নিহত মাওবাদী নেতা আরকেজির দাদা লক্ষ্মণ যাদব। ছবি: আর্যভট্ট খান।
স্করপিও গাড়ির চালক, এক পার্শ্বশিক্ষক, মাওবাদী নেতার ছেলে ও ভাইপো, তিন নাবালক— পলামুতে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত মাওবাদী জঙ্গিদের তালিকায় এদের নাম ঘিরে ধোঁয়াশা ছড়িয়েছে।
পরিজনদের দাবি, তাদের কারও সঙ্গে জঙ্গি সংগঠনের কোনও যোগাযোগ ছিল না। পুলিশকর্তারা অবশ্য এ সব মানতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, গত কালের ওই হামলায় নিহত মাওবাদী নেতা আরকেজি-র ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিল নিহত সকলেই। সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছে তার ছেলে সন্তোষ যাদব, ভাইপো যোগেশও।
আজ বিকেলে ডালটনগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিহতদের ময়নাতদন্ত করা হয়। সংঘর্ষে নিহত তিন নাবালকের কোনও আত্মীয়-বন্ধুকে মর্গ চত্বরে দেখা যায়নি। জঙ্গি-বিরোধী অভিযানে নিহত স্করপিও গাড়ির চালক ইজাজের বাবা ইসলাম মিঞা বলেন, ‘‘আমার ছেলে নির্দোষ। ’
সোমবার রাতের ঘটনায় নিহত উদয় যাদব পার্শ্বশিক্ষক ছিল বলেও দাবি উঠেছে। ওই সংঘর্ষে উদয়ের ভাই নীরজেরও মৃত্যু হয়েছে। নীরজের বাবা ঈশ্বর যাদব এ দিন বলেন, ‘‘আমার ছেলেরা মাওবাদী ছিল না। ওদের বিরুদ্ধে পুলিশের খাতায় কোনও মামলাও কখনও রুজু হয়নি।’’
পলামুর এসপি ময়ূর পটেল কিন্তু এ সব কথা মানতে রাজি নন। তিনি বলেন, ‘‘নিহতদের পরিবারের তরফ থেকে যাই বলা হোক না কেন, ওরা যে মাওবাদী ছিল তা নিশ্চিত। কোনও ভুয়ো সংঘর্ষ হয়নি। জঙ্গিরাই প্রথমে নিরাপত্তা বাহিনীর দিকে গুলি চালিয়েছিল।’’
কিছু প্রশ্নের উত্তর এখনও খুঁজছেন নিহতদের পরিজনরা। তাঁরা বলছেন, স্করপিও গাড়িটির কাচে কয়েকটি বুলেটের ‘ক্ষত’ রয়েছে। কিন্তু গাড়িটির ভিতরে রক্তের কোনও চিহ্ন কেন মেলেনি? নিহতদের কাছ থেকে উদ্ধার করা অস্ত্রগুলি গুলি ছোঁড়ার উপযুক্ত কি না, তা নিয়েও তাঁদের সংশয় রয়েছে। পুলিশের বক্তব্য, গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তেই গাড়ি থেকে নেমে পালাতে গিয়েছিল জঙ্গিরা। তাই গাড়ির ভিতরে রক্তের দাগ মেলেনি।
এ দিন ডালটনগঞ্জ সদর থানার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন মাওবাদী নেতা আরকেজি-র দাদা লক্ষ্ণণ যাদব। তাঁর ছেলে যোগেশ ও ভাইপো সন্তোষও গত কালের সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছে। লক্ষ্ণণ বলেন, ‘‘ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক ছিল না। মাওবাদী দলে যোগ দিয়েছিল বলে ওকে ১৯৯৫ সালে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করিয়েছিলাম। তারপর থেকে ও বাড়ি ছাড়া। কিন্তু কী ভাবে আমার ছেলের সঙ্গে ও যোগাযোগ রেখেছিল তা বুঝতে পারছি না।’’ চতরার প্রতাপপুরে বাড়ি লক্ষ্ণণের। তিনি জানান, তার ভাই পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। তবে পরে স্থানীয় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ইঞ্জেকশন দেওয়া, ওষুধ লিখত। পুলিশ তাঁর ভাইকে খুঁজছে জেনে ছেলে যোগেশকে কাকার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে নিষেধ করেছিলেন লক্ষ্ণণ। তাঁর দাবি, যোগেশ মাওবাদীদের সঙ্গে জড়িত নয়। প্রতাপপুরে তাঁর মোবাইল মেরামতির দোকান ছিল। সন্তোষও চাষবাস করত। পুলিশের প্রশ্ন, যোগাযোগ না থাকলে যোগেশ, সন্তোষ সোমবার রাতে আরকেজি-র সঙ্গে পলামুর জঙ্গলে কী করছিল? যাদব পরিবারের এক সদস্যের দাবি, সন্তোষকে কিছু টাকা দিতে ডেকেছিল আরকেজি। সন্তোষের সঙ্গে যোগেশও যায়। সন্তোষ, যোগেশকে গাড়িতে প্রতাপপুরে পৌঁছে দিতে যাচ্ছিল আরকেজি। মাঝরাস্তায় পুলিশের মুখোমুখি পড়ে যায় সকলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy