একখানি পান্না ছিল। তা-ও হারিয়ে গিয়েছে বিশ বছর আগে। ভালবাসাও হারিয়ে গিয়েছে। অনাদরেই পড়ে রয়েছে মোগল রাজকুমারী জাহানারা বেগমের সমাধি।
দিল্লি বেড়াতে এলে হুমায়ুনের সমাধি দেখতে এখন আর কেউই ভুল করেন না। তার পাশেই হজরত নিজামুদ্দিন অউলিয়ার দরগাতেও প্রতি সন্ধ্যায় ভিড় জমে। কিন্তু ওই দরগা চত্বরেই অনাদরে পড়ে থাকে সম্রাট শাহজাহানের প্রিয়তম কন্যা জাহানারা বেগমের সমাধি। সিঁড়িতে আবর্জনা জমে। সাদা মার্বেলে পানের দাগ ধুয়ে দেওয়ার লোক মেলে না।
জাহানারা বেগমের অবশ্য ধনসম্পদের অভাব ছিল না। আরবি, ফার্সিতে শিক্ষা নিয়েছিলেন। সাহিত্য, শিল্পকলাতেও টেক্কা দিতেন অনেককে। দিল্লিতে চাঁদনি চকের নাম সকলেরই জানা। খুব কম মানুষই জানেন এই চাঁদনি চকের পরিকল্পনা করেছিলেন জাহানারা। কিন্তু ধনসম্পদ ছেড়ে সুফি ভাবধারায় মন দেন। গরিবদের কল্যাণের কথা ভাবতে শুরু করেন। সুফি সাধক নিজামুদ্দিন অউলিয়ার গরিবদের জন্য কাজকর্ম মনে ধরে যায়। কথিত আছে, নিজামুদ্দিনের সমাধি নিজের চুল দিয়ে পরিষ্কার করতেন সম্রাট-তনয়া। ইচ্ছা ছিল, তাঁকেও যেন ওই চত্বরেই কবর দেওয়া হয়।
সেই ইচ্ছে পূরণ হয়েছিল। নিজামুদ্দিনের দরগায় গেলে জাহানারার সমাধি খুঁজে পাওয়া কঠিন। ওই চত্বরেই যেমন কবি আমির খুসরোর সমাধি কষ্ট করে খুঁজে বের করতে হয়, জাহানারার সমাধিরও তেমনই দশা। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ একে সুরক্ষিত স্থাপত্যর তকমা দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু খুব কম সংখ্যক স্থানীয় বাসিন্দা বা দেশি পর্যটকেরই আগ্রহ রয়েছে জাহানারার সমাধি নিয়ে। তুলনায় বিদেশি পর্যটকরা জাহানারার সমাধি খুঁজে বের করে দেখে যান। তাঁর জীবন নিয়ে আগ্রহ দেখান। কিন্তু সমাধি চত্বরে জাহানারার সম্পর্কে কোনও তথ্য না মেলায় হতাশ হতে হয়।
ইতিহাস বলছে, জাহানারার যখন ১৭ বছর বয়স, তখন তাঁর মা মুমতাজ মহল ওরফে আরজুমান বানু বেগমের মৃত্যু হয়। বেগমের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েন সম্রাট শাহজাহান। বাবাকে সামলানো, ছয় ভাইবোনকে মানুষ করা, দরবারের কাজে বাবাকে সাহায্য করা, সবটাই নিজের কাঁধে তুলে নেন জাহানারা। ৬৭ বছর বয়সে মৃত্যু হয় জাহানারার। সম্রাট ঔরঙ্গজেব তাঁকে ‘সাহিবাত-উল-জমানি’ হিসেবে অভিহিত করেন।
আর এখন? সমাধিতে ফুলের নকশা রয়েছে, কিন্তু মুঘল জমানার সেই আড়ম্বর নেই। শোনা যায়, বছর কুড়ি আগেও সমাধিতে একটি পান্না খচিত ছিল। এখন সেটিও উধাও। সমাধি প্রস্তরের উপরে কিছুটা ফাঁকা জায়গা রাখা হয়েছিল। সেখানে মাটি ভরে দেওয়া হবে। ঘাস জন্মাবে। জাহানারা ফার্সিতে লিখেছিলেন, ‘‘আমার সমাধিতে ঘাসই জন্ম নিক। ফকিরের সমাধিতে ঘাসই যথেষ্ট।’’ শাহজাহান কন্যার সেই ইচ্ছে এখনও পূরণ হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy