Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

‘ক্যাশলেসে’ উদ্যোগী ঝাড়খণ্ডে নেই কাজই

‘ক্যাশলেস’ রাজ্য হওয়ার দিকে এগিয়ে যাওয়া ঝাড়খণ্ডে শ্রমিকরা এখন ‘জবলেস’। রাঁচীর লালপুর মোড়ে সকাল ছ’টা-সাতটা থেকে যে লম্বা লাইনটা পড়ে সেই লাইন এটিমের কাউন্টারের লাইনের থেকে অনেক অনেক বেশি লম্বা।

অন্য লাইন। টাকা খোঁজার নয়, রাঁচীর লালপুর মোড়ে কাজ খোঁজার লাইন। শনিবার। — নিজস্ব চিত্র

অন্য লাইন। টাকা খোঁজার নয়, রাঁচীর লালপুর মোড়ে কাজ খোঁজার লাইন। শনিবার। — নিজস্ব চিত্র

আর্যভট্ট খান
রাঁচী শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৩২
Share: Save:

‘ক্যাশলেস’ রাজ্য হওয়ার দিকে এগিয়ে যাওয়া ঝাড়খণ্ডে শ্রমিকরা এখন ‘জবলেস’।

রাঁচীর লালপুর মোড়ে সকাল ছ’টা-সাতটা থেকে যে লম্বা লাইনটা পড়ে সেই লাইন এটিমের কাউন্টারের লাইনের থেকে অনেক অনেক বেশি লম্বা। ওরা অপেক্ষা করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। চার পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষার পরে ওরা হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যায়। কারণ ঠিকা কাজের জন্য ওই ঠিকা শ্রমিকদের ভাড়া করে নিয়ে যাবে, নেই এমন ঠিকাদার।

অথচ ছবিটা একদম অন্য রকম ছিল এই মাস খানেক আগেও। রাঁচী শহর ছাড়াতেই লালপুর মোড়। গ্রামগঞ্জ থেকে নারী পুরুষ নির্বিশেষে ওরা কেউ কোদাল-ঝুড়ি নিয়ে, কেউ নিজের কর্নিক নিয়ে চলে আসত লালপুর মোড়ে। সকাল সাতটায় ওরা লাইন দিয়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে যেত। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই সেই লাইন ভ্যানিশ হয়ে যেত। প্রায় সবাই পেয়ে যেত কাজ। মোটর সাইকেলে করে আসা ঠিকাদাররা এসে তাদের দৈনিক রোজের ভিত্তিতে নিয়ে চলে যেত। কারও রোজ ৩০০ টাকা, কারও ২০০, কারও বা ২৫০। লালপুর মোড়ে ঠিকা শ্রমিকের কাজের জন্য দাঁড়ালেই কাজ পাওয়া যায়, জেনে গিয়েছিলেন এই গরিব মানুষগুলি। তাই শুধু রাঁচি নয়, গুমলা, খুঁটি, রামগড়ের মতো জেলার প্রত্যন্ত গ্রামগুলি থেকেও শ্রমিকরা গত কয়েক বছর ধরে ভিড় করতে শুরু করেছিল লালপুর মোড়ে।

ছবিটা পাল্টে গিয়েছে নোট বাতিল হওয়ার পর থেকেই। ওরা এখন শুধু সকাল থেকে দাঁড়িয়েই থাকে। বেলা বাড়তে থাকে। শ্রমিকরা জানাচ্ছেন, মোটর সাইকেলে চড়ে কোনও ঠিকাদারই ইদানীং আর আসছেন না। যাঁদের দেখা মিলছে রাস্তাঘাটে, তাঁরাও জানাচ্ছেন টাকা নেই। কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।

তবু প্রতি সকালেই ওরা মনের কোণে একটা ক্ষীণ আশা নিয়ে লালপুর মোড়ে লাইন দেয়। লাইনে দাঁড়ানো এমনই এক মহিলা শ্রমিক বীণা মাহাতোর কথায়, ‘‘গত এক মাসে আমি মাত্র তিন দিন কাজ পেয়েছি। কাজ শেষে ঠিকাদার বলেছে, এক মাস পরে টাকা পাবে।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমরা ঠিকা শ্রমিক। রোজের টাকা রোজ না পেলে সংসার চলবে কী করে!’’ আর এক শ্রমিক বিনোদ পাণ্ডে। তিনি বলেন, ‘‘এক দিন আমাদের কাজ করিয়ে দু’জনকে এক সঙ্গে মজুরি হিসেবে ঠিকাদার একটা পুরনো ৫০০ টাকার নোট দিল। বলল ব্যাঙ্কে পাল্টে নাও। আমাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টই নেই!’’

রাজ্যকে ক্যাশলেস করতে উদ্যোগী হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসাও কুড়িয়েছেন তিনি। কিন্তু লালপুর মোড়ে লাইনে দাঁড়ানো এই শ্রমিকরা ক্যাশলেস বলতে কী বোঝেন? দয়াময়ী মুণ্ডার বক্তব্য, ‘‘এ সব আমরা জানি না।’’ দয়াময়ী না জানলেও ক্যাশলেস লেনদেন কী তা কিছুটা জানেন তাঁর স্বামী অনিল মুণ্ডা। রাঁচী থেকে ২৫ কিলোমিটার দূর বেরো থেকে স্বামী-স্ত্রী এক সঙ্গে লালপুর মোড়ে লাইন দেন কাজের আশায়। অনিল বলেন, ‘‘যে ফোনে এসব হয় সেই ফোনই তো আমাদের নেই। ব্যাঙ্কের কার্ডও নেই। আমরা ক্যাশলেস জেনে কী করব?’’ দয়াময়ীর তখন চিন্তা, ‘‘তিনটে বাচ্চাকে বাড়িতে রেখে এসেছি। এমন চললে ওদের মুখে ফ্যানভাতটাও হয়তো আর দিতে পারব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jharkhand Demonetisation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE