তনিকা সরকার। —নিজস্ব চিত্র।
বাংলা খানিক ব্যতিক্রম। তবে এ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে একেলে মেয়েরাও ঢেলে ভোট দিয়েছেন বিজেপিকে। এই প্রেক্ষাপটে এ দেশের মেয়েদের মননে হিন্দুত্ববাদ বা সঙ্ঘ পরিবারের ভূমিকা কাটাছেঁড়া করছিলেন ইতিহাসবিদ তনিকা সরকার।
তাঁর বক্তব্য, সঙ্ঘের সংগঠনের শীর্ষস্তরে নারীর জায়গা নেই। মেয়েদের বা দলিতদের অধিকারের চিন্তা তাদের কাছে কার্যত সন্ত্রাসের সমান। তবু শিক্ষিত মেয়েদের একটা অংশও এই আদর্শে প্রভাবিত হচ্ছে। কেন? এর পিছনে মগজধোলাইয়ের একটা ধারাবাহিকতা দেখছেন তনিকাদেবী। সোমবার বিকেলে কলকাতায় ‘রায়া দেবনাথ স্মারক বক্তৃতা’য় এ দেশের বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের শাখা-উপশাখার বিষয়ে তাঁর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন তনিকা। বাবরি ধ্বংসের প্রাক-পর্ব থেকে প্রায় দু’দশক সঙ্ঘ বা সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন সংগঠনের ভিতরে মেলামেশা করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘নানা ঐতিহাসিক কারণে কম-বেশি অনেকের মধ্যেই সাম্প্রদায়িকতার নানা পরত থাকে। আরএসএসের কাজ সেই জটগুলো ছাড়িয়ে একটা মূল ধারার মধ্যে নিয়ে আসা।’’ গায়ত্রী স্পিভাক চক্রবর্তীর সঙ্গে এমনই একটি মহিলা সংগঠনকে দেখে তনিকাদের মনে হয়েছিল, মতাদর্শে হিটলারের নাৎসিদের সঙ্গে কী চমকপ্রদ মিল! কানাডিয়ান চিত্রপরিচালকের ‘দ্য ওয়র্ল্ড অ্যাট হার ফিট’ তথ্যচিত্রটিতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের একটি মেয়ে কৃতজ্ঞ, জন্মের পরে বাবা তাঁকে প্রাণে মারেননি। শুধু এই জন্যই বাবার যে কোনও আদেশ তাঁর কাছে শিরোধার্য। তবে মেয়েটি নিজেও জানেন না, তাঁর ভিতরে এত রাগ কেন? সেই রাগ তিনি মুসলিমদের উপরে উগরেই শান্তি পান!
নারী-হিন্দুত্ব-ফ্যাসিবাদ শীর্ষক আলোচনার আসরে এ হেন রাজনৈতিক মননের কারণ খুঁজতে তনিকা বলেন, ‘‘গোলওয়ালকর, সাভারকরদের লেখায় একটি মুসলিম শত্রু সত্তা উঠে এসেছে। শিবাজীর সেনারা কেন মুসলিম মেয়েদের ধর্ষণ করেননি বলেও সাভারকরের আপসোস। দেশভাগের সময়ে হিন্দু এবং মুসলিম, উভয় শিবিরই পরস্পরকে পীড়নে অভিযুক্ত। কিন্তু সাধারণ হিন্দুকে বোঝানো হয়েছে, হিন্দুরা ও-সব করতেই পারে না!’’ তনিকা বলছিলেন, ‘‘মুসলিম বিদ্বেষের এই পরম্পরাই সঙ্ঘী বা হিন্দুত্ববাদী আদর্শের ভিত্তি। অস্পৃশ্যতার কুপ্রথা বা সমকামী বিদ্বেষেও ওঁরা বড়জোর মোলায়েম প্রলেপ দিয়েছেন। কোনও সমানাধিকারে বিশ্বাস নয়! রূপান্তরকামীদেরও দলে টানা হয়েছে, হিন্দু পুরাণের কিন্নর হিসেবে।’’ তনিকার কথার সূত্রে সমাজকর্মী শর্মিষ্ঠা দত্ত গুপ্তও বলছিলেন, আজকের ভারতে ধর্মান্তর নিয়ে নানা আইনে বিভাজনের বিষের কথা। উদ্যোক্তাদের তরফে মুনমুন বিশ্বাস, শতাব্দী দাশও আলোচনায় শামিল হন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy