙ্গ তুলে বলেছেন, ‘‘যখন দলিত, পাতিদারদের ঘরে হামলা হয়েছিল, তখন কি মোদী তাঁদের বাড়িতে গিয়েছিলেন?’’ ‘‘প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে বিকাশ উধাও কেন? এ বার কি ভাষণেই শাসন হবে?’’ প্রশ্ন তাঁর।

গুজরাত নির্বাচন নিয়ে সব খবর পড়তে এখানে ক্লিক করুন

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE