রাজনীতিতে তিনি ‘বহিরাগত’। সেই কারণেই প্রধানমন্ত্রীর ‘স্বচ্ছ ভারত’ প্রকল্পের প্রশংসা নিয়ে তাঁকে কোণঠাসা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করলেন কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর।
একটি চ্যানেলকে তারুর বলেন, “হয়তো আমি কে এবং আমার আচার-আচরণ যে রকম তা মেনে নিতে অসুবিধে হয়। আর আমাকে দেখা হয় রাজনীতিতে বহিরাগত হিসেবে।” রাষ্ট্রপুঞ্জের এই প্রাক্তন শীর্ষ কর্তা জানান, তাঁর একটা অন্য জগৎ ছিল। অনেক দেরিতে তিনি পেশাদার রাজনীতিতে এসেছেন। সম্ভবতসেই কারণেই দলের মধ্যে তাঁকে মেনে নিতে সমস্যা হচ্ছে। তবে তারুর এ-ও সাফ জানিয়েছেন, গোটা জীবনযাঁরা রাজনীতি করেন, তাঁদের থেকে তিনি আলাদা।
গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘স্বচ্ছ ভারত’ প্রকল্প চালু করার পর প্রশংসায় মুখ খুলেছিলেন তারুর। তার পরেই দেশের ৯ জন প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিকে ওই প্রকল্পের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর করার কথা ঘোষণা করেন মোদী। সেই তালিকায় শুধু যে তারুরের নাম ছিল তা-ই নয়, প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ উৎসাহের সঙ্গে গ্রহণও করেন তারুর। তাতেই এখন তেলে-বেগুনে চটেছেন কংগ্রেস নেতারা। বিষয়টি নিয়ে আগামিকাল কেরল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ববৈঠকে বসছেন বলে সে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ চেন্নিথালা জানিয়েছেন। তারুরের কথায়, “ওঁরা আমার কাছে অভিযোগ জানাতে পারতেন। কিন্তু যে ভাবে প্রকাশ্যে সমালোচনা করছেন, তাতে মনে হচ্ছে, অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে।”
যদিও কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের কোনও নেতা এ ব্যাপারে মুখ খোলেননি। সমস্যা হল, দিল্লির নেতারা তারুরের সমালোচনা করলে স্বচ্ছতা প্রকল্প নিয়ে সংকীর্ণ রাজনীতি করার অভিযোগে কংগ্রেসকে বিঁধতে শুরু করে দেবে বিজেপি। তাই কৌশলে কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতারা এ ব্যাপারে মন্তব্য করছেন না। দলের মুখপাত্র শাকিল আহমেদ বলেছেন, “কেরল প্রদেশ কংগ্রেস শশী তারুরের আচরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ওঁরা বিবেচনা করে কী রিপোর্ট পাঠান, তার জন্য হাইকম্যান্ড অপেক্ষা করছে।” তবে সূত্রের খবর, কেরলের নেতাদের অসন্তোষে সায় রয়েছে দিল্লির। রাহুল গাঁধীর ঘনিষ্ঠ এক সাধারণ সম্পাদক আজ বলেন, “নরেন্দ্র মোদী এক দিকে কংগ্রেস মুক্ত ভারতের কথা বলছেন। আর তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছেন কংগ্রেসেরই এক নেতা। এটা দেখতে কেমন লাগে?”
বস্তুত, তারুরের ‘বিজেপি ঘনিষ্ঠতা’ নিয়ে জলঘোলা হচ্ছে ভালই।তা নিয়েও মুখ খুলেছেন প্রাক্তন এই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। বলেছেন, “আমিনাকি ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য কংগ্রেসি আদর্শ ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেব! এই কথা যে শুনতে হচ্ছে, সেটা খুব বেদনাদায়ক।” তারুরের বক্তব্য, বিরোধী শিবির ভাল কাজ করলেতিনি সব সময়েই অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছেন, আবার ভুল করলে সমালোচনাও করেছেন।
‘স্বচ্ছ ভারত’ অভিযানের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হওয়ার প্রস্তাব তিনি শেষ পর্যন্ত ফিরিয়ে দেবেন কি না, তা অবশ্য এখনও স্পষ্ট করেননি তারুর। তবে ঘুরিয়ে মোদী সরকারকে একহাত নিয়েছেন। টুইটারে তিনি লিখেছেন, “মহাত্মা গাঁধী শুধু বাহ্যিক স্বচ্ছতার কথা বলেননি। তিনি মন, আত্মার স্বচ্ছতার কথাও বলেছেন। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানাচ্ছি তিনি যেন ঘৃণা, অসহিষ্ণুতা ও বিভাজনের রাজনীতি থেকে দেশকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যেও কাজ করেন। যাতে আক্ষরিক অর্থে ভারতে স্বচ্ছতার পরিবেশ কায়েম হয়।” কেউ কেউ অবশ্য মনে করেন, চাপে পড়েই তারুরের এই টুইট।
আসলে তারুর পড়েছেন উভয় সঙ্কটে। মোদীর প্রস্তাব গ্রহণ করলে দলে তাঁর ভবিষ্যৎ সঙ্কটে পড়বে। আবার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেও সমালোচনা হবে। আর সেটা হবে শুধু তারুরের বিরুদ্ধে নয়, কংগ্রেসের বিরুদ্ধেও।
কী করবেন তারুর? কংগ্রেস নেতা সন্দীপ দীক্ষিত বলেন, “আশা করি তিনি ভেবেচিন্তে পদক্ষেপ করবেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy